চির যৌবনা (১১২)
চির যৌবনা (১১২)
স্থুল জগৎ থেকে ক্রমেই সুক্ষতর অংশে, তার থেকে বীজে , আবার বীজ থেকে আরো গভীরে, যেখানে ব্রহ্ম বা আত্মা বিরাজ করছে। ওঁ-কারই এই সবের সাক্ষী, যারা বীজ, সুক্ষ এবং স্থুলরূপে প্রতীয়মান।
গত সংখ্যার পর ০ ০ ০ ০ ০
কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার উদ্ধৃতি বিশেষ ভাবে "অক্ষর " এই শব্দের সাথে ভীষণ প্রাসঙ্গিক -
" আমি অজর অমর অক্ষয় আমি অব্যয়। জগদীশ্বর ঈশ্বর আমি পুরুষোত্তম সত্য , আমি তাথিয়া তাথিয়া মাথিয়া ফিরি স্বর্গ -পাতাল মর্ত্য।"
আমি শাশ্বত, আমার কোন মৃত্যু নেই, আমি কখনই শেষ হয়ে যাই না, তাই আমার কোন পরিবর্তনও হয় না , স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল আমার ইশারায় নৃত্য করে , আমিই সেই পুরুষোত্তম সত্য ।
অক্ষরকে কি ভাবে জগৎ হিসাবে ভাবছে -
যার কোন ক্ষয় হয়না , যা কোন দিন ফুরিয়ে যায় না , যা সর্বদাই বিদ্যমান থাকে বা এদিক থেকে ওদিকে চলে যায় না, তাকেই অক্ষর বলে। আবার অক্ষরকে স্বর বলা যায়, আবার স্বরকে শব্দ বলা হয়।
উপনিষদে , যে অবস্থায় ওঁ-কার তুরীয় বা সাক্ষী অবস্থায় থাকে, সেই অবস্থাকে বলা হয় পরব্রহ্ম। আবার ওঁ -কারের বীজ, সুক্ষ ও স্থুল অবস্থাকে অপরব্রহ্ম বলে।
অক্ষরের সাথে এই পরিদৃশ্যমান জগতের সম্পর্ক কি ?
উপনিষদে অক্ষর বা বর্ণকে চার ভাগে ভাগ করেছে। ১) পরা ২) পশ্যন্তি ৩) মধ্যমা ৪) বৈখারী।
পরা - এটি এমন একটা অক্ষর যা সব থেকে সুক্ষ। পরা অবস্থায় শব্দ অব্যক্ত থাকে। এর জন্ম বা উৎসারিত হয় প্রকৃতিতে তাই এর নাম পরা। ওঁম রূপ পরা অক্ষরটি প্রকৃতিতে উৎপন্ন হয়েছে। সৃষ্টির সময় এই শব্দ প্রকৃতির মধ্যে প্রথম কাজ করে।
পশ্যন্তি- বাক মনের মাঝখান থেকে উৎপন্ন হয়। ( বাক একটি সংস্কৃত শব্দ, যার অর্থ "কথা বলা" । বৈদিক সাহিত্যে তাকে দেবী সরস্বতী হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে ) জীবের আত্মা এই শব্দ বুঝতে পারে। এই বাণী স্বপ্নরোহিত জীবের নিদ্রাবস্থাকে (সুষুপ্তি ) প্রতিনিধিত্ব করে।
মধ্যমা - যেই বাণী বা শব্দকে ইন্দ্রিয়ের দ্বারা (কানের মাধ্যমে ) গ্রহণ করে মনের দ্বারা জানতে পারে। সেই শব্দকে পরিমাপ করে ,মূল্যায়ন করে, প্রশ্ন করে ; যুক্তিবাদী ও আবেগপূর্ণ মনকে ( বুদ্ধি ) কাজে লাগিয়ে অভিপ্রায়গুলি গঠন করে তাকে শব্দে পরিণত করে।
বৈখারী- প্রাণ অর্থাৎ শ্বাস যুক্ত হয়ে উচ্চারিত শব্দই বৈখারী বা নাদ। প্রাণবায়ু, কন্ঠ , তালু , জিহবা ইত্যাদির মাধ্যমে উৎপন্ন হয়ে এই শব্দ ছড়িয়ে পরে তাই সে বৈখারী। এই বাণী তুরীয় (সাক্ষী ) অবস্থার বর্ণনা করে।
ক্ৰমশঃ
ব্লগার -রবীন মজুমদার
মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ৪৮ তম অধ্যায় (১১২)
Searching for hidden Truth (16)
মন্তব্যসমূহ