গোলকধাঁধা (১১৩)
গোলকধাঁধা (১১৩)
গত সংখ্যার পর ০ ০ ০ ০ ০
অক্ষর যখন শব্দ আর তার প্রকাশ যখন ভাষায়, তখন অক্ষর আর শব্দের মেল বন্ধনে অতিক্রান্ত হয় আপাতপ্রতীয়মান বাধা।
ওঁ নামক অক্ষরকে কেন ব্রহ্ম বলা হয়।
অক্ষর সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা বা জ্ঞান হলে বুঝতে পারা যায়। পরম ব্রহ্মকে যদি অগাধ জলরাশির সাথে কল্পনা করা হয় তার অতি ক্ষুদ্রতম শক্তি তরঙ্গ হচ্ছে ওঁ-কার। জলের যেমন তরঙ্গ আছে , বায়ুর তেমনি তরঙ্গ আছে কিন্তু ব্রহ্মের এই অসীম সাগরে মায়াতরঙ্গ অব্যক্তের পূর্বাবস্থা।
( সাধারণভাবে অব্যক্ত শব্দটির অর্থ হলো যার বাইরে কোন প্রকাশ হয়না। গীতায় অব্যক্তকে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে -" অব্যক্তাৎ ব্যক্তয়ঃ সর্বাঃ "- এই দৃশ্যমান জগৎ অব্যক্ত অবস্থা থেকে ব্যক্ত অর্থাৎ প্রকাশিত হয়েছে। সুষুপ্তি অবস্থা অর্থাৎ যখন মানুষ জাগ্রত, স্বপ্নাবস্থাকে অতিক্রম করে গভীর ঘুমে অচেতন, যে সময়ে পার্থিব জগতের সম্পর্কে কোন বোধ থাকে না, নিদ্রা ভাঙলে সে আবার প্রত্যক্ষ করে এই জগৎকে। তাহলে মনের প্রকাশ বা ব্যক্ততাই জগৎ আর অব্যক্ত অবস্থায় গেলে সেই বোধটি শূন্য। মনের এই অব্যক্তভাবকেই ব্রহ্ম নামে অভিহিত করছে )
পতঞ্জলির ভাষ্য অনুযায়ী বাক্ হচ্ছে বর্ণজ্ঞান শাস্ত্রের বিষয়। এই বর্ণজ্ঞানে ব্রহ্ম আছেন। তাই বলা হয় ওঁ-কার অক্ষরজ্ঞানে ব্রহ্মকে জানা যায়।
স্পন্দন (Vibration ) আবার ব্রহ্মের সাথে এক ; শক্তি এবং শক্তিমান আলাদা নয় ( কাল ভেদে প্রকাশ মাত্র ) বলে জলের তরঙ্গ আর জল এক। ঠিক সেই রকম ধীর স্থির শান্ত ব্রহ্মসাগরে যে বিকল্পময়ী (Alternative / vibration / যে নাম রূপে মায়া ) স্পন্দনশক্তির তরঙ্গ উঠে. তা ব্রহ্ম ব্যতীত আর কিছুই নয়।
রজ্জুকে সর্প বলে ভাবনাটা মায়া বা অজ্ঞনতার জন্য হয়ে থাকে, সেটাই রজ্জুর বিবর্তন। এই রজ্জু যেমন সর্প হিসাবে বিবর্তিত হয় ঠিক তেমনি ব্রহ্মই নিজের মায়াজাল বিস্তার করে জগৎরূপে বিবর্তিত হন। ব্রহ্মকেই ভ্রমজ্ঞানে জগৎ বলে মনে হয়।
সমস্ত বস্তুর ভিতরে ব্রহ্ম বা চৈতন্য বাস করে। যেমন, রজ্জুকে সাপ ভাবা একটা কল্পনা মাত্র ঠিক তেমনি জগৎ ও কল্পিত। একই বস্তুর ভিন্ন রূপ কল্পনা আর বাস্তব।
ব্লগার -রবীন মজুমদার
মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ৪৯ তম অধ্যায় (১১৩)
Searching for hidden Truth (17)
মন্তব্যসমূহ