কোথায় পাব তারে (১১৪)

 

কোথায় পাব তারে  (১১৪)

সমস্ত বস্তুর ভিতরে ব্রহ্ম বা চৈতন্য বাস করে।  যেমন, রজ্জুকে সাপ ভাবা একটা কল্পনা মাত্র ঠিক তেমনি জগৎ ও কল্পিত।  একই বস্তুর ভিন্ন রূপ কল্পনা আর বাস্তব। 

গত সংখ্যার পর ০ ০ ০ ০ ০



 
উপনিষদ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পরমাত্মায় পৌঁছানোর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।  উপনিষদ বলছেন মোট চারটে ধাপকে অতিক্রম করে পরমাত্মার কাছে পৌঁছানো যায়।  সর্বশেষ অর্থাৎ চতুর্থ ধাপটিতে  তুরীয় বা পরমাত্মা বাস করেন।  তাকে আরেকটু সহজ ভাবে বোঝানোর জন্য বলছেন, জ্ঞানকে যদি অগ্নিরূপে কল্পনা করা হয়, তাহলে, সেই জ্ঞানরূপী অগ্নি প্রথম ধাপের জাগ্রত অবস্থাকে, দ্বিতীয় ধাপের  স্বপ্নাবস্থাকে দগ্ধ করে তৃতীয় ধাপ অর্থাৎ সুষুপ্তি অবস্থায়  পৌঁছায়। এই অবস্থাটি  বীজভাব বা বীজ থেকে  অঙ্কুরিত চারা গাছের মতো। জ্ঞানরূপী অগ্নি যদি সেই চারাকে যদি পুড়িয়ে দেয় , তাহলে, সে আর কখন বড় গাছ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে না। জ্ঞানরূপ অগ্নি প্রত্যেকটি ধাপের অজ্ঞান অবস্থাকে দগ্ধ করে ফেলেছে।  তাই সংসাররূপ বৃক্ষ আর কখন জন্মাবে না।  চতুর্থ ধাপে তুরীয় অর্থাৎ স্থুল ও সুক্ষ মনের অতীত আত্মজ্ঞানে নিজেকে  প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। এখানে এসে বীজের সর্ব প্রকার সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটেছে।  

উপনিষদের তত্ত্ব এবং বিবর্তনের ইতিহাসের আলোকে যদি খুব সাধারণভাবে বাস্তবের পটভূমিকায় পরমাত্মাকে প্রাপ্তি বা অজ্ঞানতাকে দূর করে জ্ঞানের প্রতিষ্ঠা করা। এটা একটু বিশ্লেষণ করলে কি দেখা যায় - 

১) দ্বন্দ - এখানে একপক্ষ  জ্ঞান আর অপরপক্ষ অজ্ঞান।
২) ধাপ বা স্তর - চারটি ধাপের বর্ননা আছে। 
২.১) জাগ্রত - স্থুলবস্থার অজ্ঞানতা। 
২.২) স্বপ্ন - সূক্ষাবস্থার অজ্ঞানতা। 
২.৩) সুষুপ্তি - যেই অবস্থায় পার্থিব জগতের কোন ভাবনা থাকেনা। 
২.৪) তুরীয় - এটি আত্মা এবং তিনটি অবস্থার সাক্ষীস্বরূপ ও এখানে অজ্ঞানের মৃত্যু ঘটে।

দ্বন্দ - অজ্ঞানের মৃত্যুতে জ্ঞানের জন্ম। যেই জ্ঞানের প্রকাশ হয় তখন তার পর আর কিছুই থাকেনা। বেদ, বেদান্ত আর উপনিষদের কোন প্রয়োজন পরে না। 

মানুষের মনের অন্দরে জ্ঞান আর অজ্ঞানের প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ চলে। যখন জ্ঞানের ভেরিয়েন্টের সংখ্যা বেড়ে যায় তখন অজ্ঞান দূরে সরে যায়, যেমন বিবর্তনের ইতিহাসে  জিন জগতের  পরিবর্তন হয়ে থাকে। পুরাতনের জায়গায় নতুন জিন এসে জায়গা দখল করে জিনের চরিত্রের পরিবর্তন ঘটায় ( অসৎ মানুষের সমাজের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য)। 

মানব জীবনের শৈশব থেকে আমৃত্যু এই দ্বন্দ চলে আসছে, একে নলেজ প্রসেস বলা যেতে পারে। এখানে মানুষের সাথে পরিবেশ বা সমাজ একাকার হয়ে গেছে। 

জাগ্রত অবস্থায় যত প্রতিক্রিয়া মানুষ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে গ্রহণ করে তার জন্য প্রকৃতি ও সমাজের একটা দায়িত্ব থাকে অন্তত সাংসারিক মানুষের ক্ষেত্রে। 

বর্তমান সমাজের আলোকে মানুষের সমস্যা ও বাস্তবতা এবং পরমাত্মার সাথে দূরত্বের কারণ (সংক্ষেপে) - 

সারা বিশ্ব জুড়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যে অনৈতিকতাকে মান্যতা দেওয়া হচ্ছে, তার প্রতিফলন মানুষের মনের অন্দরে প্রবেশ করে তার বেঁচে থাকার প্রশ্নকে অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে অনিশ্চয়ইতার মধ্যে নিয়ে এসেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে প্রাণ রাখবে না মান রাখবে। মানুষ আজ বিভ্রান্ত, সে রাজনৈতিক আন্দোলন করবে না আধ্যাত্মিক মানের উন্নয়ন করবে। মন যেখানে অশান্ত সেখানে সুষুপ্তিবস্থায় তার ইতি হয়, তার থেকে বেশী উত্তরণ হয়না,এটাই বাস্তব। ক্রমবর্ধমান উত্তরোত্তর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংকীন স্বার্থ সিদ্ধির জন্য মরিয়া শাসক এই অবস্থাকে জিইয়ে রাখবে। শরীরে আগুন লেগে গেল মানুষ যেমন চঞ্চল হয়ে সেই আগুন নিভাবার জন্য ছটপট  করে আশেপাশে সেই আগুনকে  ছড়িয়ে দেয়, ঠিক তেমনি লোভ আর কামরূপী আগুনে তারা নিজেরা অহর্নিশি দগ্ধ হচ্ছে  তার আঁচে সাধারণ মানুষ অস্থির হয়ে পড়াবে বই কি ? সাময়িক বিড়ম্বনায় হয়ত পড়বে, কিন্তু ইতিহাস তাদেরকে  ক্ষমা করবে না, সেইটাই ইতিহাসের ধৰ্ম। একটা সাধারণ জিনিস মাথায় রাখলে চলবে যে ভালো থাকে সে কিন্তু সর্বদাই পাশের মানুষকে ভালো রাখে। যে থাকেনা সে তো আর কাউকে ভালো রাখতে পারেনা, কেননা সে নিজেই ভালো নেই। অজ্ঞান অজ্ঞানকেই খোঁজে কারন অজ্ঞানের সাথে জ্ঞানের চিরকালের দ্বন্দ। (অশিক্ষিত শব্দটা ভীষণ জ্ঞাতসারে ব্যবহৃত হল না ) 

  
ওঁ-কার আকাশের মতো সর্বব্যাপী। তুরীয় অবস্থা, যে দেহাতীত ও অনন্ত, সেই রকম ওঁ-কার ও অনন্ত। সমস্ত দ্বৈতভাবে ওঁ-কারে এসে বিলীন হয়ে যায়। যে হেতু দ্বৈতভাবের বিভ্রান্তি থেকে না, তাই সে শিব অর্থাৎ মঙ্গলময়। 

  
ক্ৰমশঃ 

ব্লগার -রবীন মজুমদার   

মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ৫০ তম  অধ্যায় (১১৪)

Searching for hidden Truth (18) 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২১০ ) ঝড়-বৃষ্টির একাল সেকাল