সৃষ্টির মুলে দ্বন্দ (১১৬)
সৃষ্টির মুলে দ্বন্দ (১১৬)
মানুষ এই পৃথিবীতে প্রত্যক্ষ করতে পেরেছেন তার এবং তারও বাইরে অস্তিত্ব আছে, সেটা কিন্তু মানুষের দেখার বা জানার বাইরে, তারাও কিন্তু এই চৈতন্য বা পুরুষের অংশমাত্র। চৈতন্য হলো এক অখন্ডতার ধারণা , তাকে আলাদা করে ভাবা ভুল।
গত সংখ্যার পর ০ ০ ০ ০ ০
অংশ কখনই সমগ্রের সমান হতে পারেনা, এইটা ভীষণ সহজ কথা। দৃশ্যমান জগৎই মানুষের পৃথিবী।
কেন মানুষ এই চৈতন্যকে প্রতক্ষ্য করতে পারেনা ?
দেখা আর না দেখার মাঝখানে পর্দা যদি না থাকতো তাহলে অস্বচ্ছতা থাকতোনা।সেই কারণে ধরে নেওয়া যেতে পারে দৃষ্টির উপর নিশ্চয়ই কোন আবরণ পরে আছে। সেই আবরণটি কোথায় থাকে? ইতিপূর্বে আমরা জেনে গেছি , ইন্দ্রিয়ের পিছনে মন না থাকলে কোন কিছুকে দেখা বা জানা যায়না। প্রত্যক্ষ করা সব বস্তুকে বিশ্লেষণ করার দায়িত্ব বুদ্ধির আর যখন এই বুদ্ধির উপর অহংকার নামক পর্দা পরে যায়, তখন সে গিয়ে মানুষের বুদ্ধি বা চিন্তা শক্তিকে আছন্ন করে রাখে বা ভুল পথে চালিত করে।
মায়ার ছলনায় মানুষ জাগ্রত , স্বপ্ন ও সুষুপ্তি এই তিন অবস্থার অসাড়ত্বে বাস করে। অজ্ঞান যাকে আবরণ করে এই জগৎসংসারে ভেসে থাকে, সেইই তুরীয় ব্রহ্ম -তিনিই আনন্দময়। ঢেউ যেমন স্থির জল ছাড়া কিছুই নয়, সেই রকম, এই যে জগৎও মায়ার মুখোশ পরে চৈতন্যপুরুষরূপে দাঁড়িয়ে আছেন। মায়ার মুখোশটা ভ্রম, অজ্ঞানতা।
লক্ষ্য যেখানে চৈতন্য বা পরমব্রহ্মকে জানা, অন্তরায় সেখানে মায়া। জগৎ যদি মায়ার হয় তাহলে তো চৈতন্য বা আত্মা বা ব্রহ্ম সবই মিথ্যা। সেখানে উপনিষদ বলছে , সৃষ্টির প্রথমবস্থায় জগতের উপর মায়া ভীষণ ক্ষুদ্রাকারে ভাসতে থাকে।ধীরে ধীরে মায়ার ভিতর পুঞ্জিভূত হতে থাকে কামনা ও বাসনা। উপযুক্ত পরিবেশের সান্নিধ্যে এসে সে কলেবরে বৃদ্ধি পেয়ে এক কৃত্তিম জগৎকে মানুষের সামনে হাজির করে এবং সেই জগৎকেই মানুষ প্রত্যক্ষ করে।
কি অসম্ভব মানবজীবনের জীবনের জটিলতা। প্রকৃতিতে যেমন পরিবেশকে বাঁচানোর জন্য "ভারসাম্য" শব্দটি ব্যবহার করা হয়, ঠিক তেমনি সমাজে সৎ মানুষের সাথে অসৎ মানুষ না থাকলে বলা হয় যে, তাতেও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। জ্ঞানীর পাশাপাশি অজ্ঞানীও থাকবে, ধনীর পাশাপাশি দরিদ্রও থাকবে, সুন্দরের পাশাপাশি অসুন্দরকেও থাকতে হবে। এটাই প্রাকৃতিক অলঙ্ঘনীয় নিয়ম। সুতরাং, মায়ার আবরণ ভেদ করেই চৈতন্যকে খুঁজে নিতে হবে। সৃষ্টির মূলেই আছে দ্বন্দ এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
ক্ৰমশঃ
ব্লগার -রবীন মজুমদার
মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ৫২ তম অধ্যায় (১১৬)
Searching for hidden Truth (20)
মন্তব্যসমূহ