সহাবস্থান (১১৯)

সহাবস্থান (১১৯)

যে আদর্শকে সামনে রেখে ঋষিরা এই সত্য আবিষ্কারের জন্য নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন তাকে বাস্তবায়িত না করে অর্থাৎ তত্ত্বের সঠিক প্রয়োগ না করে ক্ষান্ত হবেন না ---

গত সংখ্যার পর ০ ০ ০ ০ ০




ধর্মীয় দর্শনের সত্যগুলি সাধারণমানুষের নাগালের বাইরে ছিল, কারণ ভাব সাগরের যে  উচ্চতায় সত্যবস্তুগুলি ভেসে বেড়াচ্ছিল তার তুলনায় সাধারণ মানুষের  কামনা আর বাসনাগুলি স্থানের দূরত্ব ছিল ধরা ছোয়ার বাইরে।  

পার্থিব জগতের সৃষ্টিকর্তারাও নাছোড়বান্দা; তারও আধ্যাত্মিক সত্যগুলিকে বেদ আর উপনিষদের আলমারিতে রেখে  হিন্দু ধর্মের পৌরাণিক কাহিনীগুলি নিয়ে এলো বহুল প্রচারিত রামায়ন, মহাভারত আর পুরান থেকে। সেগুলি সাধারনের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা আজ ও বর্তমান।  

সৃষ্টির কাজকে অব্যাহত রাখতে মানব জীবনের চারটি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কর্ম পদ্ধতি নির্ধারিত করে দিল, তারা যথাক্রমে, ধর্ম, অর্থ ,কাম এবং মোক্ষ। কামনা-বাসনার কেমিস্ট্রি অনুযায়ী অর্থ যেখানে  সম্পদ গঠনের কাজে ব্যস্ত থাকে, সেখানে কাম ভীষণ ব্যস্ত থাকে সুখভোগের ফিরিস্তি তৈরী করতে। একটা পর্য্যায়ে অর্থ আর কামকে নিয়ে আশা-নিরাশায় চলতে চলতে মানুষের জীবনের চঞ্চলতা আর চঞ্চল হবার কারন খুঁজে পায়না, কিন্তু ইতিমধ্যে বাইরের জগৎ থেকে একটানা ধুলাবালি মনের উপরে পরে তার পুরু আস্তরণটা বুদ্ধির কাজকে প্রতিমুহূর্তে বাধা দিয়ে আসছিল। যেই জীবনের চঞ্চলতা কমে গেল, মন তখন ধীরে ধীরে অন্তর্মুখী হয়ে নিজেকে খোঁজার চেষ্টায় ব্যাকুল হয়ে উঠলো। সেখানে  প্রবেশ করতে গিয়ে দেখলো কামনা আর বাসনা মনটাকে ভীষণ ময়লা করে রেখেছে, সেই ময়লা পরিষ্কার না করলে ভিতরে যাওয়া যাচ্ছে না। শুরু হল মন পরিস্কারের কাজ, সকাল সন্ধ্যায়   ঘরে অথবা মন্দিরে গিয়ে পূজা-আর্চা,সাধুসঙ্গ, দান-ধ্যান  ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যাকুল মনের আকুলতা কমানোর অভ্যাস চললো, এটাই ধর্ম। 

এই নিয়মিত ধর্ম চারণ করতে করতে জন্ম নিলো আত্ম জিজ্ঞাসা আর সেই খোঁজে মানুষ মোক্ষ লাভের পথে তার যাত্রা শুরু করলো। 

শাস্ত্র বলে দিচ্ছে, বাপু, তোমার জীবনকে তুমি কোন পথে চালাবে সেটা তোমার ব্যাপার, যদি তোমার একান্ত ইচ্ছা হয় ভোগ করবে তাহলে তুমি এই যে পথটা একে বেঁকে গেছে সেই পথ দিয়ে গেলে পৌঁছে যাবে , তবে সঙ্গে অর্থকে নিতে ভুলোনা, কেননা অর্থ ছাড়া কাম আর সম্পদ প্রাপ্তি হবেনা। আবার বলছে, যদি তোমার মনে হয় তুমি ভোগ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে তবে আবার স্টার্টিং পয়েন্টে ফিরে এসে যে পথটা ধর্মের দিকে গেছে সেই পথ দিয়ে এগিয়ে যাবে। যদি ধর্ম করতে করতে তোমার চেতনাকে আরো সমৃদ্ধ করতে চাও, তাহলে ধর্মের পথের সাথে সমান্তরালভাবে মোক্ষের পথ গেছে, সেই পথটা ধরে নিও। 

জীবনের পথে কেন এই বৈচিত্রতা ? ... পরের সংখ্যায়। 

  
 
ক্ৰমশঃ  

ব্লগার -রবীন মজুমদার   

মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ৫৪ তম  অধ্যায় (১১৮)

Searching for hidden Truth (22) 


 



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়