ঐকতান (১২০)

 ঐকতান (১২০)

জীবনের পথে কেন এই বৈচিত্রতা ? ---

গত সংখ্যার পর ০ ০ ০ ০ ০

 


সৃষ্টির রহস্যের মধ্যেই বৈচিত্রতা লুকিয়ে আছে। যেখানে সৃষ্টির মূলেই আছে দ্বন্দ সেখানে বৈচিত্র শব্দটি সৃষ্টির সহজাত প্রবৃত্তি হতে বাধ্য । জীবন যদি  একটি প্রবাহ হয় , তাহলে সেই প্রবাহের কোন না কোন প্রক্রিয়া থাকতেই  হবে আর সেই প্রক্রিয়ার চরিত্রটাই হচ্ছে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। প্রকৃতির জগতে বৈচিত্র আছে বা থাকবে কিন্তু মানুষকে তাকে নিয়েই চলতে হবে আর এই বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যসাধনই  জীবনের খেলা। এই বৈচিত্রপূর্ণ বহু পথ এসে কিন্তু ঐক্যমতে মহাসাগরে মিলে সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে অব্যহত রেখেছে। 

বৈচিত্রকে নিয়ে লক্ষে পৌঁছনো অসম্ভব। বৈচিত্রের লয় হয় ঐকতানে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের "ঐকতান" কবিতার বিষয়বস্তুকে যদি সেই আঙ্গিকে ব্যাখ্যা করি তাহলে  -
এই কবিতাটি কবির একটা স্টেটমেন্ট হতে পারে,একটা বিশ্ব প্রকৃতির একটা ক্যানভাস হতে পারে, অস্তিত্ববাদ( নিজের মনকে নিয়ে চিন্তাভাবনা) হতে পারে ,একটি শ্রেণী চেতনার ইতিহাস হতে পারে, একটা গনসংগীত হতে পারে, ঐকতানের লক্ষ্যে আপামর প্রাণীর লং মার্চ হতে পারে, মানব জীবনের সীমাবদ্ধতার একটি দীর্ঘশ্বাস হতে পারে , নিজেকে খুঁজতে গিয়ে তাকে  না পাওয়ার   বেদনার কথাও হতে পারে।  

আবার কবিতার এক জায়গায় বলেছেন -

"সব চেয়ে দুর্গম-যে মানুষ আপন অন্তরালে, 
তার কোনো পরিমাপ নাই বাইরের দেশ কালে। 
সে অন্তরময়,
অন্তর মিশালে তবে তার অন্তরের পরিচয়।"

কবি যদি ঐক্যের আস্বাদ পেয়ে যেতেন  তাহলে তিনি প্রতি ছত্রে পরস্পর বিরোধী সুরগুলিকে বিরোধীতার উর্ধে গিয়ে একটা সুরে মিলিয়ে দেবার জন্য প্রার্থনা করতেন না। কবিকে এই দ্বন্দ পীড়িত করে তুলছিল, তিনি বুঝতে পারছেন কিন্তু পৌঁছাতে পারছিলেন না তার সেই  ইপ্সিত গন্তব্য স্থলে। এ এক কল্পনার সাথে বাস্তবের  সংঘর্ষের নিদারুন অভিজ্ঞতা অথচ তিনি জানেন যে  দ্বৈতভাবে শান্তি বিঘ্নিত হয়  আর অপরপাড়ের অদ্বৈতভাবে অপার শান্তি বিরাজমান। এই দুইয়ের সাথে একের মিলতে না পারার ব্যবধানে উৎপাদিত যে  বিরহের যন্ত্রনা, এ যেন অখণ্ডের সাথে খণ্ডিত বস্তুর ব্যর্থ মিলনের নিখিলবিশ্ব ব্যাপিয়া  আর্তনাদ।     

আবার,মনের মধ্যে দ্বৈতভাবে না থাকে, তাহলে তো কোন বিচার মানুষকে স্পর্শ করতে পারবে না। রাগ,দ্বেষ, ঘৃণা ,হিংসা ,ক্ষমা, প্রার্থনা ইত্যাদি মানুষের ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অনুভূত প্রক্রিয়াগুলি একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। মানুষ তার সারা  জীবন ধরে এই পরস্পর বিরোধী ভাবনাগুলিকে  তার মনের মধ্যে স্থান করে দিয়ে, যে জটের সৃষ্টি করে আর নিজের সৃষ্ট জটের সমাধান খুঁজতে খুঁজতে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয়। 

জীবনের বহু ক্ষেত্রের অপূর্ণতাকে কবি মেনে নিয়ে ছিলেন কিন্তু আশাহত হননি বরং একটা পরম্পরা তৈয়ারী করে গেলেন, যেই পথ দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের কবিরা তাঁর যাত্রার শেষ থেকে তাদের যাত্রার শুরু করবেন। জীবনের অন্তিমলগ্নে পৌঁছে তিনি আত্মপোলদ্ধি করেছেন এতদিন ধরে যা কিছু বাইরে খুজেছিলেন, সেটা তার মনের অন্তরালে বাস করছে আর সেখানে পৌঁছানোর রাস্তাটা ভীষণ দুর্গম।

 
ক্ৰমশঃ  

ব্লগার -রবীন মজুমদার   

মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ৫৫ তম  অধ্যায় (১১৯)

Searching for hidden Truth (23) 




 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়