মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ৪৫তম অধ্যায় || (১০৮) Searching for hidden Truth (13)
মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ৪৫তম অধ্যায় || (১০৮)
Searching for hidden Truth (13)
গত সংখ্যার পর........
আধ্যাত্মিক জগতে সব জীব একই সূত্রে যদি বাঁধা হবে তো, এত হানা হানি কিসের ?
এর উত্তর খুঁজতে পৌঁছাতে হবে মায়ার রাজত্বে, যে শক্তির পশ্চাতে আছে সেই পরমব্রহ্মের হাত। অবশ্য এই বিশ্বের যা কিছু শক্তি এবং সৃষ্টি ; সবই ওনার কাছ থেকে ধার করা শক্তিতে বলীয়ান ।
মায়া কি ?
পার্থিব জগতে 'মায়া ' এক শক্তিশালী শক্তি। এই শক্তি ক্রমেই শক্তিশালী হয় যখন বুদ্ধির উপর অহংকারের ছায়া পড়ে। আবার অহংকারের ছায়া তখনিই পড়ে, যখন সত্যের আসল রূপটা মিথ্যার মোটা পর্দায় ঢাকা থাকে। এই না জানাটাই মানুষের অজ্ঞান অবস্থা।এই আত্মজ্ঞান না থাকাটা মনের জগতে এক চরম দুর্বলতা , সুযোগসন্ধানী মায়া এই দুর্বলতার সুযোগে মানুষের মনের রাজ্যের কতৃত্ব নিজের যাতে তুলে নেয়।( যেমন কম্পিউটারের পাওয়ার সুইচ অন হওয়ার সাথে সাথে অপারেটিং সিস্টেম মেইন মেমোরিতে এসে বসে পরে, টোটাল ইনপুট আউটপুট, প্রসেসিং সিস্টেমকে কন্ট্রোল করে ঠিক তেমনি যখনি মানুষ জাগ্রত অবস্থায় উপস্থিত হয়, তখনি মানুষের অপারেটিং সিস্টেমকে কন্ট্রোল করে নেয় "মায়া" আর তার পর থেকে যা কিছু এক্সেস বা প্রতিক্রিয়া মানুষ দেয়, তার সব কিছুই মায়ার ছলনায় এবং এই ছলনা মানুষের সুষুপ্তি অবস্থায় গিয়ে শেষ হয় অর্থাৎ যখন গভীর ঘুমে মানুষ অচেতন থাকে ) সহজ সরল অজ্ঞান মানুষ কৃতকর্মের দোষে শুধুই তার ছলনার শিকার হয় না , সারা জীবন দুখঃকে সঙ্গে নিয়ে তার ইহকাল সমাপ্ত করে।
সত্য আর মিথ্যার মাঝখানে যে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেইই মায়া। অসত্য হচ্ছে মিথ্যা জ্ঞান। এই মিথ্যাজ্ঞানের প্রভাবে জাদুকরের ইন্দ্রজাল ভেদ করে মানুষ প্রকৃত সত্যকে জানতে পারেনা। তাহলে ব্যবধান হল প্রকৃতজ্ঞান আর অজ্ঞানের মধ্যেকার দূরত্বটা।
উত্তরণের উপায় -
মায়াজাল থেকে উদ্ধার পেয়ে নিত্য আনন্দের জগতে পা দিতে গেলে 'ব্রহ্ম' অর্থাৎ সৃষ্টি সম্পর্কিত জ্ঞানকে অর্জন করতে হবে অর্থাৎ আত্মজ্ঞান লাভ। আত্মা সম্পর্কিত জ্ঞানের সাথে জড়িয়ে আছে আত্মজ্ঞান। " আমি কে " এই কারন খোঁজার পিছনে সব প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে।
সাহিত্য সৃষ্টির উদ্দেশ্য যদি হয় মানব মনের বিকাশ, তাহলে বিকাশের জন্য উৎকৃষ্ট উপাদান দিয়ে সাহিত্য রচনা বাঞ্চনীয়। আবার অজ্ঞান দিয়ে অজ্ঞানতাকে দূর করা যায় না, তাই সেখানে দরকার জ্ঞানের এবং তার সাথে জ্ঞান থেকে উদ্ভূত দৃষ্টিভঙ্গির, যে প্রতি মুহূর্তে জাহাজের কম্পাসের মতো মিথ্যার সমুদ্রে সঠিক দিক নির্নয় করে মনের জাহাজকে সঠিক লক্ষ্য পথে টেনে নিয়ে যাবে।
এই দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে মহাভারতকে চেনার এবং জানার প্রস্তুতি পর্বই হচ্ছে মহাভারতের যাজ্ঞসেনী।
ব্লগার -রবীন মজুমদার
মন্তব্যসমূহ