উত্তর মীমাংসা (১২২)
উত্তর মীমাংসা (১২২)
মনের দ্বৈতভাবের অবসানে অদ্বৈতভাবনায় পার্থিব জগৎকে যখন পর্য্যবেক্ষন করবে তখন সবকিছুর মধ্যেই অভিন্ন রূপেকেই সে দর্শন করবে। বিভেদ যেখানে অনুপস্থিত, সেখানে দ্বন্দ কোথায় আর সেইখানেই অপার শান্তির নিবাস।
গত সংখ্যার পর ০ ০ ০ ০ ০
দ্বৈত ও অদ্বৈতবাদ বেদান্তের এই দুই দর্শনের মধ্যে বিবাদ জন্মলগ্ন থেকে সুতরাং তাদের নিয়ে আলোচনা করতে গেলে বিশেষ শৃঙ্খলা সহকারে এগিয়ে যেতে হবে।
বেদান্ত কি ?
ভূমিকা - কৈশোরে বাংলা ও ইংরাজী সাহিত্যের পাঠ্য পুস্তকের সাথে সাথে তার সহায়ক বই ( মানে বই বলে পরিচিত) কিনতে হতো কবি, সাহিত্যিকরা পাঠ্য পুস্তকে কি লিখেছেন তার অর্থ সরলীকরণ করার জন্য। সহায়ক বইতে সবশেষে সেই গদ্য বা পদ্যের একটি সারাংশ এবং কবি বা লেখক তার সেই রচনার পশ্চাতে কি বলতে চেয়েছেন তার একটা বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা থাকত। এই সরলীকরণের ট্রাডিশন সাহিত্য থেকে শুরু করে দর্শন,বিজ্ঞান,আইন প্রভৃতির ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের জন্য বজায় আছে। বেদ ও এই পরম্পরার ব্যতিক্রম নয়।
বেদ+অন্ত=বেদান্ত, অর্থাৎ বেদের যা কিছু নির্যাস তাকে আঁকড়ে ধরে বেদান্ত বেড়ে উঠেছে। উপনিষদের এক্তিয়ারটি একটু স্বতন্ত্র , উপদেশের সম্ভার আর তার যথার্থতা প্রমানের গুরুভার বেদান্তের স্কন্ধে অর্পণ করে নিশ্চিন্ত হয়ে আছে, সে কারনে বেদান্তকে উত্তর মীমাংসা নামে অভিহিত করা হয়। একটু সহজভাবে বলা যেতে পারে উপনিষদের অর্থকে সহজতর করে প্রকাশের দায়িত্ব বেদান্তের।
দর্শনের উদ্দেশ্য -
ভারতীয় দর্শনের কথা আলোচনা করতে গেলে দেখা যায় যে , প্রধান প্রধান দার্শনিক মতগুলির ভিত্তিভূমি হচ্ছে বেদের জ্ঞান ভান্ডারের আঁধারে রচিত। বৈদিক সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে ব্রহ্মের ব্যাখ্যায় দ্বৈত এবং অদ্বৈতবাদ এই দুয়ের মতাদর্শকে স্থান দিয়ে।
দ্বৈত ও অদ্বৈতবাদের বিরোধ কোথায় -
দ্বৈতবাদীরা বলেন, জীব ও ব্ৰহ্ম এই দুইয়ের অস্ত্বিত্ব আছে আর অদ্বৈতবাদীরা বলেন জীব ও ব্রহ্ম আলাদা কোন সত্ত্বা নয়, ব্রহ্মই একমাত্র সত্য। জীবকে ব্রহ্ম থেকে আলাদা করে ভাবাটাই ভ্রান্ত জ্ঞান বা অজ্ঞানতা।
দ্বৈত থেকে অদ্বৈত ভাবনার ক্রমবিৱৰ্তনটা কি ভাবে এসেছিল -
জ্ঞানের বিকাশের ক্ষেত্রে শুধু তত্ত্ব থাকাটাই শেষ কথা নয়, তার সাথে সেই তত্ত্বের সঠিক প্রয়োগটা না হলে জ্ঞান অসম্পূর্ন থেকে যায়। বাদবাকি প্রক্রিয়া হলো মানুষের উপলদ্ধি, সংযোগ এবং যুক্তি আর দর্শনের বিষয় বস্তু হলো জ্ঞানের তত্ত্ব। দ্বৈতবাদীরা বহু আগেই বলে দিয়েছেন জীব এবং ব্রহ্ম এক নয়, আলাদা। আরেকদল এলো তারা স্তরে স্তরে যুক্তি সাজিয়ে বললো, জীব আর ব্রহ্ম সংসারে আলাদা সত্ত্বা নিয়ে বাস করে, যখন ধীরে ধীরে জীবের জ্ঞান ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়, তখন সে নিজেই বুঝতে পারে জীব আর ব্রহ্ম আলাদা কিছু নয়, তারা একই। এই মতবাদটি সাময়িক দ্বৈতবাদীদের মত।
তাহলে উপরের সাময়িক দ্বৈতবাদীদের মতে, সংসারে আবদ্ধ জীবের মনোজগতে জ্ঞানের আলো পূর্ণ বিকশিত হয়না, বুদ্ধির উপর মায়া আর অহংকারের ছায়ায় আলোর গতিকে রোধ করে রাখে। যখন জীব ধীরে ধীরে সাংসারিক মোহ থেকে মুক্ত হতে শুরু করে, তখন তার মনের মধ্যেকার দ্বৈতভাবটাও ধীরে ধীরে সরতে শুরু করে এবং ত্যাগের প্রক্রিয়া যখন সমাপ্ত হয় তখন আলোর দরজাটা উন্মুক্ত হয়ে যায়।
ক্ৰমশঃ
ব্লগার -রবীন মজুমদার
মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ৫৬ তম অধ্যায় (১২১)
Searching for hidden Truth (25)
মন্তব্যসমূহ