মীমাংসা (১২৮)
মীমাংসা (১২৮)
যখন জীব ধীরে ধীরে সাংসারিক মোহ থেকে মুক্ত হতে শুরু করে, তখন তার মনের মধ্যেকার দ্বৈতভাবটাও ধীরে ধীরে সরতে শুরু করে এবং ত্যাগের প্রক্রিয়া যখন সমাপ্ত হয় তখন আলোর দরজাটা উন্মুক্ত হয়ে যায়।
গত সংখ্যার পর ০ ০ ০ ০ ০
এই মায়ার পৃথিবীতে, যখন আমরা নিজেদের স্বপ্ন দিয়ে তৈরী করা সৌধগুলি বাস্তবের সংস্পর্শে এসে একের পর এক ভাঙতে দেখি তখন সেই ধংসস্তূপের মধ্যে থেকে শুধু একটা প্রার্থনা ঘুরে ফিরে আসে, তা হল শান্তির জন্য আকুল আবেদন। সেই আবেদনে সারা দিয়ে বাইরের পৃথিবীতে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত পথিক যখন নিজেকে একান্তে আপন অন্তরে খুঁজতে শুরু করে, তখনিই সে জ্ঞানের আলোকে তার কাঙ্খিত বস্তুর সন্ধান পায়। সেই পথে হাটতে হাটতে অন্তরের যা কিছু অসত্য আর অজ্ঞান বৃক্ষের পাতাগুলি একে একে ঝরে যায় আর সেই স্থান দখল করে নেয় নতুন করে গজিয়ে উঠা জ্ঞানবৃক্ষের ফলগুলি। সারা দিনের শেষে শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসে, যাকে এতদিন সত্য বলে জানতাম সে সবই ছিল ভ্রম।
যা জীবনে জানা নেই, যা দেখা নেই সেই অজানা আর অদেখার প্রতি মানুষের দুর্নিবার আকর্ষণ থাকবেই, এটা আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি। সত্য বস্তুর প্রতি অনন্ত আকর্ষণ। সেই আকর্ষণই বিবর্তিত হয়ে পরিণত হয় অনুসন্ধানে। অনুসন্ধিৎসা যখন সত্যের অনুরাগী, তখন স্বভাবতই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে জীবনের এই দীর্ঘ রাস্তাটা শুধু মিথ্যার পিছনে মানুষ ঘুরে বেরিয়েছে। পদে পদে নিজের সামনে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘদিনের সংস্কার ,অভ্যাস আর মিথ্যাজ্ঞান। সত্যে বস্তুটা ভীষণ নির্মম। কেননা তার কোন দায় নেই মিথ্যার প্রতি অর্থাৎ মায়াজনিত আচ্ছাদনে সে আবৃত নয়, তাই সে নিরাভরণ । তাই সত্যকে গ্রহণ করতে পারাটাও আরো কঠিন। একবার তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন হয়ে গেলে জীবনে যা কিছু চাওয়া তার পাওয়া হয়ে গেলে যা আনন্দ হতে পারে বা তার থেকে অনেক বেশী আনন্দ মানুষ লাভ করতে পারে এবং সেটা সারা জীবনধরে।
আজকে মানুষ ক্রমান্বয়ে পিছন দিকে হাটছে, বিকাশ শব্দটার অর্থকে অপব্যাখ্যা করে সমগ্র মানব সংসারে পরিবেশিত হচ্ছে। জড়ের বিকাশকে সভ্যতার বিকাশ বলে চালাতে চাইছে। জড়ের বিকাশ খুবই সহজ যেটাকে অর্থের বিনিময়ে বিকশিত করা যায় কিন্তু জীবাত্মার বিকাশ ভীষণ কঠিন আর এই জীবাত্মার বিকাশের উপর মানব সভ্যতার অগ্রগতি নির্ভরশীল।
বিকাশের প্রতিবিম্ব যখন পরিবারে বা সমাজে প্রতিবিম্বিত হয় তখন বিকাশকে অনুভব করা যায়। জগতের বিকাশের একটা পর্যায়ে মানুষ আর কোন কিছুকে অন্ধভাবে অনুসরণ করতে চায় না।
ক্ৰমশঃ
ব্লগার -রবীন মজুমদার
মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ৫৭ তম অধ্যায় (১২২)
Searching for hidden Truth (25)
মন্তব্যসমূহ