সমাজের রাজন্যবর্গ (133)
সমাজের রাজন্যবর্গ (133)
পুরুষ শাসিত সমাজে নারীর মর্যাদার অবমাননা এবং ভোগের উপকরণ হিসাবে তাঁর প্রয়োজনীয়তা কাল ও ছিল আজও আছে।
মহাভারতের যুগের সমাজ ব্যবস্থায় প্রচলিত ছিল পুরুষের বহু বিবাহ, উপপত্নী রাখার প্রথা এবং পরস্ত্রীর প্রতি ভোগের আকাঙ্খা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে জোর করে অধিকার প্রতিষ্ঠা। এমনকি পরস্ত্রীকে পাবার জন্য কিছু মন্ত্র ও ছিল সে যুগে। যেমন রাজার অন্য রাজ্যের প্রতি কুনজর থাকে তাকে পাবার জন্য সংগ্রামে মেতে উঠে , ঠিক তেমনি অর্থবান ও ক্ষমতাবান রাজপুরুষ শতাব্দী প্রাচীন অভ্যাসে পরস্ত্রীকে অধিকার করতে অভ্যস্ত হবে, সেটা আবার নতুন কি ?
তাহলে যে কোন জমিকে ছলে বলে দখল করা যেতে পারে, সেখানে আক্ষরিক জমির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সীমারেখা বা দেশের সার্বভৌমিকত্ব শব্দগুলি যেমন শুধুমাত্র কাগুজে, ঠিক তেমনি সমাজের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ স্ত্রীকে দখলদারি নেওয়ার ক্ষেত্রে পরপুরুষেরও নিয়মের দরকার পড়েনা।
কেন সমাজ কতৃক এই অবৈধ সম্পর্কের মান্যতা-
চেতন এবং অবচেতন মনে জৈবিক সম্পর্ক গুলি শত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বাঁধন দিয়ে বাধা হোক না কেন, দুর্বল-সবল, দরিদ্র-ধনী অধিকাংশ পুরুষ-রমণী গোপনে বা প্রকাশ্যে এই বাধাহীন স্রোতের কমবেশি অংশীদার, উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে সেটা অপ্রকাশিত থাকে কিন্তু গোপনে গোপনে ধমনীতে সেই স্রোত বয়ে চলে। ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার কুফলে ( মানুষের পরিচয় ধনতান্ত্রিক সমাজে উৎপাদনের উপাদান ছাড়া আর কিছু নয় ) মূল্যবোধ ক্রমশঃ নিন্মগামী তাই লিঙ্গ বৈষম্য ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে ( কেননা স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েই এই সমাজের অংশীদার, আর্থিক চাপে উভয়েই জেরবার, তাই প্রশ্ন উঠছে মান রাখবো না হুঁশ রাখবো ) । পাশাপাশি অপসংকৃতির প্রসারে স্ত্রী-পুরুষকে একাকার করে দিচ্ছে। প্রাত্যহিক ঘটে যাওয়া অবৈধ সম্পর্কগুলির প্রতি তাই সমাজের আকর্ষণ কমে গেছে এবং তা ধীরে ধীরে সমাজের মূলধারার সাথে এই উপধারা গুলি মিলে গিয়ে এক নতুন ধারার সৃষ্টি কৱেছে। এর সাথে যোগ্য সঙ্গত করে যাচ্ছে একধরনের সংবাদ মাধ্যম। পৃথিবীতে ভালো'র সংখ্যা কম বলেই সে আলাদা ভাবে চিহিত হয়, তা নাহলে সে গড় অবস্থায় ভালো'রা পর্যবশিত হতো পাশাপাশি পূর্বে যে সব গর্হিত অপরাধ কালে ভদ্রে ঘটতো, তার প্রতি মানুষের আগ্রহ জন্মাত, কিন্তু যখন সেটা নিত্য দিনের ঘটনা হয় আর সমাজ ও রাষ্ট্রকর্তারা চোখ বুজে থাকে, তখন সে ধীরে ধীরে তার স্থান বিস্তার করে এক পরম্পরার বা ধারার সৃষ্টি করে।
ঠিক সেই রকম অবৈধ উপাৰ্জনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। দৈনিন্দন জীবনে আমরা নিজেদের অজান্তে উপঢৌকন নিয়ে থাকি বিভিন্ন আকারে। মানুষকে যে নিত্য দিন আলোক বর্তিকার মতো যে চেতনা পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে সে আজ শুধু মাত্র হুশ কিনতে ব্যয় করে ফেলে। যে কোন কার্য্যসিদ্ধির জন্য প্রণামী দিতে হয় তার একটা পরম্পরা আছে। যেমন, পুরোহিতকে দক্ষিনা না দিলে দেবতার সাথে সংযোগ হয় না তাই কার্য্য সিদ্ধির জন্য উৎকোচ দান আমাদের সংকৃতি, যেটা বাল্যকাল থেকে আমাদের অস্থিমজ্জায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর সেই চারা আজ মহীরুহ হয়ে সমাজে বিস্তারিত হয়েছে।
শান্তি পর্বে যখন শরশয্যায় ভীষ্ম শায়িত তখন যুধিষ্ঠির পিতামহের কাছে রাজনীতির পাঠ নিতে গিয়েছিলেন। সেখানেও পিতামহ মন্ত্রী-সান্ত্রীর যে উৎকোচ নেবার প্রবণতা ছিল সেই সম্পর্কে যুধিষ্ঠিরকে ওয়াকিবহাল করেছিলেন। সুতরাং, উৎকোচ একটি পরম্পরা, যদিও সেটা আইন ও নীতির চোখে অপরাধ, সে চর্চিত হলেও বর্জিত নয় , তাই সে সমাজের গা থেকে আজও বিসর্জিত হয়নি।
ব্লগার -রবীন মজুমদার
মন্তব্যসমূহ