(১৩৮) অহংকারের রসায়ন (৪র্থ পর্ব )
(১৩৮) অহংকারের রসায়ন (৪র্থ পর্ব )
১ম সংখ্যা - অহংকারের মুখোমুখি -সংসার কাকে বলে -বাহ্য এবং অন্ত প্রকৃতির সাথে ইন্দ্রিয় কি ভাবে সেতু বন্ধন করে ও তার প্রতিক্রিয়া - বিশ্ব জগৎ গঠনের পাঁচটি উপাদানের সাথে পরিচয় -সাংখ্য দর্শনের আলোকে অহংকার -সত্বঃ রজঃ ও তম -পরমাণু -তন্মাত্র।
২য় সংখ্যা - বুদ্ধির কর্ম - ভোগ কি - বুদ্ধির উপর অহংকারের প্রভাবে কি হয়।
৩য় সংখ্যা - জগৎ সৃষ্টির রহস্য -পঞ্চভূত -প্রকৃতি -অহংতত্ত্ব -অহংবোধের ধংস - পুরুষ বা আত্মার স্বভাব।
৩য় সংখ্যার পর। ...
গতকাল বৃষ্টির পর আজকের রাতের আকাশটায় রাজামশাইয়ের চোখে কোন অবাঞ্চিত মেঘের আনাগোনা একেবারেই নজরে এলোনা। যারা গতকাল সারা আকাশ জুড়ে দাবিয়ে বেড়াচ্ছিল, সেই খনিকের অতিথিদের অবর্তমানে স্বমহিমায় রাতের ঝাড়বাতিরা আজ উদ্ভাসিত এবং উচ্ছাসিতও বটে। এও যেন এক গ্রহ নক্ষত্রদের অহংকারের আত্মপ্রকাশ, আলোর রোশনাই নিয়ে সেজে গুঁজে কে প্রথমে সেই সুন্দরের পূজারী সেই মর্তের অধিবাসীদের আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকতে পারবে তার এক প্রতিযোগিতা চলছে। হোক না সে ধার করে আনা দীপ্তি কিন্তু তার চন্দ্রিমা বরাবরই মর্তের মানুষের ভীষণ পছন্দ। আর আজকেই সেই দীর্ঘ বিরহের অবসানে পূর্ন রূপ নিয়ে চন্দ্রমা ভুবন মাতাতে এসেছে। জনান্তিকে কে যেন বলে উঠলো, সাবধান মর্ত্যবাসীগণ ! জোছনা এসে গেছে। এই মায়াবী রাত যেমন কত পথহারা পথিককে পথ চেনায়, আবার প্রেমের জোয়ারে কত মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় কোন এক অজানা পথে। সেই নেই রাজ্য থেকে কত মানুষের অনভ্যস্ত লেখনী অবলীলায় শুধু পাতার পর পাতায় ভরিয়ে দেয় জোছনার দানবীয় সৌন্দর্য্যের ঘনঘটার সাথে চিরন্তন প্রেমের বন্দনায় , তার কোন ইয়ত্তাই নেই।
রাজামশাই ভীষণ একান্তভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে যখন এইসব ভাবছিলেন, বেশ কিছুক্ষন ধরে ঋষিবর সেটা লক্ষ্য করছিলেন। লাজুক চোখে যখন রাজামশাই ঋষিবরকে লক্ষ্য করলেন, তখন ঋষিবরের কৌতুক মেশানো দৃষ্টিত কিছু যেন কিছু একটা পড়তে পেলেন। অবশেষে, ঋষিবর বলেই ফেললেন, এই সব দর্শনের সাথে একাত্ম হবার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। কখন যে সংসারী মানুষের দৃষ্টি সংসারের ধরাবাধা গণ্ডিকে অতিক্রম করে নিখিলের পথে পাড়ি দেয়, সে নিজেই জানে না। যাই হোক রাজন, প্রতিদিনের মতো আমরা আবার আমাদের অসমাপ্ত দর্শনের জগতে ফিরে যাই।
পুরুষার্থ
ঋষিবর শুরু করলেন- সাংখ্য দর্শনকে ভারতের সবথেকে প্রাচীনতম দর্শন বলা হয়। কপিল মুনি এই দর্শনের প্রবক্তা বা রচয়িতা। প্রত্যেক সৃষ্টির পিছনে সৃষ্টিকর্তার একটা উদ্দেশ্য থাকে। এখানেও তার কোন অনিয়ম নেই। তিনি বহুদিন ধরে লক্ষ্য করছিলেন, মানুষ এই পৃথিবীতে এসেই ক্রমশঃ দুঃখভারে নিমজ্জমান হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক অনুশাসনের উর্ধে উঠে মানুষকে এই অন্তহীন দুঃখকে জয় করার উপায়ের পথ দর্শনের পথপ্রদর্শক হলেন কপিল মুনি। সাংখ্য দর্শনের ব্যাখ্যায়, মানুষের জীবনে দুঃখ উৎপাদিত হয় তিনটি কারণে। আধ্যাতিক , আধিভৌতিক এবং আধিদৈবিক এই তিন রকমের কারণ ।
যেই পথকে অনুসরণ করে গেলে মোক্ষ লাভ করা যায় আর এই ত্রিবিধ দুঃখের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, তাকেই ভারতীয় দর্শনে পুরুষার্থঃ বলে। প্রসঙ্গত সমগ্র বেদ দাঁড়িয়ে আছে এই চতুর্বর্গ পুরুষার্থকে কেন্দ্র করে। সারা বেদ জুড়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এই পুরুষার্থের কথাই বারবার বলা হয়েছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে মানব জীবনের সব রকমের দুঃখকে বিতাড়িত করে জীবনকে সুন্দরতম করে গড়ে তোলা। তাই জীবনের উদ্দেশ্যকে চারটি উপাদানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে - ধর্ম ,অর্থ ,কাম এবং মোক্ষ রূপে। [পুরুষার্থঃ নিয়ে আলোচনা পরবর্তী কোন সংখ্যায় করা হবে ] মানুষের ত্রিবিধ দুঃখ -
আধ্যাত্মিক দুঃখ - এই দুঃখ মানুষের মনকে আছন্ন করে দেয় এবং তার সাথে সাথে দেহকেও আক্রান্ত করে তোলে। সাংখ্য দর্শনে আত্মা শরীর ও মনে বিভক্ত। এই মানসিক দুঃখের উৎস হল প্রিয়জনের সাথে বিচ্ছেদ আর অবাঞ্চিত যোগাযোগ। কোন ইপ্সিত বস্তুকে না পাওয়ার গ্লানি ও মানসিক দুঃখের কারণ।
আধিভৌতিক দুঃখ - কোন কীট পতঙ্গ বা প্রাণীর দংশনজনিত কারণে উদ্ভূত যন্ত্রনা থেকে দুঃখ। অর্থাৎ শরীরের বাইরের থেকে যে দুঃখ উৎপন্ন হয়।
আধিদৈবিক দুঃখ - যে দুঃখ উৎপন্ন হয় বজ্র , ঝড় ,বন্যা ইত্যাদির ন্যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে।
ক্ৰমশঃ
ব্লগার -রবীন মজুমদার
মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ৬৪ তম অধ্যায় (১৩০)
Searching for hidden Truth (৩৩)
মন্তব্যসমূহ