সন্ধিক্ষণ (১৪৯)
সন্ধিক্ষণ (১৪৯)
মেলবন্ধন-এর পর। ....
নিরঞ্জন বসু, সৃঞ্জনীর মেসোমশাই, রিটার্ড ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার, যাদবপুর ইউনিভার্সিটির ছাত্র, মেকান লিমিটেডে তার চাকুরী জীবন শেষ করেছেন আজ থেকে প্রায় নয় বছর আগে। ৭০ দশকের অতিবাম রাজনীতির সমর্থক এবং তাত্ত্বিক নেতাও বটে।
এতক্ষন ধরে তাদের মাসিমার সাথে অনিন্দ্য আর সৃঞ্জনীর তথ্য সমৃদ্ধ গুরু গম্ভীর আলোচনাটা ভীষণ আগ্রহ সহকারে শুনছিলেন। কখন যেন তার স্মৃতির পাতাগুলি আচমকাই দমকা হাওয়ায় আন্দোলিত হয়ে উঠলো। সেখানে একে একে সেই ফেলে আসা দিনগুলি ভাসতে লাগলো। নিরঞ্জন বাবু সেই আবেগের তাড়নায় ফেলে আসা দিনগুলির টুকরো টুকরো স্মৃতিগুলিকে হিউস্টনের সৃঞ্জনীদের বাড়ির ড্রইং রুমের টেবিলে নিয়ে এসে ফেললেন।
দেখো বাপু , আমার মনে হয়, আবেগ সর্বস্য যৌবন শুধু যৌনতার আকাঙ্খার জন্ম দেয় না সে আবার দিনবদলের পিতৃত্বের দাবিদার। সেই আবেগই স্ফুলিঙ্গের ন্যায় জ্বলে উঠে, যখন শোষণ, সামাজিক ও রাজনৈতিক পেষনে জর্জরিত হয় দেশের আপামর সাধারণ মানুষ। সেই যৌবনই তখন স্বপ্ন দেখে মুক্ত সমাজ ভাবনার । অন্তত, আমরা সে সময়ে ভেবেছিলাম। হোকনা সে যতই দুর্গম পথ , দুস্তর বাধা, পদে পদে বিশাল ঢেউয়ের ন্যায় গর্জন করে ধেয়ে আসছে মৃত্যুর হাতছানি । সেই স্বর পৌছায়না ৭০ দশকের সেই হার না মানা যুবকদের কর্ণকুহরে। যৌবন যেন সবকিছুকে পদদলিত করে এগিয়ে চলে সামনে থাকা সেই অপার্থিব মুক্তির আলোকবর্তিকাকে অনুসরণ করে।
এখানে কৃত্তিমতার প্রবেশ দ্বার ছিল বন্ধ, কিন্তু সেদিন, আমাদের অভিজ্ঞতার বড্ড অভাব ছিল আর হবেই না কেন, এই পৃথিবীর রাস্তায় কতটুকুই বা হেঁটেছি। চলার বয়স যদি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত না হয় তাহলে চিত্তের পাঠাগারে স্তরে স্তরে অভিজ্ঞতাকে সংগ্রহ করে সাজিয়ে রাখবো কি করে ? যখন, যেটা দরকার পড়বে টেনে এনে মিলিয়ে দেখবো, বাস্তবের সাথে ফারাক আছে কতখানি।
এখন বুঝতে পারছি , জীবনের প্রবাহ হল নিরন্তর কুড়িয়ে আনা সম্পদের রাজপথ। তাই যেখানে অভিজ্ঞতা নেই অর্থাৎ বিচার সেখানে অধরা সেখানে আবেগই মনের সারথি। আবেগ আর বিচার বোধহয় সমান্তরালভাবে চলতে জানে না।
অনেক দেরিতে হলেও বোধগম্য হয়েছে মতবাদ বা জীবন সঙ্গী সর্ব ক্ষেত্রেই বিচার বিশ্লেষণ করে গ্রহণ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। অবশ্য বিচার করতে যে সম্পদটা লাগে তা হচ্ছে গভীর মনোসংযোগ যা জ্ঞানকে আহবান জানাতে সক্ষম, সে তো লুকিয়ে থাকে মনের আড়ালে।
পৃথিবী ক্রমেই বয়ঃপ্রাপ্ত হচ্ছে , সময়ের সাথে সাথে মূল্যবোধগুলো তলানিতে এসে বসে আছে। তাই বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি জানে, যে আগামী দিনে দেশের শিল্প- সংকৃতি ও সমাজের হাল যারা ধরবে, তারা যদি গভীর চাপে যাতে দিশেহারা না হয়ে যায়, তাই ব্যবহারিক শিক্ষার পাশাপাশি আধাত্মিক শিক্ষাতে শিক্ষিত করার চেষ্টা করেছে। অবশ্য এটা বোধ হয় প্রথম শ্রেণীর ইনস্টিটিউশনে এই ধরনের রিফ্রেশার কোর্সগুলি আছে।
আবার , ইনস্টিটিউশনগুলির পরিচালকবৃন্দ বোধহয় জেনেই গেছে যে , তৃতীয় বিশ্বের মধ্যবিত্ত ছেলে মেয়েরা আগামী দিনে বিদেশে গিয়ে যে আর্থিক প্রাচুর্য্যের মোকাবিলা করবেন , আর সেখান থেকে আর্থিক সচ্ছলতার কারণে উদ্ভূত ভোগবাদী দুনিয়ার হাতছানিকে আবাহন ও বিসর্জনের ক্ষেত্রে সঠিক সীমারেখাকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে, সেই আধাত্মিক জ্ঞান।
নিরঞ্জনবাবু খুঁজতে চেষ্টা করলো, ঠিক কবে থেকে আর কেন, ভারতীয়দের অর্থনীতির হাল হকিকতের পরিবর্তনটা লক্ষ্যণীয় হল। সম্ভবত ১৯৭৪ সাল, কেন্দ্রীয় সরকারের খাড়া নেমে এলো আই বি এম , কোকোকোলা প্রভৃতি বিদেশী সংস্থার উপর। তারা চলে গেল, কিন্তু কম্পিউটার শিক্ষার প্রতি ভারতীয়দের আগ্রহ অনেকটাই বাড়িয়ে দিল। তৎকালীন সরকারি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল কম্পিউটারের ব্যবহার।
১৯৮০-৮১ সাল নাগাদ, আমেরিকায় কমার্সিয়াল এপ্লিকেশন ও প্রযুক্তির সহকারী হিসাবে কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে ঘরে বাইরে একশ্রেণীর এক্সপার্ট মানবসম্পদের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কর্পোরেটদের প্রয়োজনে শিক্ষা ব্যাবস্থার পরিবর্তন হয়। কম্পিউটার এবং ইংরেজিতে পারদর্শী প্রচুর মানুষের দরকার হয়ে পড়লো। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন কমোডিটির আবির্ভাব হল যার নাম "আউটসোর্সিং" । এই দুইয়ের এক্সপার্ট ভারতীয়রা দলে দলে অংশগ্রহণ করলো , বিদেশীদের হাত ধরে সমৃদ্ধ হতে শুরু করলো ভারতীয় অর্থনীতি।
ক্ৰমশঃ
বি: দ্রঃ ভালো লাগলে শেয়ার করুন , কমেন্ট করুন , ফলো করুন আর খারাপ লাগলেও কমেন্ট করুন'
ক্ৰমশঃ
ব্লগার -রবীন মজুমদার
মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ৬৭ তম অধ্যায় (১৩৫)
Searching for hidden Truth (৩৯)
৩১/০১/২০২৩ পর্যন্ত ১৪৮ ব্লগ পোস্ট করা হয়েছে
আত্মদর্শনমূলক ব্লগ -
- ওপারের সংগীত
- ঐকতান
- সভ্যতার নামে প্রহসন
- নাড়ী ছেড়ার গান
- আত্মত্যাগ কখনো কখনো আত্মহত্যার সামিল হয়
- দলিতের সভ্যাভিমান
- একটি প্রান্তিক মানুষের মৃত্যু সভা
নিছক প্রেমের গল্প -
- বনবিতান
জীবনের সংগ্রামের পাশাপাশি মানুষের সংগ্রামের কথা -
- চে গুয়েভারা দ্য রেভলিউশনারী আইকন অল দ্য টাইম ( ৪টি পর্বে )
পৌরাণিক - বিশ্লেষণমূলক
- আমি মহাভারতের পৃথা (১৭টি পর্বে )
- ব্যাসদেবের জীবনের অপ্রকাশিত ঘটনা
- মহাভারতের রাজনীতি ও নারীদের নীরব বলিদান (৬ টি পর্বে )
নগর দর্পন -
- ধর্ম ও শাসক
- সমাজের রাজন্যবর্গ
- হালচাল
- সহাবস্থান
- নারদের মর্তে ভ্রমণ ( ২৩ টি পর্বে )
- মনীষীরা কি আজকের রাজনীতির কাঁচামাল
- ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই এই সুন্দর ভুবনে
- রজ্জুতে সর্প দর্শন
নিছক প্রেমের গল্প -
- বনবিতান
দর্শন আশ্রিত ব্লগ -
- অহংকারের রসায়ন (৮টি পর্ব - এখনো চলছে )
- আসা আর যাওয়া
- সংঘর্ষ
- উত্তর মীমাংসা
- আগামী
- আমরা বাস করি আনন্দে
- সৃষ্টির মুলে দন্দ্ব
- অখন্ড যখন খণ্ডিত হয়
- কোথায় পাব তারে
- গোলক ধাঁধা
- চির যৌবনা
- রূপ ও স্বরূপের লুকোচুরি
- একটি অক্ষরের গল্প
- মহাভারতের যাজ্ঞসেনী (৪৫ টি পর্বে -এখনো চলবে )
- সরণি
- পরম্পরা
- মেলবন্ধন
- সন্ধিক্ষণ
মন্তব্যসমূহ