অসুখ (১৫১)

    অসুখ (১৫১)

অনুভূতির বহুগামিতার পরে ০০০০০

 

           আলোচনার  পরিপেক্ষিতে নিরঞ্জনবাবু বললেন,  শুধু আবেগকে  রাজনীতির ক্ষেত্রে  প্রাধান্য না দেবার কথা বললেও, অস্বীকার করতে পারেন নি। তবে রাজনৈতিক দলের আদর্শের মাপকাঠিতে তাকে  গ্রহনযোগ্যতার ক্ষেত্রে ভালোলাগাটা প্রাথমিক ভাবে কাজ করে।  এইভাবেই তিনি  রাজনীতিটাকে  দেখতে অভ্যস্ত।   

            রাজনীতি আর সোশ্যাল ওয়ার্কের মধ্যে কোন ব্যবধান নেই।  অন্ততঃ সেটাই অভিমুখ হওয়া উচিত। আবার রাজনৈতিক ধ্যান ধারণা থেকে দীর্ঘ দিন ধরে মানুষ একই ধরনের আচরণ দেখতে দেখতে , সেটাকেই ভেবে নেয় সিস্টেম।  কালের নিয়মে যেমন ভাবে ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়কদের আত্মত্যাগকে সাধারণ মানুষ ভুলতে বসেছে বা শিক্ষা সংকৃতি ভীষণ স্বার্থানেষী হয়ে যত্ন করে তাদেরকে সত্য থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চার অভিমুখকে নস্যাৎ করে শাসকের দৃষ্টিভঙ্গিকে পালন করার অভ্যাসে জনগণকে  অভ্যস্ত করা হয়েছে। তার শুরু  ইতিহাসকে সর্ব প্রথম বিকৃত ও সত্যকে গোপন করার মাধ্যমে। 

        অবশ্য আজকের দিনের পরিপেক্ষিতে আবেগ কথাটিকে ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করতে হচ্ছে। যেমন, হতে পারে সেটা স্বপ্ন পূরণের জন্য আবেগ।   এই ড্রিমটা সুখ স্বপ্ন বিভোর হতে চাওয়া একদল মানুষ, তারা অবৈজ্ঞানিক আদর্শের  ধ্বজ্জা উড়িয়ে, ভারতীয় সংস্কৃতির মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে সময়ের আবেগ আর মিথ্যা প্রতিশ্রুতির পসরা সাজিয়ে, যেনতেন প্রকারেন ব্যক্তিগত মুনাফা অর্জনের মাধ্যম হিসাবে রাজনীতিকে বানিয়ে ফেলেছে। আবেগ সেখানে হারিয়েছে তার কুলীনতা।  
        'আবেগ' সেখানে তার প্রচলিত অর্থকে অতিক্রম করে , কোথায়ও  হয়ে গেছে প্যাশন আবার কোথায় হয়ে উঠেছে ভোগের তীব্র লালসা পূরণের প্রেরণা। 
         এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়,  'বেদ' প্রায় ৫০০০ বছর পূর্বে 'পুরুষার্থের' ব্যাখ্যায় একথা বলে গেছে। জীবনে ভোগের প্রয়োজনীয়তা আছে , সেই ভোগের কারণ হিসাবেই  প্রয়োজন হয় অর্থের, আর অৰ্থ তো এমনি আসেনা, তার জন্য কাজ করার একান্ত দরকার- এইভাবেই দেশ ও সমাজ এগিয়ে চলে। কিন্তু,  তারা লাগামহীন বাসনা বা ভোগের  পূজারী হয় তখন তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত উপাৰ্জনের জন্য নৈতিকতার ধার ধারেনা। সাধারণ মানুষের আপত্তি সেখানে , যেখানে একদল মানুষ ব্যক্তিগত লালসাকে চরিতার্থ করার জন্য   রাজনীতি আর ধর্মকে ব্যবহার করে দেশের মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়। 
           আজকের দিনের আলোকে  সেদিনের আবেগকে খুঁজতে চাই, তাহলে বলতেই হয়, সেটা সাময়িকভাবে হারিয়ে গেছে। যে সব উপকরণ দিয়ে সেদিনের রাজনৈতিক  সৈনিকদের অন্তঃকরণ সজ্জিত ছিল, তার মধ্যে ছিল মানুষত্বের শ্রেষ্ঠ  সম্পদগুলি।   
        সবসময়ে ইতিহাসকে এগিয়ে যেতে হবে এমন কোন মানে নেই , এই ব্যতিক্ৰমতাকে মান্যতা দিতে হবে।   এটাই জীবন, এটাই শিক্ষা।  মনে রাখতে হবে, আকাশে মেঘটা ক্ষণিকের, কিন্তু তার অস্তিত্বকেও যেমন অস্বীকার করা যাবেনা, সেটা যেমন  ভ্রমের কারনে সত্য বলে ভাবা, ঠিক তেমনি, তাকে দিবাকরের ঐশর্য্যের কাছে মেঘের পরাজয়ে  সেই আপাত প্রতীয়মান অন্ধকার স্বরূপ মানুষের দুর্দশা দূর হবেই। এটাই বিশ্ব জগতের নিয়ম, সেটা আমরা মানি বা না  মানি তাতে বিশ্বপ্রকৃতির কিচ্ছু যায় আসেনা। আর যারা এখন পর্যন্ত ভেবে এসেছে  আকাশে মেঘের অস্তিত্বটা একমাত্র সত্য , তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছে, এটা জেনে রাখা ভালো। 
            আমাদের জৈব প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে, আহার দুই রকমের। একটি মানুষের স্থুল আহার যার মাধ্যমে দেহ পরিপুষ্ট হয়, ঠিক তেমনি মনের ও আহার আছে যা মানুষের  যেটা সুক্ষ শরীর অর্থাৎ মনের সমৃদ্ধি ঘটে। চোখ, কান, জিহবা, স্পর্শ আর গন্ধ দিয়ে মানুষ বাইরের জগৎ থেকে সেই আহার গ্রহণ  করে থাকে। 
            এর মধ্যে , যে কোন আহার যদি  শরীর ও মনের পক্ষে হিতকর বা পুষ্টিকর না হয় , তাহলে, অচিরেই সেই মানুষ তথা সমাজ  স্বভাবতই  অসুস্থ হয়ে পরে। তারা যুগের পর যুগ ধরে সেই সুস্থতার প্রশ্নে আপস করেনি, খুঁজে বার করার জন্য জ্ঞানের স্ক্যানারের তলায় সুস্থতার প্রতিবন্ধকতার কারণগুলোকে ফেলে উদ্ধার করে এনেছে তার প্রতিষেধক। 
           সেটাই প্রকৃতির সৃষ্টির নিয়ম , প্রথমে যেটা অব্যক্ত অবস্থায় থাকে পরে চৈতন্যের সংস্পর্শে এসে ব্যক্ত হয়ে পূর্বেকার অবস্থার সমাপ্তি ঘোষণা করে। কায়েমী স্বার্থের বাহকরা ভুলক্রমে তাদের জড় ভেবে বসে।  এটাই পরিবর্তনের নিয়ম এবং এই ভুলটাও প্রাকৃতিক নিয়মেই হয়। জ্ঞানের আঁচে  বুদ্ধির উপর প্রতিবিম্বিত আমিত্বের ছায়াটা সরে যায়  উন্মেষ হয় চেতনার।  এই চেতনাই  মূল শক্তি  সামাজিক , অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আর  সেটা বিলম্বিত হলেও অবশ্যম্ভাবী। স্বামী বিবেকানন্দ সেই শক্তির কথা বার বার বলে গেছেন। 

ক্ৰমশঃ

  বি: দ্রঃ  ভালো লাগলে শেয়ার করুন , কমেন্ট করুন , ফলো করুন আর খারাপ লাগলেও  কমেন্ট করুন'       

 ব্লগার -রবীন মজুমদার

মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ৬৭ তম  অধ্যায় (১৩৫)

Searching for hidden Truth (৩৯) 

২০/০২/২০২৩ পর্যন্ত  ১৫১ টি  ব্লগ পোস্ট করা  হয়েছে 

আত্মদর্শনমূলক ব্লগ - 

  • ওপারের সংগীত 
  • ঐকতান 
  • সভ্যতার নামে  প্রহসন 
  • নাড়ী ছেড়ার গান 
  • আত্মত্যাগ কখনো কখনো আত্মহত্যার সামিল হয় 
  • দলিতের সভ্যাভিমান 
  • একটি প্রান্তিক মানুষের মৃত্যু সভা 
নিছক প্রেমের গল্প -
  • বনবিতান 
জীবনের সংগ্রামের পাশাপাশি  মানুষের সংগ্রামের কথা   -
  • চে গুয়েভারা দ্য রেভলিউশনারী আইকন অল দ্য টাইম ( ৪টি পর্বে )
পৌরাণিক - বিশ্লেষণমূলক  
  • আমি মহাভারতের পৃথা (১৭টি পর্বে )
  • ব্যাসদেবের জীবনের অপ্রকাশিত ঘটনা 
  • মহাভারতের রাজনীতি ও নারীদের নীরব বলিদান (৬ টি পর্বে )
নগর দর্পন -
  • ধর্ম ও শাসক 
  • সমাজের রাজন্যবর্গ 
  • হালচাল 
  • সহাবস্থান 
  • নারদের মর্তে ভ্রমণ ( ২৩ টি পর্বে )
  • মনীষীরা কি আজকের রাজনীতির কাঁচামাল 
  • ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই এই সুন্দর ভুবনে 
  • রজ্জুতে সর্প দর্শন 
নিছক প্রেমের গল্প -
  • বনবিতান 
দর্শন আশ্রিত ব্লগ -
  • অহংকারের রসায়ন (৮টি পর্ব - এখনো চলছে )
  • আসা আর যাওয়া 
  • সংঘর্ষ 
  • উত্তর মীমাংসা 
  • আগামী 
  • আমরা বাস করি আনন্দে 
  • সৃষ্টির মুলে দন্দ্ব 
  • অখন্ড যখন খণ্ডিত হয় 
  • কোথায় পাব তারে 
  • গোলক ধাঁধা 
  • চির যৌবনা 
  • রূপ ও স্বরূপের লুকোচুরি 
  • একটি অক্ষরের গল্প 
  • মহাভারতের যাজ্ঞসেনী (৪৫ টি পর্বে -এখনো চলবে )
  • সরণি 
  • পরম্পরা 
  • মেলবন্ধন 
  • সন্ধিক্ষণ 
  •  অনুভূতির বহুগামিতা
  • অসুখ 



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়