কুরুক্ষেত্রে একটি বিনিদ্র রাত( ১৫৬)

 কুরুক্ষেত্রে  একটি  বিনিদ্র রাত( ১৫৬)

 (১ম পর্ব )

( রিডিং টাইম  ৪ মিঃ)

          দিনমনি অস্তাচলে গেলে পান্ডব ও কৌরব পক্ষের সেনাপতিরা আজকের যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণার সাথে সাথে  শেষ হলো  সপ্তম দিনের যুদ্ধ।  পান্ডব ও কৌরব পক্ষের অসংখ্য সেনার মৃতদেহগুলোর সৎকার বিস্তীর্ন প্রান্তর জুড়ে অব্যাহত রয়েছে  যুদ্ধের প্রথমদিন থেকে। চিতার লেলিহান শিখা  প্রতি মহুর্তে কুরুক্ষেত্রের জীবন্ত সৈনিকদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, যুদ্ধক্ষেত্রে আগামী দিনের  সম্ভাব্য পরিণতিকে। তবুও তারা জীবন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ফির সকালে আবার অবতীর্ন হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রে।  এটাই সৈনিকের জীবন।  এই হানাহানির অবসরে,   তারা  আবার  ফিরে আসে স্বপ্নময় জগতে , এটা তাদের নিত্য দিনের অভ্যাস, এটাই বেঁচে থাকার প্রেরণা।

         এমনিই এক সাধারণ সৈনিক হংসরাজ ও নগরবধূ রুক্মিণীবাইয়ের অসমাপ্ত প্রেম কাহিনীকে নিয়ে আজকের গল্প।  তাদের জীবনের ছোট ছোট হাসিকান্না, ভালোবাসা ,  বেদনা অভিমানকে নিয়ে এই ঘটনা।   

       অসমাপ্ত দদ্ধ দেহগুলির  গন্ধে বাতাস মুখরিত। আগুনের লেলিহান শিখা তার রূপের পরিবর্তন ঘটিয়ে ধোয়ার কুন্ডলির আকারে অনন্ত আকাশের বুকে দল বেঁধে  হারিয়ে যাচ্ছে। আবার আরেকদল ধোয়া তার পূর্বসূরীর পথ অনুসরণ করে দৃষ্টির আড়ালে চলে যাচ্ছে। বিরামহীনভাবে হয়তো চলবে যুদ্ধের শেষ দিন পর্যন্ত। 

             আগুন কখন মান্যতা দেয়নি কোন ভেদাভেদকে , তাই তার কাছে  সাধারণ সৈনিক থেকে উচ্চপদস্থ সেনানায়ক, উচ্চবর্ণ, নিম্নবর্ণের কোন আলাদা অস্তিত্ব  নেই। এই  প্রান্তরে এসে সবার এটাই পরিচয়,  যে  তারা প্রাণহীন দেহ মাত্র। এই পৃথিবী চায়না  তাদের সামান্যতম অস্তিত্ব রক্ষা করতে, যারা একদিন কারোর না কারোর একান্ত প্রিয়জন ছিল। তারা  আজ ত্যাজ্য হয়েছে  মনুষ্য সমাজ থেকে  সেদিনের  প্রিয়জনের দ্বারা। তাই আগুনই এখন তাদের শেষ সম্বল এবং একমাত্র গন্তব্যস্থল। এটাই জাগতিক  নিয়ম। শুধু বেঁচে থাকে তাদের কর্ম।    

           এমনিই এক সন্ধ্যায় যুদ্ধ শেষ হবার খানিক পরে, এক অখ্যাত সৈনিক যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে অনতিদূরে নগরবধূদের তাঁবুর দিকে এগিয়ে চলল।( প্রসঙ্গত, সেই সময়, যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের শিবিরের সাথে সাথে নগরবধূদের শিবিরও থাকতো)  পথ চলতে চলতে এলোমেলো কত ভাবনা তার নিজের কাছে অসংখ্য প্রশ্নের সামনে নিয়ে দাঁড়  করালো ।  

         মাত্র চারদিনের পরিচয় । প্রথম দিনের যে উপলক্ষটা ছিল শুধু মাত্র দেহের  তৃপ্তিকে কেন্দ্র করে, সেটা যেন কেমন করে দেহকে অতিক্রম করে  হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত হল।  মনে হয় এক দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক।  সম্পর্কের বয়স কতটা হলে তা দৃঢ় হয়, হয়তো তার কোন নির্দ্দিষ্ট  মাপকাঠি  নেই ।  

        এই সব ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যাচ্ছে, এমনসময় হঠাৎ একদল শিয়াল অদগ্ধ মাংসের গন্ধে বদ্ধভূমির দিকে দৌড়ে গেল, পথের মধ্যে সৈনিককে ঘুরে তাকিয়ে দেখবার মতো তাদের অবসর ছিল না।  সৈনিক ভাবলো, ভালোই হল, এ যাত্রায় জীবনটা  রক্ষা হলো।

         অবশেষে এসে পৌছালো নগরবধূদের আবাসস্থলের দোর গোড়ায়। এই জায়গার সাথে শশ্মানের কোন পার্থক্য নেই। শত্রু-মিত্র, স্ত্রী-পুরুষ, ধনী-নির্ধন, উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ন, রাজা-প্রজা সকলেই অতিথি এবং সবারই সমান  কদর। 

        অনতিদূরে সরস্বতী নদী আপন গতিতে বয়ে যাচ্ছে, তার ওপারে বিশাল জঙ্গল আর এপারে সমতল প্রান্তর। এরই এক পাশে নগরবধূদের  অস্থায়ী আস্তানা। কাঠামোটা   বাঁশের  তার  উপর খড়ের আস্তানা, বাইরের চারপাশ দর্মাবেড়ায় মোড়া , তার মধ্যে মোটা কাপড়ের পর্দা দিয়ে একটি ঘরের সাথে অন্য ঘরের ব্যবধান রচিত হয়েছে এবং ঘরে প্রবেশের মুখেও সেই পর্দা একটি ঘরের সাথে অপর একটি ঘরের ব্যবধান রচনা করেছে। ঘরের অন্দরে  খড় বিছিয়ে তার উপর মোটা চাদর বিছিয়ে শয্যার ব্যাবস্থা করা আছে। 

        এখানে যুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছে তাদের মনোরঞ্জনের জন্য কোন অর্থ মূল্য  গৃহীত হয় না, সেটা রাজ্যের কোষাগারের দায়িত্বের মধ্যে পরে। অর্থাৎ সৈনিকদের খাদ্য ও পানীয়ের মতো মনোরঞ্জনটাও বিনা মাশুলে। 

            সবে সন্ধ্যা হয়েছে, যারা অতিথি মনোরঞ্জনে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে, তারা ছাড়া প্রায় সকলেই  ইতস্ততঃ ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিজেদের মতো করে গল্পগুজব করে যাচ্ছে।  এমন সময় হংসরাজ এসে উপস্হিত হলো। এসেই সে রুক্মিনীর খোঁজ করতে শুরু করলো। খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে একটা প্রাচীন অশ্বথ গাছের নিচে গোলাকার হয়ে বসে সখীদের সাথে গল্পে মত্ত হয়ে আছে।  হংসরাজের আগমনে গল্পের ছেদ পড়লো, রুক্মিণী অতি আগ্রহভরে হংসরাজের হাতটি নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে ধীরে ধীরে  গন্তব্য স্থলের দিকে এগোতে লাগলো। 

ক্রমশঃ 


 ব্লগার -রবীন মজুমদার
 বি: দ্রঃ  ভালো লাগলে শেয়ার করুন , কমেন্ট করুন , ফলো করুন আর খারাপ লাগলেও  কমেন্ট করুন'   

মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ৬৭ তম  অধ্যায় (১৩৫)

Searching for hidden Truth (৩৯) 

১৫/০৩/২০২৩ পর্যন্ত  ১৫৬ টি  ব্লগ পোস্ট করা  হয়েছে 

আত্মদর্শনমূলক ব্লগ - 

  • ওপারের সংগীত 
  • ঐকতান 
  • সভ্যতার নামে  প্রহসন 
  • নাড়ী ছেড়ার গান 
  • আত্মত্যাগ কখনো কখনো আত্মহত্যার সামিল হয় 
  • দলিতের সভ্যাভিমান 
  • একটি প্রান্তিক মানুষের মৃত্যু সভা 
  • ২১শে ফেব্রুয়ারীর মূল্যবোধ  (১৫২)
নিছক প্রেমের গল্প -
  • বনবিতান 
জীবনের সংগ্রামের পাশাপাশি  মানুষের সংগ্রামের কথা   -
  • চে গুয়েভারা দ্য রেভলিউশনারী আইকন অল দ্য টাইম ( ৪টি পর্বে )
পৌরাণিক - বিশ্লেষণমূলক  
  • আমি মহাভারতের পৃথা (১৭টি পর্বে )
  • ব্যাসদেবের জীবনের অপ্রকাশিত ঘটনা 
  • মহাভারতের রাজনীতি ও নারীদের নীরব বলিদান (৬ টি পর্বে )
নগর দর্পন -
  • ধর্ম ও শাসক 
  • সমাজের রাজন্যবর্গ 
  • হালচাল 
  • সহাবস্থান 
  • নারদের মর্তে ভ্রমণ ( ২৩ টি পর্বে )
  • মনীষীরা কি আজকের রাজনীতির কাঁচামাল 
  • ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই এই সুন্দর ভুবনে 
  • রজ্জুতে সর্প দর্শন 
  •  কুরুক্ষেত্রে  একটি  বিনিদ্র রাত
নিছক প্রেমের গল্প -
  • বনবিতান 
দর্শন আশ্রিত ব্লগ -
  • অহংকারের রসায়ন (৮টি পর্ব - এখনো চলছে )
  • আসা আর যাওয়া 
  • সংঘর্ষ 
  • উত্তর মীমাংসা 
  • আগামী 
  • আমরা বাস করি আনন্দে 
  • সৃষ্টির মুলে দন্দ্ব 
  • অখন্ড যখন খণ্ডিত হয় 
  • কোথায় পাব তারে 
  • গোলক ধাঁধা 
  • চির যৌবনা 
  • রূপ ও স্বরূপের লুকোচুরি 
  • একটি অক্ষরের গল্প 
  • মহাভারতের যাজ্ঞসেনী (৪৫ টি পর্বে -এখনো চলবে )
  • সরণি 
  • পরম্পরা 
  • মেলবন্ধন 
  • সন্ধিক্ষণ 
  •  অনুভূতির বহুগামিতা
  • অসুখ 
  •  সংকট কারে কয় 
  • অন্ধজনে দেহ আলো   
  • প্রেমহীনতা কি  সামাজিক ব্যাধি  



 







মন্তব্যসমূহ

নামহীন বলেছেন…
Asadharan bornona. Khub sundor ekta Prem Kahini ja kina kurukhetra juddher thekeo anek hriday sparsi. Thanks to Rabin Majumder.

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়