১৬৫ এক্সটেন্ডেড মহাভারত (1)

১৬৫ এক্সটেন্ডেড  মহাভারত (1) 



ভীষ্মরা  কোন  একক  কোন অস্তিত্ব  নয় , সে সময় হতে পারে,  যুগের প্রতীক হতে পারে  ।  সেখানে মহাভারত একটা স্টেটমেন্টও হতে পারে কিংবা একটা দলিল। 

যখন যারা যাদের  পক্ষ অবলম্বন করে তখন  তাদের সেই প্রটোকল অনুযায়ী  কাজ করতে হয় , মহাভারতের ভীষ্ম  সেই  শৃঙ্খলেই  আবদ্ধ  , যেখানে বিবেককে জমা রাখতে হয়, খাদ্য  আর  জীবনের  নিরাপত্তা এবং  কমিটমেন্টের বিনিময়ে।  ঠিক তেমনি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাসদেবরা   কিন্তু সময়ের কথা বলে, আগামী দিনের কথা বলে। 

কৌরবরা সকল সময় শাসকের প্রতিনিধিত্ব করে আসে। কখনো প্রজাবৎসল আবার কখনো স্বৈরাচারী আবার কখনো সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে খানিকটা রক্ষনশীল। 

 **********************************

সেই আলোকে শুরু হলো এক্সটেন্ডেড মহাভারত। 

এক্ষণে পরাশর নন্দন লিখছে  নয়া ইতিহাস 
 ছন্দের বিয়োগে  আনিল  গদ্যের বিন্যাস ।।  

আজকের পাঠকবর্গ চায়না মোটেই কাব্য 
তাদের জীবনটা  এখন  রসকষহীন নিরেট একটা গদ্য । ।

মহাভারত নামটির প্রতি দ্বৈপায়ন এতই দুর্বল
এখনও  তার বুকে জ্বলিছে সেই কুরুক্ষেত্রের অনল । । 

কত করে করিল চেষ্টা কৌরবদের দমন 
ঘুরে ফিরে আবার তাদের হলো প্রত্যাবর্তন । ।

তাহলে বোঝা গেল পাণ্ডব আর কৌরব যে ভিন্ন সেটা মিথ্যা 
বিচিত্র রূপে প্রকাশিত সৃষ্টি কর্তার  পরস্পর বিরোধী 
সে একআজব সত্তা । ।

****************************************************

প্রথম দৃশ্যে -   হস্তিনাপুরের রাজসভা।  স্ক্রিপ্ট হাতে  নিয়ে একরাশ না কামানো দাড়ি আর আধ ময়লা জিনসের উপর ছোট কলারের পাঞ্জাবি পরে আর কাঁধে শান্তিনিকেতনি ঝোলানো ব্যাগ নিয়ে ব্যাসদেব ভীষ্মকে "এক্সটেন্ডেড  মহাভারত" থেকে পাঠ মুখস্থ করাচ্ছেন। 

*                              *                            *                                              
ভীষ্ম - (ব্যাসদেবের উদ্দেশ্যে) ভাই ব্যাসদেব আর কতদিন হস্তিনাপুরের রাজসভায় পোর্টফোলিওহীন রাজা সাজিয়ে আমার মুখ দিয়ে তোমার লেখা  স্ক্রিপ্টগুলি সাজাবে। যুগে যুগে তোমার মতো ক্ষমতাবান লেখকদের  হাতে আমরাই কাঠ পুতলি। এবার ভাই  একটু এসি রুমে বসাও , আর শুনে রাখ,  আমার প্রতিজ্ঞার এক্সপায়ারি ডেট কবে পার হয়ে গেছে।  বুঝতেই পারছো আমার মতো অভিনেতাকে  সব রকম সুবিধা দিও কিন্তু।    
(এমন সময় হন্ত দন্ত হয়ে চোখে টমফোর্ড ব্রান্ডের সানগ্লাস হালকা নীল রঙের ব্র্যান্ডেড  টি শার্ট আর হোয়াইট  কালারের ফর্মাল ট্রাউজার্স পরে দুর্যোধন  সিয়ান রোডস্টারটাকে  পার্ক করে নামলো )
দুর্যোধন - পিতামহ আপনার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আমাকে একটু শেয়ার করুণ, যাতে আমি সমৃদ্ধ হতে পারি। 
পিতামহ - হে পুত্রঃ , সেটা তো আমার কর্তব্য। তবে সমস্যাটা কি আমাকে একে একে বলতে থাকো। 
প্রথম কৌরব   - সবাই বলছে গণতন্ত্র দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। বিরোধী দলগুলি আর বুদ্ধিজীবীরা প্রানপনে চিৎকার করছে। বড্ড অস্বস্তি লাগছে পিতামহ । 
পিতামহ - বাছা দুর্যোধন !  কথাটা যে সত্যি, সেটা তুমিও জানো আর তোমার বিরোধীরাও  জানে।
 তোমার দেশ নামক গাড়িটার পেট্রল কারা  ঢালছে ? সেই কয়েকটা পরিবার। সেটা আগেও ছিল , এখনো আছে। 
 তবে কার কথা শুনতে হবে ? অবশ্যিই তাদের কথা।
 তাহলে কি দাঁড়ালো , তোমরা হোচ্ছ তাদের পাহারাদার। 
আর সাধারণ মানুষকে কি বোঝাচ্ছ? যে তুমি জনগণকে  রক্ষা করছো। 
 তাহলে 'ধন' যেখানে দেশ চালাচ্ছে সেখানে 'গণ' তো নেই , তাই গণের জায়গায় ধন আসতে যেখানে গণতন্ত্র বলে যে সাইনবোর্ডে লেখা ছিল সেখানে ধনতান্ত্রিক বলে লেখা উচিত ছিল, আর সেটা তো পারবেনা।  
        আর কি বোকাসোকা ব্যাপার, তোমাদের সংবিধান লেখা হয়েছে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে আর রক্ষা করতে।  আদতে তোমরা ধনতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করে বসে আছো। এবার গণতন্ত্রের সংবিধানে ধনতন্ত্রের মধ্য উদ্ভূত  প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবে কি করে ?  তাই তোমাদের বিচারের ক্ষেত্রেও দীর্ঘসূত্রতা। 
কয়লার খনিতে কয়লাই মিলবে ,   সোনা কি মিলবে ? এবার বুঝতে পারছি, তোমাদের বর্তমান সমস্যা হচ্ছে শাক দিয়ে আর মাছ ঢাকতে আর পারছোনা। 
        হে পুত্রঃ ! এর আগেও তোমাকে অনেক কথাই বলেছিলাম, যে সরকার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিতই হয় না তার কাছে  কেন বাপু গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে চিৎকার করছো। নির্বাচনে জিততে গেলে মুখে যেটা বলবে    কাজে  একদম তা থাকবেনা , সেটাই অভ্যাস । 
তুমিই শাসক আবার তুমিই যদি নকল বিরোধী গড়তে পারো তবেই তো দেশ চালিয়ে মজা। 

দুর্যোধন : কিভাবে জনগণ আমাদের ষড়যন্ত্র বুঝতে পারবে না তার উপায় বলুন - - 
ভীষ্ম : শিক্ষাকে প্রথমে ঘরে বন্দী করে রাখ।  
- এমন অভাব সৃষ্টি করো যাতে বাবা-মা'রা ছেলেমেয়েদের স্কুলে না পাঠিয়ে    অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করতে পাঠায়। 
- এমন অভাব সৃষ্টি করো যেন মানুষ এমনিই তৃষ্ণার্ত হয় তখন তোমার হাত থেকে  সীমিত জলের ফোঁটা তাদের কাছে  ভগবানের আশীর্বাদের মতো যেন মনে হয় । 
- জনগণকে তোমার কনসিউমার বানিয়ে দাও । 
- দিকে দিকে  সমাজবিরোধী  তৈরি করো।  যারা তোমার নির্বাচনের কান্ডারী  হবে, তোমার সরকারকে শুধুমাত্র নির্বাচন নয়, সবরকম গণতন্ত্রের ভূত তাড়ানো ওঝার কাজ করবে। কিন্তু মনে রেখো, তাদের উপর যে আইনি খাড়াটা যে তোমার করুনায় স্থগিত রয়েছে, সেটা জানিয়ে দিতে ভুলোনা । 
- নেশার জিনিস সস্তা করে দাও। 
- হাত খরচের জন্য পাড়ায় পাড়ায় তোমাদের ছায়ার তলায় যা যা সূত্র থেকে আমদানী হতে পারে তার পূর্ণ সদব্যবহার  করার ক্ষেত্রে পরোক্ষে সহযোগিতা কর,  যাতে তোমার গেস্টোপরা  দিন গুজরান করতে পারে। 
তোমাদের বাহনদের মধ্যে যদি জোর করে কেউ নারী সঙ্গ করে তবে তোমার পাহারাদারদের  বলে দাও একান্ত অপরাগ না হলে প্রমাণ রাখবে।  
হসপিটালের ডাক্তারদের ভয় দেখিয়ে রিপোর্ট তৈরি করাও, যেন তোমাদের মতো রিপোর্ট লিখতে বাধ্য হয় । 
সব জায়গার অশান্তির মীমাংসা করবেনা কারণ উপদ্রুত অঞ্চল তৈয়ারি করে রাখতে হবে, যেখানে অবাধ্য  প্রতিরক্ষার পূজারীদের  সেই উপদ্রুত অঞ্চলে নির্বাসিত  করা  যায়।   
মনে রেখো ক্ষমতাই সম্পদকে ডেকে আনে। আর সম্পদ থাকলেই সুরক্ষা বজায় থাকবে, প্রজা পালন ও  তাদের পরিমার্জন  অনায়াসেই করতে পারবে। 
এসবেরও  ব্যতিক্রমও আছে, সেটা বলার সময় এখনো আসেনি, এই বলে ভীষ্ম একটু মুচকি হাসি হেসে প্রস্থান করলেন।   

ক্রমশঃ 

বি: দ্রঃ  ভালো লাগলে শেয়ার করুন , কমেন্ট করুন , ফলো করুন আর খারাপ লাগলেও  কমেন্ট করুন'   

 

২৮/০৭/২০২৩ পর্যন্ত   ১৬৫ টি  ব্লগ পোস্ট করা  হয়েছে 

আত্মদর্শনমূলক ব্লগ - 

  • ওপারের সংগীত 
  • ঐকতান 
  • সভ্যতার নামে  প্রহসন 
  • নাড়ী ছেড়ার গান 
  • আত্মত্যাগ কখনো কখনো আত্মহত্যার সামিল হয় 
  • দলিতের সভ্যাভিমান 
  • একটি প্রান্তিক মানুষের মৃত্যু সভা 
  • ২১শে ফেব্রুয়ারীর মূল্যবোধ  (১৫২)
নিছক প্রেমের গল্প -
  • বনবিতান 
জীবনের সংগ্রামের পাশাপাশি  মানুষের সংগ্রামের কথা   -
  • চে গুয়েভারা দ্য রেভলিউশনারী আইকন অল দ্য টাইম ( ৪টি পর্বে )
পৌরাণিক - বিশ্লেষণমূলক  
  • আমি মহাভারতের পৃথা (১৭টি পর্বে )
  • ব্যাসদেবের জীবনের অপ্রকাশিত ঘটনা 
  • মহাভারতের রাজনীতি ও নারীদের নীরব বলিদান (৬ টি পর্বে )
  • মহাভারতের যাজ্ঞসেনী (৪৬টি পর্বে )
নগর দর্পন -
  • ধর্ম ও শাসক 
  • সমাজের রাজন্যবর্গ 
  • হালচাল 
  • সহাবস্থান 
  • নারদের মর্তে ভ্রমণ ( ১৮+৬=২৪ টি পর্বে )
  • মনীষীরা কি আজকের রাজনীতির কাঁচামাল 
  • ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই এই সুন্দর ভুবনে 
  • রজ্জুতে সর্প দর্শন 
  •  কুরুক্ষেত্রে  একটি  বিনিদ্র রাত (১-৪ পর্ব )
নিছক প্রেমের গল্প -
  • বনবিতান 
দর্শন  ও ইতিহাস আশ্রিত   ব্লগ -
  • অহংকারের রসায়ন (৮টি পর্ব - এখনো চলছে )
  • আসা আর যাওয়া 
  • সংঘর্ষ 
  • উত্তর মীমাংসা 
  • আগামী 
  • আমরা বাস করি আনন্দে 
  • সৃষ্টির মুলে দন্দ্ব 
  • অখন্ড যখন খণ্ডিত হয় 
  • কোথায় পাব তারে 
  • গোলক ধাঁধা 
  • চির যৌবনা 
  • রূপ ও স্বরূপের লুকোচুরি 
  • একটি অক্ষরের গল্প 
  • মহাভারতের যাজ্ঞসেনী (৪৫ টি পর্বে -এখনো চলবে )
  • সরণি 
  • পরম্পরা 
  • মেলবন্ধন 
  • সন্ধিক্ষণ 
  •  অনুভূতির বহুগামিতা
  • অসুখ 
  •  সংকট কারে কয় 
  • অন্ধজনে দেহ আলো   
  • প্রেমহীনতা কি  সামাজিক ব্যাধি  
  • ১৬২ হিউস্টনের  ডাইরি (১০ তম পর্ব )
  • ১৬৩ হিউস্টনের  ডাইরি (১১ তম পর্ব   রাম কি এখনও  বনবাসে আছেন ?
  • ১৬৪ হ রে ক রে ক  ম বা (১)
  • ১৬৫ এক্সটেন্ডেড মহাভারত 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৬৯) রবি সৃষ্টির বৈচিত্রতা (প্রথম নিবেদন )

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৪২) নারীর একাল ও সেকাল