১৬৭ হাসির পুনঃস্থাপনা (২)
( জার্নি উইথ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স )
স্মাইল রিপ্লেসমেন্ট প্রজেক্ট (১) পর ০০০০০
সেই তরুণীর নাম মিস কবিতা রাও , তাদের কোম্পানি সম্পর্কে একটা ছোট্ট ব্রিফইং দিতে গিয়ে প্রথমেই বলল তাদের কোম্পানিটির স্টেটাস হচ্ছে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি।
এই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডক্টর ভেনুগোপালন দীর্ঘদিন ইউ এসেতে সিলিকন ভ্যালিতে এক সংস্থায় উচ্চপদে আসীন ছিল, তা ছাড়া আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের উপর তার বহু কাজ আছে ।
জীবনের প্রাইম টাইমগুলি কেটে গেছে সংস্থার কাজে এবং তার পরিবর্তে অবশ্য লোভনীয় বেতন পেতেন যা তার প্রয়োজনের তুলনায় বেশ অতিরিক্ত ছিল।
চাওয়া-পাওয়ার সমীকরণে তিনি ক্লান্ত হয়ে আসছিলেন। শুরু হল তার কারণ অন্বেষণ। তিনি দেখলেন, জীবনটা হয়ে উঠেছিল শুধু মাত্র জীবিকা কেন্দ্রিক। জীবনে নেমে এসেছিল একঘেয়েমি।
জীবিকার জন্য জীবনের বলিদান একটা সময়ের পর মেনে নিতে ভীষণ অসুবিধা হচ্ছিল। সেটা তিনি অনুভব করেছিলেন। এও একধরনের হাসি আনন্দ মজা জীবন থেকে কর্পূরের মতো উবে যাবার বাস্তব চিত্র। সেই কারনে তিনি বিদেশে থাকাকালীনই জীবনে হাসি আনন্দের পুনঃস্থাপনের স্বপ্নটি দেখতে শুরু করেন, বর্তমানে এই সংস্থাটি ওনারই মানস পুত্র।
ইতিমধ্যে চাকরি ছেড়ে বেশ কিছুদিন আশ্রমেও ছিলেন। কিন্তু আশ্রমে থেকে আশ্রমিক ভাবধারায় সংসারী মানুষের জীবনে আনন্দের বিকাশ ঘটাতে পারবেন না, সেটা বুঝেই এই সংস্থাটি তৈরি করেন।
এবার, আপনাদের আমাদের সমস্যা সমাধানের মেথডোলজি নিয়ে একটা ডেমো দেখাচ্ছি। এই বলে প্রজেক্টরের সাহায্যে সেক্যুয়েন্সিয়ালি সল্যুশন দেখতে শুরু করলেন।
এই প্রজেক্টের মেইন অবজেক্টিভ হলো জীবনে আনন্দকে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করা। একটা লাইভ ডাটা দিয়ে তিনি শুরু করলেন ।
কেস স্টাডিস - পিন্টু বাবুর বর্তমান বয়স ৪৮ বছর। একটি সরকারি সংস্থার বড়বাবু। আমাদের কাছে যে সিমটম নিয়ে এলো তাকে ডায়গনেসিস করে আমরা সিদ্ধান্তে এলাম যে ওনার জীবনে আনন্দ হারিয়ে গেছে। আর্থিক পরিস্থিতি ঠিকই আছে। আমাদের পূর্ব নির্ধারিত প্রশ্নমালা নিয়ে প্রশ্ন করতে, বেরিয়ে এলো, তার স্ত্রী দীর্ঘ দিন ধরে ওনার সামনে হাসেন না। এই হাসিই পরিবারে একমাত্র আনন্দ মাপার মাপকাঠি অনেকটা জীবনের ঘরে সূর্য্যের আলো প্রবেশের মতো।
বেশ কয়েক বছর আগে ,পুজোর ঠিক প্রাক মুহূর্তে পিন্টু গিন্নি মার্কেটিং করে নিয়ে এসে সেই বস্ত্র সম্ভার নিয়ে হাসতে হাসতে সদ্য অফিস থেকে আসা পিন্টুবাবুকে দেখতে গিয়ে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেন। সেইদিন আবার পিন্টুবাবু উর্ধস্তন কতৃপক্ষের কাছে বেশ ভালোমন্দ কথা শুনে মনটা বেশ খিচড়ে ছিল আর সেখানে একটি হাসি মুখ সেই ব্যথার উপর যেন নুনের ছিটা দিল। সঙ্গে সঙ্গে পিন্টুবাবু নিজেকে সংযত করতে না পেরে বলেই বসলেন " আমি নিজের যন্ত্রনায় ভুগছি আর তুমি দাঁত বের করে হাসছো"।
- ব্যাস ! আর যায় কোথায়, সেদিন থেকে তার গিন্নির দাঁতগুলির মুখের গহ্বরের আড়ালে আত্মগোপন করলো, সেই থেকে আজ পর্যন্ত তাদের হদিশ পাওয়া যায়নি। গিন্নির হাসির স্মৃতি চারণায় তিনি বললেন, তার স্ত্রীর গজদাঁত ছিল, হাসার সাথে সাথে হাসির সাথে সাথে গজদন্তের হারমোনিতে আর তার সাথে গালের হালকা টোলের সংযুক্তি দেখে ভিতরে ভিতরে ভীষণ আলোড়ন হতো। আজ দীর্ঘ দিন ধরে সেই হাসির অন্তর্ধান মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না।
- তাছাড়া অফিসের বেয়ারা থেকে সহকর্মীরা পিন্টু বাবুকে এড়িয়ে চলে তার এই নিজের অসন্তোষের বাহ্যিক প্রকাশ দেখে।
- এই রকম বহু ছোট বড় ঘটনা টানা ২ ঘন্টা ইন্টারোগেশনের মাধ্যমে বেরিয়ে এলো।
সমস্যা - পিন্টুবাবুর সমস্যা হচ্ছে বাইরে থাকে আসা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যা কিছু দূষিত সংবাদকে নিজের মধ্যে আড়াল না করে, কোন রকম বাছবিচার ব্যতিরেকে, অযাচিত ভাবে ঘরে বাইরে পরিচিত মহলে পরিবেশন করে ফেলা। সেই কারণে এই সমস্যা।
সমাধানের উপায় ( থিওরিটিক্যাল ) - আমরা প্রথমে, অনুভূতিগুলি গ্রহণ করার পর তাকে বিচার বিশ্লেষণ করে সর্টিং করা হয়। পজিটিভ অনুভূতিগুলিকে আলাদা করলে নেগেটিভ অনুভূতিগুলি পরে থাকে।
যেমন, বাসি-পচা খাদ্য অতিথিকে পরিবেশন করতে নেই , ঠিক সেই রকম কোন নেগেটিভ থট কাউকে দিতে নেই। শুধু মাত্র পসিটিভ থিংকিংগুলি পরিবেশন করা যায়। তাতে পারস্পরিক সম্পর্কের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
টাস্ক নম্বর ১ - কোনমাত্রায় পারস্পরিক ব্যবহারকে নিয়ে গেলে পিন্টুবাবুর স্ত্রীর দন্ত প্রকাশিত হবে।
টাস্ক নম্বর ২ - আপডেটেড ব্যবহারের মাধ্যমে অফিসের লোকদের মনোভাব পাল্টানো।
প্রসেস - পিন্টুবাবুর কেস স্টাডি করে " অনুবাদ" এবং " নিজেকে চেনো" নামক থেরাপির ফাঙ্কশনালিটি দেখাবার জন্য সিস্টেমটি ওপেন করলেন।
[পিন্টু বাবুর অফিস থেকে ফেরার পর স্ত্রীর সাথে তার প্রথম ইন্টারঅ্যাকশন হয় ডাইনিং টেবিলে। সেখানে খাবার পরিবেশিত হয়ে থাকে। সেখানে তার স্ত্রীর রান্নার প্রশংসা অথবা নিন্দা এই দুইই ঘটবার সম্ভাবনা আছে। সাধারণত পিন্টুবাবুর মতো অনেকেই রান্নার প্রশংসা করার ক্ষেত্রে ভীষণ একঘেয়ে, তাতে আর যাই হোক রন্ধন প্রস্তুতকারীরা মোটিভেটেড হয় না। সাধারণত সেই শব্দগুলিকে সংযোজন করে বলে থাকেন " তোমার রান্নাটা ভালো হয়েছে"। কিন্তু লক্ষ্য যেখানে স্ত্রীর লুক্কায়িত দন্তের বিকাশ ঘটানো, সেখানে ভাষ্যটির ব্যতিক্রম অবশ্যিই হতে হবে। ]
"অনুবাদ" নামক থেরাপিকে যদি বলা হয় " তোমার রান্নাটা ভালো হয়েছে"- এই কথাটির সাথে হাস্যরস মিশিয়ে আউটপুট দাও।
অনুবাদ থেরাপিটা সঙ্গে সঙ্গে আপনার ওপেন এন্ডেড স্টেটমেন্টটাকে নিয়ে ভিতরকার প্রাইমারি লাইব্রেরি থেকে কোডিং করে সেই কোড নিয়ে মাস্টার লাইব্রেরিতে চলে যায়, তারপর সেখান থেকে কোডের ডিটেলের খোঁজে "হাস্যরসকে পেয়ে যায়, এর পরে হাস্যরসকে মিশিয়ে একটা চেক লিস্ট দিয়ে দেয়। যদি পছন্দ মতো না হয়, তাহলে আবার আপডেট করে। এই প্রসেসটি চলে যতক্ষন পর্যন্ত ব্যবহারকারীর সন্তুষ্টি না আসে। সন্তুষ্টি এসে গেলে সেই লুপ থেকে বেরিয়ে ক্লিন রিপোর্ট পরিবেশন করে।
এবার দেখুন " তোমার রান্নাটা ভালো হয়েছে" এই স্টেটমেন্টেটিকে সিস্টেম অনুবাদ করে কি বলছে --
" রান্না যে একটা ক্লাসিক ছবি হতে পারে, তার ঘ্রানকে যেকোন সুগন্ধির অনুভূতির সাথে এক পংত্তিতে বেঁধে ফেলতে পারে অথবা একটা ফ্রেমে বাঁধানো চোখ ধাঁধানো ছবি হতে পারে বা অন্য আরো অনেক কিছু, যা ইতিপূর্বে অনুভূত হয় নি। অজস্র রঙের মতোই রান্নারও বহু মশলা আছে। যা মাঝে মাঝেই শিল্পীকে বিভ্রান্তও করতে পারে। সেই-ই প্রকৃত শিল্পী যে নিজেকে অচঞ্চল থেকে তার মনের ভিতরে লালিত ছবিকে আঙুলের ছোয়ায় প্রাণবন্ত করে তোলে। তার জন্য ক্যানভাসে একান্ত প্রয়োজনীয় রঙকে যেমন ব্যবহার করে থাকে, তুমিও যেন তোমার খাদ্য রসিকের রসনাকে পরিতৃপ্ত করার জন্য নুন, তেল মশলার সঠিক প্রয়োগে আগুনের কাছে নৈবিদ্য সাজিয়ে আজ তোমার রান্নাকে শিল্পস্তরে উন্নীত করেছো। তুমি আজ রান্নাঘরকে মা-ঠাকুমার দেওয়া দীর্ঘদিনের তকমা থেকে মুক্তি দিয়ে একটা বর্ষ প্রাচীন রান্নাঘরকে ষ্টুডিওতে পরিণত করেছো। প্রশংসার যতগুলি ষ্টার আছে , আজ সেই সব গুলি তোমারই প্রাপ্য"।
এরপরের পিন্টুবাবুর স্ত্রীর প্রতিক্রিয়া শুনলে ভিরমি খাবার জোগাড়। সাবধানে যত্ন করে লুকিয়ে রাখা দাঁতগুলি যেন পাহাড়ের খানা কন্দ পার করে ঝর্ণা ধারার মতো হাসির সাথে একাত্ম হয়ে দুর্বার গতিতে পিন্টু বাবুর হৃদয়ের এপ্রান্তে থেকে ওপ্রান্তে ছুটে বেড়াতে লাগলো। সে এক অনাবিল অনুভূতিতে পিন্টুবাবুর চোখ দুটি বুজে এলো ।
পরে অবশ্য জানা যায় যে পিন্টুবাবু আবার এক সন্তানের জনক হয়েছেন এবং বর্তমানে আনন্দে বিরাজ করছেন।
( টাস্ক নম্বর ২ এর সমাধান সহ অন্যান্য পরের সংখ্যায় )
চলবে ...
বি: দ্রঃ ভালো লাগলে শেয়ার করুন , কমেন্ট করুন , ফলো করুন আর খারাপ লাগলেও কমেন্ট করুন'
৩১/০৭/২০২৩ পর্যন্ত ১৬৭টি ব্লগ পোস্ট করা হয়েছে
আত্মদর্শনমূলক ব্লগ -
- ওপারের সংগীত
- ঐকতান
- সভ্যতার নামে প্রহসন
- নাড়ী ছেড়ার গান
- আত্মত্যাগ কখনো কখনো আত্মহত্যার সামিল হয়
- দলিতের সভ্যাভিমান
- একটি প্রান্তিক মানুষের মৃত্যু সভা
- ২১শে ফেব্রুয়ারীর মূল্যবোধ (১৫২)
নিছক প্রেমের গল্প -
জীবনের সংগ্রামের পাশাপাশি মানুষের সংগ্রামের কথা -
- চে গুয়েভারা দ্য রেভলিউশনারী আইকন অল দ্য টাইম ( ৪টি পর্বে )
পৌরাণিক - বিশ্লেষণমূলক
- আমি মহাভারতের পৃথা (১৭টি পর্বে )
- ব্যাসদেবের জীবনের অপ্রকাশিত ঘটনা
- মহাভারতের রাজনীতি ও নারীদের নীরব বলিদান (৬ টি পর্বে )
- মহাভারতের যাজ্ঞসেনী (৪৬টি পর্বে )
নগর দর্পন -
- ধর্ম ও শাসক
- সমাজের রাজন্যবর্গ
- হালচাল
- সহাবস্থান
- নারদের মর্তে ভ্রমণ ( ১৮+৬=২৪ টি পর্বে )
- মনীষীরা কি আজকের রাজনীতির কাঁচামাল
- ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই এই সুন্দর ভুবনে
- রজ্জুতে সর্প দর্শন
- কুরুক্ষেত্রে একটি বিনিদ্র রাত (১-৪ পর্ব )
নিছক প্রেমের গল্প -
দর্শন ও ইতিহাস আশ্রিত ব্লগ -
- অহংকারের রসায়ন (৮টি পর্ব - এখনো চলছে )
- আসা আর যাওয়া
- সংঘর্ষ
- উত্তর মীমাংসা
- আগামী
- আমরা বাস করি আনন্দে
- সৃষ্টির মুলে দন্দ্ব
- অখন্ড যখন খণ্ডিত হয়
- কোথায় পাব তারে
- গোলক ধাঁধা
- চির যৌবনা
- রূপ ও স্বরূপের লুকোচুরি
- একটি অক্ষরের গল্প
- মহাভারতের যাজ্ঞসেনী (৪৫ টি পর্বে -এখনো চলবে )
- সরণি
- পরম্পরা
- মেলবন্ধন
- সন্ধিক্ষণ
- অনুভূতির বহুগামিতা
- অসুখ
- সংকট কারে কয়
- অন্ধজনে দেহ আলো
- প্রেমহীনতা কি সামাজিক ব্যাধি
- ১৬২ হিউস্টনের ডাইরি (১০ তম পর্ব )
- ১৬৩ রাম কি এখনও বনবাসে আছেন ?
- ১৬৪ হ রে ক রে ক ম বা (১)
- ১৬৫ এক্সটেন্ডেড মহাভারত
- ১৬৬ স্মাইল রিপ্লেসমেন্ট প্রজেক্ট (১ম )
- ১৬৭ হাসির পুনঃস্থাপন (২)
মন্তব্যসমূহ