১৬৮ আমাকে দেখুন
১৬৮ আমাকে দেখুন
হ রে ক রে ক ম বা
পাড়ার চায়ের দোকানে সকালবেলা বেশ ভিড় জমছে ছেলে ছোকড়াদের। ভিড় ঠেলে দেখলাম, হরিদা গুরু গম্ভীরভাবে সবাইকে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বোঝাচ্ছে।
-- দেখ বাপু, তোরা যাই ই বলিস না কেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ব্যাকারণ অনুযায়ী রাজনীতিতে মানুষের মধ্যে জনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভিত্তিই হচ্ছে ইসু।
-- ধরাযাক, রাস্তায় কোন একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে একদল মানুষ একত্রিত হয়ে যায় এবং সেটাকে ইসু করে সাময়িক আন্দোলন অবশ্যি দানা বাধে কিন্তু তাতে কোন নেতৃত্ব না থাকায় অচিরেই সেটি লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এটা তোর আমার মতো 'মব' বা অসংবদ্ধ মানুষের চরিত্র।
ঠিক এখানেই 'মবের' জায়গায় আমাদের পাড়ার নেতা গোবিন্দদা থাকতো, আর যদি তিনি সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিতো, তাহলে অন্য দলের নেতারা আসার আগেই তার দলবল আর পকেটের মিডিয়াদের নিয়ে আন্দোলন করে কাঁচা ইসুটাকে মুহূর্তের মধ্যে পাকিয়ে দিতো।
-- তোরাতো সবাই গোবিন্দদার ব্যাকগ্রাউন্ড জানিস, এই করেই তো পার্টিতে প্রমোশন পেতে পেতে কোথায় পৌঁছে গেল। তবে ভাই, যার যা কোয়ালিটি আছে তাকে তো অস্বীকার করা যায় না। ছোট্ট একটা হিন্ট দিলেই কি অসাধারণ গল্প বানাতে পারে। এই বলে হরিদা বিড়িতে অগ্নি সংযোগ করলেন।
-- এইতো সেদিন গোবিন্দদা তার স্করপিও গাড়িটা আমার সামনে থামিয়ে ডেকে বললেন, এই গাড়িতে ওঠ, এই বলে গাড়ির দরজাটা খুলে পাশে বসালেন।
-- আচ্ছা হরি, তোর মধ্যে অনেক কিছুই ছিল, রাজনীতিটা করলে পারতিস। পুরানো দিনের অনেক কথাই হচ্ছে, এমন সময় গোবিন্দার কাছে একটা ফোন এলো।
-- ফোনটা রেখে, গোবিন্দদা যা বললেন, তার অর্থ হল হাই কম্যান্ড থেকে খবর দিলো যে বর্তমানে একজন সংস্কৃতিবান, রাজনীতির পাঁক যাকে মলিন করতে পারেনি, ভোগ বাসনা তার নৈতিকতার বর্ম ভেদ করে ভিতরে ঢুকতে পারেনি , সব কিছুর মধ্যে থেকেও তার আদর্শের সীমাহীন স্পর্ধা , এককথায় গড় রাজনীতিকদের থেকে সততার প্রশ্নে তার উচ্চতা গগনচুম্বী। সাধারন মানুষের দৃষ্টিকে সততার মানদন্ডে ফেলে অতীত ও বর্তমানের মধ্যে একটা নির্দ্দিষ্ট সীমারেখা এঁকে দিচ্ছে আর সেই মানুষকে নিয়ে আপামর জনগণ থেকে থেকে শুরু করে মিডিয়া এবং সর্ব স্তরের রাজনৈতিক দলের কাছে এখন যারপরনাই প্রশংসিত হচ্ছে। নিন্দার অপর নাম হচ্ছে প্রশংসা। এ হেন, মানুষের পুনরায় সর্বজন গ্রাহ্যতা থেকে মানুষের আকর্ষণকে ঘোরাতে হবে। আর এই দৃষ্টি ঘোরানোটাই হচ্ছে আজকের টাস্ক।
-- গোপনে গোবিন্দদা বললো এইটাই হচ্ছে এই ধরনের শাসকের বায়না। সে সব সময়ে যযাতির মতো অনন্ত যৌবনের পিয়াসী।
গোবিন্দদা ছোট বেলাথেকে কথার চাবুক খেতে খেতে তার বাইরের আস্তরণটা ATM মেশিনের শক্ত কভার হয়ে গেছে। আর বর্তমানে দাদার এ টি এমে আর্টিফিশিয়াল টেকনোলজি লোড করে রেখেছে। পার্টি থেকে এতো ঘন ঘন রিকোয়ারমেন্ট আসে সেখানে অস্থিরমনা উর্ধস্তনদের মনোরঞ্জনের জন্য শুধু কার্ড ঢুকিয়ে যে কোন ভাবনার অপরীক্ষিত সমাধান মুহূর্তের মধ্যে বেরিয়ে আসে আর সেটা সর্ব সমক্ষে বমি করে দেয়। এ যেন যাজ্ঞবল্কের কৃষ্ণ যজুর্বেদ। তিনিতো আর যাজ্ঞবল্ক নন, তাই তার বমনে ভীষণ দুর্গন্ধ। তার প্রমান সংবাদপত্র, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদিতে নেগেটিভ প্রশংসার বন্যা বয়ে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য শুধু মানুষের চোখটা ঘোরানো আর নিঃশব্দে বলা "আমাকে দেখুন" আর কাউকে নয় ।
* * *
এক অচৈতন্য রাজার কথা
রাজার সবে মাত্র জাগ্রত অবস্থা থেকে স্বপ্নময় অবস্থায় প্রবেশ করেছেন , ঠিক তখন দেখছেন চারিদিকে প্রবল বন্যায় দেশ ভেসে যাচ্ছে। বন্যায় ভয় নেই রাজার কিন্তু পরের দৃশ্যটা আরো ভয়ংকর। সাপ, বিছে, চিতা আর বিরোধী মানুষেরা বাঁচার জন্য একত্রিত হয়ে একই গাছে উঠে বসেছে। কত যত্ন করে যৌথ পরিবারের মধ্যে বিভেদ ঢুকিয়ে আলাদা আলাদা ঘর করে দিয়েছিলেন, আর সেই সাজানো বাগানটা যে একে বারেই শুকিয়ে গেলো।
একটা সময়ে দৃষ্টির পিছনের স্নায়ুগুলি ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে সুষুপ্তির( মানুষের সব ইন্দ্রিয় যখন বিশ্রাম নেয়, এখান থেকে সাইলেন্ট স্লীপ শুরু হয় বা তূরীয় অবস্থার আগে) দোরগড়ায় সবে পা দেবে, এমন সময়ে ব্রহ্মা এসে হাজির।
-- দেখ বাপু রাজা, সব জীবই আমার দেওয়া চৈতন্যের আলোতে আলোকিত আর সেই অর্থে তোমার প্রজারা সন্তানসম। সেখানে তোমার পক্ষপাতমূলক আচরণ আমাকে ব্যাথা দিয়েছে। একটা জিনিস আবার বলি , জড়+চৈতন্য = প্রাণী। আমি যদি তোমার চৈতন্যকে ফেরত নিয়ে নিই, তাহলে তোমার এই মিথ্যা অহংকার আর ভেদ বুদ্ধি থাকবে না, এই বলে ব্রহ্মা বেরিয়ে গেলেন আর রাজা ধড়ফড় করে বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠলেন।
-- পরে অবশ্য জানা নেই রাজার সম্বিৎ ফিরে এসেছিল কিনা।
চলবে ...
০২/০৮/২০২৩ পর্যন্ত ১৬৮টি ব্লগ পোস্ট করা হয়েছে
আত্মদর্শনমূলক ব্লগ -
- ওপারের সংগীত
- ঐকতান
- সভ্যতার নামে প্রহসন
- নাড়ী ছেড়ার গান
- আত্মত্যাগ কখনো কখনো আত্মহত্যার সামিল হয়
- দলিতের সভ্যাভিমান
- একটি প্রান্তিক মানুষের মৃত্যু সভা
- ২১শে ফেব্রুয়ারীর মূল্যবোধ (১৫২)
নিছক প্রেমের গল্প -
- বনবিতান
জীবনের সংগ্রামের পাশাপাশি মানুষের সংগ্রামের কথা -
- চে গুয়েভারা দ্য রেভলিউশনারী আইকন অল দ্য টাইম ( ৪টি পর্বে )
পৌরাণিক - বিশ্লেষণমূলক
- আমি মহাভারতের পৃথা (১৭টি পর্বে )
- ব্যাসদেবের জীবনের অপ্রকাশিত ঘটনা
- মহাভারতের রাজনীতি ও নারীদের নীরব বলিদান (৬ টি পর্বে )
- মহাভারতের যাজ্ঞসেনী (৪৬টি পর্বে )
নগর দর্পন -
- ধর্ম ও শাসক
- সমাজের রাজন্যবর্গ
- হালচাল
- সহাবস্থান
- নারদের মর্তে ভ্রমণ ( ১৮+৬=২৪ টি পর্বে )
- মনীষীরা কি আজকের রাজনীতির কাঁচামাল
- ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই এই সুন্দর ভুবনে
- রজ্জুতে সর্প দর্শন
- কুরুক্ষেত্রে একটি বিনিদ্র রাত (১-৪ পর্ব )
নিছক প্রেমের গল্প -
- বনবিতান
দর্শন, ইতিহাস ও রাজনীতি আশ্রিত ব্লগ -
- অহংকারের রসায়ন (৮টি পর্ব - এখনো চলছে )
- আসা আর যাওয়া
- সংঘর্ষ
- উত্তর মীমাংসা
- আগামী
- আমরা বাস করি আনন্দে
- সৃষ্টির মুলে দন্দ্ব
- অখন্ড যখন খণ্ডিত হয়
- কোথায় পাব তারে
- গোলক ধাঁধা
- চির যৌবনা
- রূপ ও স্বরূপের লুকোচুরি
- একটি অক্ষরের গল্প
- মহাভারতের যাজ্ঞসেনী (৪৫ টি পর্বে -এখনো চলবে )
- সরণি
- পরম্পরা
- মেলবন্ধন
- সন্ধিক্ষণ
- অনুভূতির বহুগামিতা
- অসুখ
- সংকট কারে কয়
- অন্ধজনে দেহ আলো
- প্রেমহীনতা কি সামাজিক ব্যাধি
- ১৬২ হিউস্টনের ডাইরি (১০ তম পর্ব )
- ১৬৩ রাম কি এখনও বনবাসে আছেন ?
- ১৬৪ হ রে ক রে ক ম বা (১)
- ১৬৫ এক্সটেন্ডেড মহাভারত
- ১৬৬ স্মাইল রিপ্লেসমেন্ট প্রজেক্ট (১ম )
- ১৬৭ হাসির পুনঃস্থাপন (২)
- ১৬৮ আমাকে দেখুন
ক্রমশঃ
বি: দ্রঃ ভালো লাগলে শেয়ার করুন , কমেন্ট করুন , ফলো করুন আর খারাপ লাগলেও কমেন্ট করুন'
মন্তব্যসমূহ