( ১৮০ ) মিথ্যার বেসাতি আর একরাশ অলীক ধারণা (দ্বিতীয় পর্ব )

(  ১৮০ মিথ্যার বেসাতি আর একরাশ অলীক ধারণা  (দ্বিতীয় পর্ব )   

   


                       আকাশের দিকে  কিছু ছুড়ে ফেললে, সে আবার  ভীষণ যত্ন সহকারে আমাকেই তা ফেরত দিয়ে যায়। শুধু অনুভূতির তারতম্য ঘটে যায়।  কখন দুঃখকে যদি  ছুড়ে ফেলে দিই, তখন সেই-ই আবার আনন্দ হয়ে ফিরে আসে।  আবার যদি আনন্দকে হারিয়ে ফেলি সে আবার দুঃখ হয়ে ফিরে আসে। কর্ম করলে সে অর্থ হয়ে ফিরে আসে।  হতে পারে সেই অর্থ শব্দটি পার্থিব অর্থ অর্থাৎ টাকা-পয়সা  কিংবা অপার্থিব আনন্দও হতে পারে।   বাস্তবে, খানিকটা দৃশ্যময় আর খানিকটা অদৃশ্য যা অনুভূতিপ্রবণ কিন্তু গোটা ব্যাপারটাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, কোন এক জায়গায় তারা একে অন্যের সাথে মিলে যায় , কখন সজ্ঞানে আবার কখন অজ্ঞানে।   ভালো আর মন্দ এই দুইজনই  জন্মেছিল মনের অন্দরে।   উদ্ভূত পরিস্থিতির খেলায় তার রূপের  পরিবর্তন হলো, তাই তাকে ভিন্ন ভিন্ন নামে শুধু সম্বোধন করলাম মাত্র, তাতেই  সে  মূল বস্তুর সাথে বিচ্ছিন্ন হয় না।  এই ভুল বোঝানোর খেলাটাই মায়ার খেলা।   

        সেই কোন এক দিন  থেকে শুরু করেছিলাম জীবন নামক বোঝাটাকে টেনে নিয়ে যাবার   জন্য   কর্ম, উদেশ্য ছিল জীবিকার জন্য অর্থের প্রয়োজনীয়তা। একদিন সেই অর্থই জীবনের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠলো, জ্ঞানে ও অজ্ঞানে। অর্থ তো মাধ্যম তার চালিকা শক্তি ছিল কামনা বা বাসনা। তাকে বাস্তবে রূপ দেবার জন্য করতে হবে কর্ম। এটাই ইন্ট্রিগ্রিটি, পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত।  আমার ক্ষেত্রে কেটে  গেলো জীবন থেকে  ৪৮টা বছর। হিসাবের খাতা নিয়ে পাওয়া আর না পাওয়ার হিসাব করা হয় উঠেনি। জীবনের স্টিয়ারিংটা তখন জীবিকার হাতে, তাই সে যেখানে নিয়ে গেছে, সেখানেই গেছি।  মাঝে মাঝে যে অবসরের কথা মনে হতোনা, সেটা অস্বীকার করতে পারিনা।  

            আজ  কিন্তু অখন্ড অবসর।  প্রাক কর্মময় জীবনটা শুরু করার আগে, পারিপার্শিক চেহারাটা ভীষণ নজরে পড়তো। মনের সাথে অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলির সে যে কি সখ্যতা, তা আর বলে বুঝানো যেত না।  

        পাশের ঘরে থাকা ভাবনা জোর করে সব কিছুকে কেড়ে নিয়ে  আকাশ পানে   উড়ে যেত আর ঘরে বসে  মনটা তখন ভাবনার ফল প্রসবনের জন্য  হা-পিত্যেশ করে  বসে থেকে থেকে কখন যে ঘুমিয়ে পড়তো তা নিজেই জানতো না। তাছাড়া, আর যেগুলি নিয়ে  একান্ত সময় কাটতো, সেটা এখনো মনে পড়ে।          

         অন্তত অবসরে কখন বাড়ীর ছাদে শুয়ে শুয়ে  চাঁদিনী রাতে হালকা মেঘ আর জোছনার লুকোচুরি দেখতে বেশ লাগতো। আবার বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের দিনে   নির্জন পিচের রাস্তার উপর খেলে যাওয়া  হালকা ধুয়াশা উড়ে যাওয়া  আমাদের তীক্ষ্ণ   নজরকে  এড়াতে পারতো না। বর্ষার আকাশে বিদ্যুতের ঝলকানিতে খেলার মাঠ ছেড়ে নির্ভয় স্থানে আশ্রয় আর বসন্তকালের দখিনা বাতাসের স্মৃতি বিজড়িত অনুভূতিগুলি, মনকে ভীষণ আলোড়িত করতো।     ইন্দ্রিয়গুলি কতনা খবর শেয়ার করতো মনের কাছে। তার স্বার্থ অবশ্যিই ছিল, তার সুখই তো কাম। সেই নিয়ে মন কখন ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়তো আবার অলস ভাবে তাড়িয়ে তাড়িয়ে মজা মারতো। সেই কামই একদিন উদ্ভুদ্ধ করলো কর্মের জন্য।    বায়ু বিনা যেমন জীব বাঁচেনা তেমনি  অর্থ বিনা কাম বাঁচেনা  আর কর্ম বিনা অর্থ আসেনা।  

         বেশ কয়েকবছর ধরে ভাবছিলাম, একদিন তো  জীবিকার সাথে জীবনের  লড়াইটা বন্ধ হবে, তখন কি করবো ? নিজের মনের ভিতর থেকে উত্তরটা বেরিয়ে এলো, দুটোই তো জায়গা আছে,  একটা হচ্ছে জীবন আরেটা হচ্ছে জীবিকা। এতদিন  সাহস ছিল না যে , দুটিকে পাশাপাশি নিয়ে চলবো। একজনকে শ্রেষ্ঠ আসনটা দিতেই হতো শুধু মাত্র বাসনাকে তৃপ্ত করার জন্য।  সময় বয়ে যায়, সময়ের সাথে সাথে বাসনাকে বৃদ্ধত্ব এসে গ্রাস করে ফেলে।  তখন সে মন্থরতায় ভোগে  আর সেই সুযোগে প্রবৃত্তিলক্ষণ   ধর্মের জায়গাটা নিবৃত্তিলক্ষণ  ধর্ম এসে হানা দেয়।   

         জীবন ও জীবিকা উভয়েই একে অপরের উপর নির্ভরশীল বা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তবে মাঝে মাঝে একজন অন্যজনের উপর কতৃত্ব করে বসে।  সেই জট ছাড়াতে গিয়ে মন বলল;   অনেক হয়েছে , এবার জীবনের জন্য  ভাবো।   

          হঠাৎ  একদিন বর্তমানে দাঁড়িয়ে পিছন ঘুরে  জীবনটাকে দেখার  চেষ্টা করলাম।  তাতে স্বল্প আলোয়  যেটা বোধগম্য হলো,  নতুন অভ্যাসে একটু একটু করে অভ্যস্ত হবার কারণে   জীবনের মূল্যবোধটা আড়াআড়ি দুই ভাগ হয়ে গেছে।  অর্থাৎ এতদিন  যে জাগতিক   ঘটনাবলী মনের উপর প্রভাব জমিয়ে বসেছিল, সে ধীরে ধীরে   দূরে চলে যাচ্ছে  আর তার সেই শূন্যস্থানটা ভীষণ আস্তে আস্তে  পূরণ করতে  চলেছে আত্মানুসন্ধান।   

                সব ধর্মই মানুষের দ্বারা তৈরি সুতরাং তার মধ্যে মানুষের দোষ-গুণগুলি তো  থাকবেই।   তাই তাকে গ্রহণ ও বর্জনের ক্ষেত্রে অন্ধ বিশ্বাস অপেক্ষা বিচার বিশ্লেষণের উপর জোর  দেওয়াটাই  আজকে  প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।  

           আবার একদল মানুষ ঐ জীবিকার প্রয়োজনে ধর্মকে প্রোডাক্ট বানিয়ে  বেচাকেনা করে।  আর যেখানে বিশেষ উদ্দেশে মূলধন বিনিয়োগ করে প্রোডাক্টটা কেনে, সেখানে তারা লাভতো রাখবেই।  তাদের বয়ে গেছে সাধারণ মানুষের কথা ভাবতে। বরং আজকে সাধারণ মানুষের সময় হয়েছে তাদের রূপগত পরিবর্তনের ভাবনাটা ভাবার।  প্রশ্ন হচ্ছে সেটা কি রাজনৈতিক না সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে আসবে।  আমার মনে হয় যতই রাজনৈতিক দলগুলি লাফালাফি করুক না  কেন, যাদের নিয়ে দেশ ও সমাজ সেই সাধারণ মানুষকে ঘুম থেকে না তুলে তাদেরই সমাজ পরিবর্তনের ভাবনাটা  কিন্তু ভাবের ঘরে চুরির সমতুল্য। ইতিহাস তার সাক্ষ্য বহন করছে। ভোগবাদ ভীষণ গভীরে তার শিকড় বসিয়ে ফেলেছে, তার জন্য নতুন ভাবনা ভাবতে হবে। 


 ক্রমশঃ 

ব্লগার -রবীন মজুমদার 
তারিখ - ২/১২/২৩
কলিকাতা 
০২/১২/২৩ পর্যন্ত   ১৮০ টি  ব্লগ পোস্ট করা  হয়েছে 
rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যেতে পারে। 

আত্মদর্শনমূলক ব্লগ - 

  • ওপারের সংগীত 
  • ঐকতান 
  • সভ্যতার নামে  প্রহসন 
  • নাড়ী ছেড়ার গান 
  • আত্মত্যাগ কখনো কখনো আত্মহত্যার সামিল হয় 
  • দলিতের সভ্যাভিমান 
  • একটি প্রান্তিক মানুষের মৃত্যু সভা 
  • ২১শে ফেব্রুয়ারীর মূল্যবোধ  (১৫২)
নিছক প্রেমের গল্প -
  • বনবিতান 
জীবনের সংগ্রামের পাশাপাশি  মানুষের সংগ্রামের কথা   -
  • চে গুয়েভারা দ্য রেভলিউশনারী আইকন অল দ্য টাইম ( ৪টি পর্বে )
পৌরাণিক - বিশ্লেষণমূলক  
  • আমি মহাভারতের পৃথা (১৭টি পর্বে )
  • ব্যাসদেবের জীবনের অপ্রকাশিত ঘটনা 
  • মহাভারতের রাজনীতি ও নারীদের নীরব বলিদান (৬ টি পর্বে )
  • মহাভারতের যাজ্ঞসেনী (৪৬টি পর্বে )
নগর দর্পন -
  • ধর্ম ও শাসক 
  • সমাজের রাজন্যবর্গ 
  • হালচাল 
  • সহাবস্থান 
  • নারদের মর্তে ভ্রমণ ( ১৮+৬=২৪ টি পর্বে )
  • মনীষীরা কি আজকের রাজনীতির কাঁচামাল 
  • ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই এই সুন্দর ভুবনে 
  • রজ্জুতে সর্প দর্শন 
  •  কুরুক্ষেত্রে  একটি  বিনিদ্র রাত (১-৪ পর্ব )
নিছক প্রেমের গল্প -
  • বনবিতান 
দর্শন, ইতিহাস ও রাজনীতি  আশ্রিত   ব্লগ -
  • অহংকারের রসায়ন (৮টি পর্ব - এখনো চলছে )
  • আসা আর যাওয়া 
  • সংঘর্ষ 
  • উত্তর মীমাংসা 
  • আগামী 
  • আমরা বাস করি আনন্দে 
  • সৃষ্টির মুলে দন্দ্ব 
  • অখন্ড যখন খণ্ডিত হয় 
  • কোথায় পাব তারে 
  • গোলক ধাঁধা 
  • চির যৌবনা 
  • রূপ ও স্বরূপের লুকোচুরি 
  • একটি অক্ষরের গল্প 
  • মহাভারতের যাজ্ঞসেনী (৪৫ টি পর্বে -এখনো চলবে )
  • সরণি 
  • পরম্পরা 
  • মেলবন্ধন 
  • সন্ধিক্ষণ 
  •  অনুভূতির বহুগামিতা
  • অসুখ 
  •  সংকট কারে কয় 
  • অন্ধজনে দেহ আলো   
  • প্রেমহীনতা কি  সামাজিক ব্যাধি  
  • ১৬২ হিউস্টনের  ডাইরি (১০ তম পর্ব )
  • ১৬৩   রাম কি এখনও  বনবাসে আছেন ?
  • ১৬৪ হ রে ক রে ক  ম বা (১)
  • ১৬৫ এক্সটেন্ডেড মহাভারত 
  • ১৬৬  স্মাইল রিপ্লেসমেন্ট প্রজেক্ট (১ম )
  • ১৬৭  হাসির  পুনঃস্থাপন (২) 
  • ১৬৮ আমাকে দেখুন 
  • ১৬৯  বিয়ে কি নারীর  নিরাপত্তার না শোষনের পাকাপাকি হাতিয়ার ?
  • ১৭০ আর কত গুন থাকলে তাকে  জাতীয় নায়ক  বলা যায়  
  • ১৭১  ভাবমূর্তির রকম ফের-
  • ১৭২  জাতের নামে বজ্জাতি (আই ওপেনার )
  • ১৭৩ কুরুক্ষেত্রে  একটি  বিনিদ্র রাত (৫ম  পর্ব )
  • ১৭৪ রঙ্গমঞ্চের ওপারে 
  •  ১৭৫  কেন এ ছদ্মবেশ -
  • ১৭৬ কেন এই হিংসাদ্বেষ
  • ১৭৭  নফরত কি দুনিয়া -
  • ১৭৮  মিথ্যার বেসাতি আর একরাশ অলীক ধারণা  (প্রথম পর্ব )  
  • ১৭৯  হিউস্টনের  একটি রাত 
  • ১৮০ মিথ্যার বেসাতি আর একরাশ অলীক ধারণা (দ্বিতীয় পর্ব )

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়