(১৮৩) গ্রিনরুমের অন্দরে

 

(১৮৩) গ্রিনরুমের অন্দরে 

সংক্ষেপে আগের সংখ্যা "গুনগুনানী"র  পর - তারকাসুরের দাপটে ত্রিলোক থর থর করে কাঁপছে। ইন্দ্রের নেতৃত্বে দেবতারা এর প্রতিকারের জন্য ব্রহ্মার দ্বারস্থ ।  একমাত্র উপায় ব্রহ্মার বরে বলীয়ান তারকাসুরের ঘোষিত মৃত্যু একমাত্র যোগী শিবের সন্তানের দ্বারাই হবে।   কিন্তু কিভাবে এই যোগীকে সংসারের প্রতি আকর্ষিত করা যায়। আবার সেই নারীকেই  টোপ বানিয়ে শিকারকে বাগে আনার কৌশলের ইতিবৃত্ত নিয়ে এই সংখ্যা।  



চক্রান্ত যুগে যুগে  

চক্রান্তের প্রাথমিক পর্বে কামদেবের যূপকাষ্ঠে যোগী শিবকে  বলি দেবার জন্য দেবতারা প্রস্তুত।  শিবের যোগী হিসাবে আত্মপ্রকাশের  দিনগুলি সেইদিনগুলির নিরিখে  কোন বিচ্ছিন্ন  ঘটনা ছিল না। 

সৃষ্টির প্রতি ব্রহ্মার নিষ্ঠা 

ঘটনাক্রমকে উপলদ্ধির  জন্য আরেকটু পিছনে ফিরে যেতে হবে। সৃষ্টির আদিতে   ব্রহ্ম ছিলেন একা । যেই না সৃষ্টি শুরু হল তখন তাকে তিনটি উপাধি দিয়ে আলাদা করা হল যথাক্রমে  সত্ব , রজঃ ও  তম  নামকরণের মাধ্যমে। একই অঙ্গে বহুরূপ  ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর।  

সৃষ্টিকে রূপ দেবার জন্য ব্রহ্মার যারপরনাই হয়রানির কাহিনী পুরাণে উল্লেখিত আছে। সনক, সনন্দন, সনাতন ও সনৎকুমার নামে  চার চারটি মানসপুত্র সৃষ্টি করলেন।  উদেশ্য মহৎ, তারা ব্রহ্মার ইছানুসারে সংসারী হবেন এবং সৃষ্টি প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবেন।  ব্রহ্মার আশায় জল ঢেলে তারা কমণ্ডলু তুলে নিয়ে সংসার ছেড়ে বনে চলে গেলেন।  

ব্রহ্মা ছিলেন নিজের উদ্দেশ্যকে  বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে একজন  নিরলস কর্মী।  পুনরায় তিনি সৃষ্টি করলেন,  বর্তমানের মানসপুত্ররা পূর্বেকারদের চার সন্তানদের মতো বৈরাগ্যের  কঠোর নিদর্শন না দিলেও, গৃহস্থধর্ম পালনের ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করলো। কার্যতঃ ব্রহ্মার আশার গুড়ে ছাই পড়লো।  এইরকমই  ছিল তৎকালীন ছবি।  বনে, জঙ্গলে গিয়ে ফলমূল খেয়ে জীবনধারণ করা  আর ধ্যানের মাধ্যমে স্বর্গীয় আনন্দ পাওয়া ছাড়া, তাদের  আর কোন কাজ ছিল না।  

 বিফলতা থেকেই  স্বার্থকতা 

বোধহয়, বারবার ঠকতে ঠকতে ব্রহ্মা ঘটনার গভীরে অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন।  তারই ফলস্বরূপ প্রাণীর দেহমনে কামিনী-কাঞ্চনের ভাবের ( কামিনী এখানে ভোগের অপর নাম আর কাঞ্চন হচ্ছে ভোগ করতে গেলে অর্থের প্রয়োজন হয় আর ধর্মের পথে অর্থ উপাৰ্জন করতে গেলে করতে হয় কর্ম )  সঞ্চার।  একসময় ভোগের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মালে ভোগের নিবৃত্তি অর্থাৎ মোক্ষের প্রতি আকর্ষণ  বাড়বে। এই চূড়ান্ত  মুসাবিদা( প্রোটোকল) অনুসরণ করলে  সংসার আকর্ষণীয়  হয়ে উঠবে।   

 ইতিবৃত্ত 

        শিবের অন্য নাম নীলকণ্ঠ। ভারতীয় পুরাণে  নীলকন্ঠ হিসাবে শিবের পরিচিতির ইতিহাসটি সর্বজনবিদিত। একদিন শুরু হলো,  দেবতা আর অসুরের  মধ্যে প্রচন্ড এক যুদ্ধ। কারা সমুদ্র মন্থন থেকে অমৃত পান করে  অমরত্বের  গৌরব অর্জন করবেন। কামনার সাথে পাওনার চিরকালীন দ্বন্দ , ব্যতিক্রম হলোনা এক্ষেত্রেও, কামনার ইপ্সিত অমৃত হারিয়ে গিয়ে সমুদ্র থেকে উঠতে লাগলো  কালকূট বিষ। সেই বিষের প্রভাবে সমগ্র সৃষ্টি অবিশ্বম্ভাবী ধংসের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। সেই বিষকে বোতল বন্দী না কোরতে পারলে সমগ্র  বিশ্বের সৃষ্টিকে ধংসের হাত থেকে রক্ষা করা যাবেনা। সৃষ্টির এই দুর্যোগকে মোকাবিলা করতে এগিয়ে এলেন শিব  এবং সেই বিষকে পান করে   আসন্ন ধংসের হাত থেকে সৃষ্টিকে রক্ষা করলেন। তাই তিনি হয়ে গেলেন নীলকণ্ঠ। 

পুরাণের কাহিনীগুলিতে রূপকের ছড়াছড়ি। সঠিকভাবে অনুধাবন  করতে না পারলে, তার মধ্যে থেকে পাঠোদ্ধার করা অসম্ভব। 

    এই প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের ব্যাখ্যা,    যে সমুদ্র মন্থন করে যে বিষ উঠল, সে আর অন্য কিছু নয়, সেটি হল মায়ার সমুদ্র।  সেই বিষের মধ্যে আছে রূপ, রস আর গন্ধের ( তন্মাত্র) মায়া।  সংসার সেই মায়ার আবরনে ঢাকা। আর যেটা উঠে এলো সেটি হচ্ছে ইন্দ্রিয়ভোগ্য নানান রকমের বস্তু। সেটি হচ্ছে ইন্দ্রিয় সুখের লোভ আর সেই লোভ হচ্ছে সাংঘাতিক বিষ।  আত্মজ্ঞানের পক্ষে সেটি বিশাল বাধা। 

        এহেন, শিবকে মদনবানে আহত করা ভীষণ কঠিন কাজ। লক্ষভ্রষ্ট হলে শিবের রোষ থেকে ধংস অনিবার্য।  সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২২,০০০ ফুট উচ্চতায় কৈলাসে তার কর্মভূমি।  আর সেখানেই হিমালয় কন্যা পার্বতীকে প্রজেক্ট করলো দেবতাবাহিনী।  সেই দেবী কি পারলো শিবকে মায়ার বাঁধনে বাঁধতে ? [পরবর্তী সংখ্যায় ]

 ক্রমশঃ 

ব্লগার -রবীন মজুমদার 

তারিখ -১১/১২/২৩

rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে। 



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়