(১৮৬) অমৃতের সন্ধানে

(১৮৬) অমৃতের  সন্ধানে 

পূর্ববর্তী পর্ব  (১৮৫) পুরাণের গতিশীলতার পর 

        আজকের মতো দিনটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে আগামী দিনের অনিশ্চয়তার মেঘটা মনের আকাশটাকে প্রতিদিনের মতো সুখ-শান্তিকে আড়াল করে রাখে।  আশা ভরসার ক্ষীণ আলো যদিবা সেই মেঘকে ভেদ করে বর্ষিত হয়, তাতে করে আর যাই হোক শান্তির বাতাবরণ  খুঁজে পায় না।  কিন্তু অবিরাম এই অন্বেষণ জারি থাকে আর দিনের শেষে খালি হাতে ফিরতে হয়। মনটাকে নিয়ে বড়ই বিড়ম্বনা। তাই চিন্তা যে দু-দণ্ড  শান্তির সাথে আনন্দঘন  আলাপ করবে তার কোন যো নেই।  

        নিত্য দিন এই অভ্যাসে অভ্যস্ত পথিকের অনুসন্ধান থেমে নেই। পথের দিশা না পেয়ে  ক্লান্ত পথিক ধর্মের দরজায় গিয়ে ধীরে ধীরে করা নাড়ে। দরজার দ্বার উন্মুক্ত হয়।  একদল তথাকথিত পেশাদার ধর্মগুরু ও তাদের নিচে থাকা মহুরীর দল ব্যাতিক্রমী পোশাকে আবির্ভূত হয়ে সব ধরনের সমাধানের উপকরণগুলিকে একটি  ডালায় সাজিয়ে এমনভাবে আহবান জানাচ্ছে, যেন তারা  দীর্ঘ সময় ধরে তারই  জন্যই অপেক্ষা করছিলো। এর অজস্ত্র উদাহরণ বেদে আছে।  স্বল্পপরিসরে তার বর্ণনা করা যাবে না। কি উদ্দেশ্যে আছে, সেটাও বর্ণিত আছে। 

        অনন্তকাল ধরে মানবসমাজ এই অবস্থার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। বাস্তবের এই অসহ্য মানসিক বেদনা থেকে নিজেকে ক্ষনিকের জন্য  ভুলে থাকতে ঠাকুর-দেবতার চরণে নিজেকে অর্পণ করে। এযেন, মাতালের মদ্যপান করে সাময়িকভাবে নিজ অবস্থান ভুলে থাকার মতো। জীবন সমুদ্রে ভেসে চলা সাঁতারু, ক্লান্ত হয়ে পাড়ে উঠে খানিকটা দম  নিয়ে আবার সেই বিপদসংকুল পথে যাত্রা শুরু করার মতো।   সচেতনভাবে  ধর্মভ্যাসে মনের উপর জমে থাকা ময়লা দূর হয় ঠিকই কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের ধর্মের  ভিত্তিটা শুধুমাত্র বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে আছে।  


        আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনের সমস্যাকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে , অপরিমিত বাসনাই সব বেদনার মূল সূত্র।  আবার , এই জায়গা থেকে মানুষের মুক্ত হওয়া কঠিন, কেননা এটি ইনবিল্ট, জন্মের সাথে সাথে সত্ব, রজঃ ও  তম এই তিনগুণের অধিকারী মানুষ হয়ে থাকে।  চৈতন্যই একমাত্র মুক্তির পথ।  যাকে অর্জন করতে নিরবিচ্ছন্ন সাধনার প্রয়োজন।  জীবনের বেঁচে থাকার যুদ্ধের মধ্যে সদাই নিয়োজিত মানুষ নিজেকে চেনার অবসর খুঁজে পায় না।  

     মানুষ নিয়ে যারা কারবার করে তারা এই পরিস্থিতি সম্পর্কে ভীষণ ওয়াকিবহাল। যুগে যুগে একদল মানুষ এই অবস্থা থেকে মানবজাতিকে মুক্ত করতে বার বার এগিয়ে এসেছে আবার আরেকদল মানুষের এই দুর্বলতার সুযোগ নেবার এক পরম্পরার সৃষ্টি করেছে। 

       দূরদর্শীসম্পন্ন পুরাণের রূপকারগণ সাধারণ মানুষের রুচি ও গ্রহণযোগ্যতাকে মাথায় রেখে  রূপকের যথেচ্ছ ব্যবহারে মাধ্যমে আকর্ষণীয় করে পাঠকের রসনাকে তৃপ্ত করে, তাদের মধ্যে ধর্মভাবকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করে গেছেন। 

 ক্রমশঃ 

ব্লগার -রবীন মজুমদার 

তারিখ -২২/১২/২৩

rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়