(১৯০) সময়ের গল্প

 (১৯০) সময়ের গল্প 


ঋগ্বেদের সাম্য ভাবনা 

ভারতের  প্রবহমান সংস্কৃতির প্রবক্তা বেদের অবৈরিতার মন্ত্রের  সূত্র ধরে বিশ্বকবি ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে তার সৃষ্টির  মূল ভাবনাকে   আন্তর্জাতিকস্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন।  তার  স্বদেশ পর্যায়ের রচনা -   "বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু , বাংলার ফল" -   প্রার্থনাটি  যেন দেশ, কালকে অতিক্রম করে এক চিরন্তন আবেদনে রূপান্তরিত হয়েছে।  

এই ভাবনাটির পিতৃত্বের যথার্থ দাবিদার বললে ভুল হবেনা যে ,ঋগ্বেদের দশম মন্ডলে উচ্চারিত এই বিশ্ব মিলনের মন্ত্রের সাথে। 

আজ থেকে ৫০০০ বছর আগে তাঁরা বুঝতে পেরেছিলো অনৈক্য নয় ঐক্যই মানুষের একমাত্র বেঁচে থাকবার উপায়। তাই তাদের   উদাত্ত কন্ঠে  উচ্চারিত হয়েছিল সেই মিলনের কথা  - " এই পৃথিবীর সকল মানুষ তোমরা পরস্পর হাতে হাত মিলিয়ে চলো , তোমাদের আসল শক্তি সঞ্চিত আছে সেই অভিন্ন বন্ধনীতে  , তোমাদের হৃদয়তন্ত্রিতে বেজে উঠুক সেই মিলনের গান, একের অন্তরের আনন্দঘন আর বিষাদছায়ার মুহূর্তটি যেন প্রতিধ্বনিত হোক সমগ্র মানবজাতির অন্তরে ,  কথায় আর কর্মের বিরোধকে চিরকালীন  দাও বিদায় ,  লহো বীনা আর সেই সুরে ঝংকৃত হোক তারে তারে, একই লয়ে সেই চিরন্তন বিশ্ব মিলনের সুর তাতেই সাধিত হবে  সমগ্র মানবজাতির  কল্যাণ। " 

এটাই ভারতবর্ষের সংস্কৃতি - বিভেদ নয় ঐক্যই চাই। যাঁরা চায়না তারা তারা নিশ্চয়ই স্ববিরোধী অথবা অজ্ঞানী , এখানেও প্রার্থনার প্রয়োজন জ্ঞানের দেবতাকে জাগ্রত করার।  

 আমি অন্ধকারের যাত্রী, প্রভু আলোর দৃষ্টি দাও (ঋগ্বেদে ঊষার বন্দনা)

 ঋগ্বেদের দশমমন্ডলের ৪৯তম সূক্তে প্রার্থনা করছে ঊষাকে। অচৈতন্য থেকে চৈতন্যে উত্তরণের জন্য সেদিন ব্রাহ্মণেরা যজ্ঞানুষ্ঠানের পূর্বে জলে নেমে ঊষার উদ্দেশে প্রার্থনা করে বলতেন- " হে উষা, তোমার জন্য প্রতীক্ষার বিলম্বে  আমরা সবাই ভীত, তুমি এসে আমাদের জীবন থেকে অন্ধকারটাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে আলোকিত করো, দূর করো  সব অবাঞ্চিত ভয়কে।   তোমার আগমনে এই বিশ্বের যত সব অলস প্রাণিকুল জেগে উঠুক,  পাখিরা তার ডানা মেলে দিক অনন্তের পানে,  প্রতিদিন তোমার এই নিরলস আগমনে মর্তের প্রাণীরা  উজ্জ্বল আলোকে প্রকাশমান হোক "।  
যেওনা যেওনা রজনী লয়ে তারা দলে  (ঋগ্বেদে রাত্রির বন্দনা )

রাত্রি কখনো একা আসেনা, সঙ্গে নিয়ে আসে একরাশ ক্লান্তি, বেশ একটা ভয়ের অন্তঃস্রোত , গভীর ঘুমের সম্ভাবনা আর তার সাথে কতনা স্বপ্নের ফুলঝুরি।  কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে সেদিনের রাত্রিগুলিতে বেশ ভয়ের পাল্লাটা ভারী ছিল। 
সূর্যদেব ধীরে ধীরে যখন তার সারা দিনের রাজপাট গুটিয়ে গৃহমুখী, হে রাত্রি !তখন তুমি গুটি গুটি পায়ে সারা আকাশের দখলদারী নিয়ে নাও। ঘনিয়ে আসে অন্ধকার, ইত্যাবসারে তুমি নিজেকে প্রস্তুত করো রহস্যময়ীরূপে, বিস্তীর্ন আকাশে ছাড়িয়ে আছে কতনা উপকরণ , তাই   তোমার প্রসাধনের  কোন বিরাম নেই, একের পর এক নক্ষত্ররা তোমার নিরাভরণ গলায় মুক্ত  খচিত হারের ন্যায় শোভা বর্ধন করছে। একী ! তুমি যে ক্রমেই মায়াবিনী  হয়ে উঠছো।  মর্তের প্রাণীরা প্রতিদিনের মতো তোমার আগমনে বাধ্য সন্তানের মতো গৃহকোণে গিয়ে তোমার দৃষ্টি থেকে নিজেদের আড়াল রাখে। 
আসলে, তোমার এই  রূপের তাড়নায়  মর্তের প্রাণিকুল যেন মূর্ছনা গিয়ে নিজ নিজ  অন্তঃপুরে আশ্রয় নিয়েছে, পাছে যদি তোমার নজরে পড়ে  যায়। 
হে রাত্রির দেবী !  তুমি আমাদের রক্ষাকর্ত্রী। তোমার করুণা ছাড়া হিংস্ত্র প্রাণী আর চোরদের উৎপাত থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখতে পারবো না।  

ক্রমশঃ 

ব্লগার -রবীন মজুমদার 

তারিখ -০৩/০১/২৪

rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়