শনিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২৪

(১৯৮) দোলাচলে রাধা কৃষ্ণপ্রেমে -[ পি ৩ ]

 (১৯৮)  দোলাচলে রাধা কৃষ্ণপ্রেমে-[ পি ৩ ]


সঙ্গ পাই সবাকার লাভ করি আনন্দের ভোগ -

অপ্রতিরোধ্য গতিতে প্রাণের নিমন্ত্রনে অসীম আকাশ থেকে প্রেম, বর্ষনের ধারার মতো এই  পৃথিবীতে সে একদিন ঝরে পড়েছিল।  সেদিন  ছিল মহাপ্লাবনের মতো  আদি এক প্রস্রবন, যে মনের গহনে  গিয়ে চিত্ত, বুদ্ধি ও অহংকারের সাথে আন্দোলিত হয়ে  অকল্পনীয় এক সুরের মূর্ছনার রূপে ঝরে পড়েছিল।   সেই সুরের সাধনায় মগ্ন  কবিরা নানান  দিক থেকে তাদের অব্যক্ততাকে অকৃপণভাবে ব্যক্ততায় উন্মুখ করে দিয়েছে  এই   বিশ্ব চরাচরে , শুধুমাত্র নিজ আনন্দের  ভাগিদার  হিসাবে। 

যে প্রেম পথ মধ্যে পেতে ছিল নিজ  সিংহাসন -

 আঁচল পেতে যাঁরা সেই অঞ্জলি গ্রহণ করেছিল, তার মধ্যে কবি জয়দেব একজন।  অবিনস্ত হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট কুড়ি গুলি একত্রিত হয়ে তার সংবেদনশীল অঙ্গ প্রতঙ্গকে উত্তেজিত করে তুললো। সেটাই প্রতিধ্বনিত হলো তার  লেখনীতে  ছড়িয়ে পড়লো সারা বিশ্বময়. আর সেই প্রস্ফুটিত  ফুলের সুবাসে মেতে উঠলো এই ভুবন। গীতগোবিন্দ তারই  প্রতিফলন।  জয়দেব এহেন যেন অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী শ্রীকৃষ্ণের লীলার সাথে।   বিজ্ঞান ছাড়া পাঠক যা কিছু জানে, তার পিছনে থাকে কবি-সাহিত্যিকদের অভিজ্ঞতার অবদান। অন্যের অভিজ্ঞতাই আমাদের জানার বুনিয়াদ।      

জীবনের আনন্দ থাকে শুধু স্বল্পক্ষণ, জীবনের বেদনা থাকে সারাটি জীবন -

 ক্ষণে সফল, ক্ষণে বিফল, তিনি সেই  একজনই, যিনি রক্তমাংসের মানুষের প্রতিনিধি।  যিনি শয়নে স্বপনে  কৃষ্ণ চিন্তায় বিভোর। হৃদয়ে যাঁর অনুপস্থিতিতে  সঞ্চারিত হয় বিরহ  আর আবির্ভাব পরিণত হয় স্বর্গীয় অনুভূতিতে। সেই নিত্য  নিবেদিত প্রাণের অধিকারী, তিনিই সেই  রাধা। জীবের এই দুঃখ থেকে মুক্তির যোজনাই ভারতীয় দর্শনের অভিমুখ, এটাই ভারতীয় অধ্যাত্বিকতা। 

মায়ার ছলনে ভুলি হেথায় 

অপূর্ণতার বেদনার অনুভব থেকে পূর্ণতার স্বাদ পেতে গেলে, তাকে অবশ্যই কৌতূহলী করে তুলবে অপূর্ণতার বেদনার সূত্রটা কোথায় খুঁজতে ।  তীব্র বাসনার গর্ভে তার জন্ম আর সেই নবজাতকে নিয়ে সর্বদাই সংশয়, তাকে  হারিয়ে ফেলার।  বাসনার ক্ষুদ্র ভুবনটা শুধু সংকীর্ণতার মধ্যেই  সীমাবদ্ধ, তারই মাঝে পূর্নতাকে  খোঁজার চেষ্টা ব্যর্থ্যতার নামান্তর।  মনুষ্য যে  বারবার সেই আবর্তে পরে কামনা বাসনার  বস্তুকে না পেলে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হবে , সেটাই বাসনার পরিণতি এবং  জীবন যন্ত্রণার উৎপত্তি।  তবুও মানুষ যে খুঁজে যায়, সেটাই মায়া। 
( বি.দ্রঃ ভারতীয় দর্শনে ' মায়া '  শব্দটির অবস্থান শুধুমাত্র কল্পনায়, সেই ধারণাটা উপলদ্ধি করে  আজকের দুনিয়াতে  ব্যাপক প্রয়োগ হয়েছে  ' ভার্চুয়াল ' শব্দটির মধ্যে দিয়ে । ) 

 
আমি কভু প্রশান্ত কভু অশান্ত 

 রাধার  কৃষ্ণকে না পাওয়ার ব্যার্থতা থেকে জন্ম নেয় এক ভ্রান্ত ধারণার। সম্পর্কের  বুনিয়াদ যেখানে বাসনার উপর নির্ভরশীল, তাই তার মনে হয় তার প্রাণপুরুষটি বৃন্দাবনে অন্য কোন নারী পরিবেষ্টিত হয়ে লীলায় এমনিই মত্ত, রাধার মতো বোনাফাইড প্রেমিকাকে ভুলে গেছে। বাসনা ভীষণ নির্মম সে তার নিজস্বতা ত্যাগ করতে পারেনা ,  যেমন রাধা তার নারী-পুরুষের প্রেম ভাবনাকে  প্রতিস্থাপন করেছে শুধুমাত্র প্রেমদিয়েই, অবশ্য সেখানে তার পরিবর্তে অন্য কোন নারী উপস্থিত, কিন্তু প্রেম, সে তো গতিময়, তাকে ধরে রাখে - কার সাধ্যি!   

রাধা সত্যিই কি কৃষ্ণকে খুজছিলো - 

রাধার প্রেমচেতনা ধীরে ধীরে সুক্ষ থেকে সূক্ষতর হোতে লাগলো। নিজ অন্তরের অন্তরতম প্রদেশ থেকে উচ্চারিত শব্দ মুহূর্তে তার ধারণাকে পাল্টে দিলো। উপলদ্ধি হলো প্রেমের সার্বজনীয়তাকে, যে অনন্ত তাঁকে কি করে আঁকড়ে ধরবে কিন্তু অজ্ঞানী মানুষের মন, কখনো  স্ফুলিঙ্গের মতো আলোর বর্তিকা ছড়িয়ে দিয়ে  সত্যকে নাড়িয়ে দিয়ে  আবার  সে মিলিয়ে যায়।   যেই সে সরে যায়, আবার সেই অন্ধকার, আবার অবাধ্য মন ব্যাকুল হয়ে অধরা কৃষ্ণকে অর্থাৎ সৎ বস্তুকে  পাবার বাসনায়। এই না পাওয়ার সুরটাই হচ্ছে মানব জীবনের চিরন্তন দুঃখের কারণ।  

ক্রমশঃ 

ব্লগার -রবীন মজুমদার 

তারিখ -২১/০১/২৪

rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে। 

কোন মন্তব্য নেই:

ujaan

(২৩৯)বহতি হাওয়া

(২৩৯)বহতি হাওয়া   "আধুনিক " এই শব্দটিকে নিয়ে বেশ বাগবিতণ্ডা হয় মাঝে মাঝে, কোন বাক্যের প্রিফিক্স হিসাবে তাকে  বসানো যায়। আধুনিকতাকে...