(১৯১) মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে -
ঋগ্বেদের ১০ম মন্ডলে ১৮ তম সূক্তে সেদিনের কবি আপামর মানুষের জন্য জীবন থেকে মৃত্যুকে দূরে থাকার প্রার্থনা করেছিলেন। যদিও মৃত্যু হলো জীবনের অনিবার্য পরিণতি, তবুও কেউই চায়না এই ধরণী থেকে বিদায় নিতে। তাই এই মৃত্যুকে রোহিত করতে মানব মনের অন্তরতম প্রদেশ থেকে এটাই ছিল চিরন্তন আবেদন মৃত্যুর প্রতি -
" হে মৃত্যু! তুমি ঊর্দ্ধগগনে স্বর্গবিহারী কিন্তু সেখান থেকে তুমি তোমার শ্যেন দৃষ্টিকে অবিচল রাখো মর্তবাসীদের উপর। হে মৃত্যু ! প্রার্থনা করি, তোমার এই কঠিন নিস্পলক দৃষ্টি থেকে বিরত থাকার । "
"হে মৃত্যু! তোমার পক্ষপাতিত্ব আমাদের পীড়িত করে, কেন তুমি বিভেদ রচনা করলে জীবনের স্থায়িত্বের প্রশ্নে দেবতাদের সাথে মর্তবাসীদের ?"
"হে মৃত্যু ! তুমি তো অন্তর্দ্রষ্টা , তুমি তো জান যে, অন্ধগলির পথ ধরে জরা-ব্যাধি সঙ্গে করে নিয়ে আসে মৃত্যুরে মর্তের দরজায়, তুমি কি পারোনা সেই পথটা করতে পরিহার ? কেন তবে ব্যতিক্রম দেবতাদের বেলা ?
"হে মৃত্যু ! তোমার কারণে কেন বারবার দংশিত হবে মানব হৃদয়, প্রিয়জনকে হারাবার ব্যাথায়। তুমি কি পার না জীবন থেকে মৃত্যুকে বঞ্চিত করে জীবনটাকে নিশ্চিন্ত করতে ? যেখানে স্ত্রী-পুত্র, কন্যাসহ মর্তবাসীদের আনন্দঘন জীবনের স্থায়িত্বের পথে তুমিই যে প্রধান অন্তরায়। দাওনা, আমাদের একটু অমরত্বের স্বাদ গৃহীর গৃহ মাঝে, সেখানে যেন কোনদিনও প্রবেশ না করে প্রিয়জনদের হারানোর বিষাদ। এই কামনায় তো প্রত্যহ যজ্ঞের অগ্নি মর্তবাসীদের প্রতিনিধি হয়ে তোমাদের কাছে করছে প্রার্থনা । "
প্রতি যজ্ঞে একধরনের বলি হয়ে থাকে, এখানে যদি সত্যিকারের বলি হতো মৃত্যু নামক এক ভীতির; আর সেই স্থানে উদয় হতো বিমূর্ত আশার, তাহলে কবি কন্ঠে উচ্চারিত হতো - " মরনের দ্বার আজি রুদ্ধ, জীবন সেখানে অপেক্ষা করছে আনন্দের ডালি সাজিয়ে, যেখানে আকাশ-বাতাস মুখরিত হবে হাসির কলতানে, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে উদ্বেলিত নৃত্যের ঝংকারে উড়বে ধরণীর ধূলিকণা, আজ তারা অনুভব করবে স্বর্গ সুখের ছোয়া।"
" হে মৃত্যু ! যেমন একটা দিন অতীতের গহ্বরে হারিয়ে গেলে নতুন দিন এসে তাকে পূরণ করে দিয়ে যায় , ঠিক তেমনি প্রকৃতির জগতে এক ঋতু আগমনে অন্য ঋতু বিদায় নেয়. এই ক্রমিক নিয়মের বেড়াজালে মানব জীবনের যাত্রাপথকে নির্দ্দিষ্ট করো, তাই প্রথমে সুযোগ করে দাও অগ্রজকে তারপরে কণিষ্ঠরা তার পরে একে একে সব । "
" হে মৃত্যু ! তোমার নজর এড়াতে পারলে কোন নারীর জীবনে বৈধব্যে নামক দুঃখ পারতো না গ্রাস করতে, আবার শুনতে হতো না , মৃত পতির পাশ থেকে সদ্য বিধবা পত্নীকে কামনায় জর্জরিত দেবরের তীব্র আকর্ষনে পুনরায় সংসার পানে ফিরে আসার আহবান । "
" যারা আজ এই ধরাধামে অনুপস্থিত , তোমরা এখানেই থাকো, এই বিস্তীর্ন শ্মশানভূমিতে, যেখানে অখন্ড নীরবতা বিরাজমান। হে স্নেহময়ী জননী পৃথী প্রার্থনা করি, তুমি তোমার কুশীলবদের অন্তরের নিবিড় ছায়া দিয়ে আগলে রাখ, কখনো করো না বঞ্চিত তাদের তোমার দাক্ষিণ্য থেকে । "
[ মূল অংশ থেকে মূল ভাবটাকে সংরক্ষিত রেখে কিছু স্বাধীনতা সহযোগে এইটি লেখা হয়েছে ]
ক্রমশঃ
ব্লগার -রবীন মজুমদার
তারিখ -০৫/০১/২৪
rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে।
1 টি মন্তব্য:
ওয়েল ডান
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন