( ২০৬) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত উপলদ্ধি ( প্রথম পর্ব )
আমাদের মগজে আশ্রিত তথ্যগুলি যদি অনুরূপ কোন ভাণ্ডারে বন্দী করে আমাদের মগজকে ভারমুক্ত করা যায় তাহলে সেটাই হবে মানুষের কাছে বিকল্প গোডাউন। প্রাথমিকভাবে সেই দৃষ্টিভঙ্গী নিরিখে কম্পিউটারের আবিষ্কার এবং পরবর্তী সময়ে মানুষের যন্ত্রের উপর নির্ভরতা উত্তরোত্তর বাড়তে লাগলো।বিজ্ঞানের সাথে দর্শনের ফারাক সর্বকালীন। জনজীবনে কি ভূমিকা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ( এ. আই.) প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে বিজ্ঞান ভাবিত নয়।
কৃত্ৰিম বুদ্ধিমত্তা আজকের দিনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলছে এবং আগামী দিনে মনুষ্য নির্ভর অর্থনীতিতে একটা ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে অর্থনীতিবিদদের ধারণা। দৃশ্যমান জগৎ এবং সুক্ষ জগতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ফাজি লজিকটা এতদিন মানুষের সম্পদ ছিল আজ সেখানে সে প্রবেশ করেছে।
কৃত্ৰিম বুদ্ধিমত্তার উল্লেখযোগ্য উপাদান হচ্ছে অ্যালগরিদম। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে অ্যালগরিদমকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। ধরা যাক, আপ্পলিকেশনটির নাম " কি ভাবে রাস্তা পার করতে হবে"। আমরা যখন রাস্তা পারাপার করি, তখন নিজেদের অজান্তে ধাপে ধাপে কতকগুলি নিয়মকে মান্যতা দিয়ে থাকি। যেখানে ট্রাফিক আছে সেখানে ট্রাফিক সিগন্যালের আলোগুলির মধ্যে কোন আলোটি জ্বলছে তাকে পর্যবেক্ষন করে থাকি, যদি সবুজ আলো জ্বলে তবে সেটা চক্ষু ইন্দ্রিয়ের মধ্যে দিয়ে আমাদের মনে প্রতিফলিত হয়, সেখান থেকে বুদ্ধি চৈতন্যের সহযোগিতায় বিচার করে স্মৃতির পাঠাগারে গিয়ে আলোর রঙের পাশে যে নির্দ্দেশ আছে তার সাথে সবুজ (ইনপুট) রঙের ম্যাচ করানো হয়। সবুজ সংকেত নির্দ্দেশ দেয় গাড়ি চলছে সুতরাং বুদ্ধি বলল, তুমি অপেক্ষা করো। অপেক্ষা করার কিছুক্ষন পরে ট্রাফিক সিগন্যাল তার রং পরিবর্তন করে লাল আলো জ্বলে উঠে, তখন সেই পূর্বের ন্যায় স্মৃতির পাঠাগারের নির্দেশ অনুযায়ী বুদ্ধির প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত পেয়ে মানুষ রাস্তা পারাপার করতে উদ্যত হলো। এই অ্যালগরিদমই ধাপে ধাপে কাজ করাকে নির্দেশ করে এবং সুসংহতভাবে লক্ষ্যপূরণের জন্য তার উদেশ্যকে বাস্তবায়িত করে থাকে। আমাদের এই রাস্তা পারাপারটি কম্পিউটারের পরিবেশে একটা এপ্লিকেশন মাত্র। এই পার্থিব জগতে বিভিন্নধরণের ছোটবড় বহু বিষয়ভিত্তিক এপ্লিকেশন আছে। সমস্ত কার্যপ্রনালী এই এপ্লিকেশনে প্রবেশ করলে সে সুষ্ঠভাবে সমাধান করবে। এই অ্যালগরিদমই আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্সির প্রাণ পুরুষ।
এই দৃশ্যমান জগৎ এই রকম বহু এপ্লিকেশনের সমষ্টি, এর মধ্যে আছে মাইক্রো লেভেলের কার্যক্রমের প্রিন্সিপালটি আপ্পলিকেশনের অভিমুখ অনুযায়ী হয়ে থাকে। রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে আমরা কি কি স্টেপ মেইনটেইন করলাম। টার্গেট কি ?- রাস্তা পার হওয়া। পার হতে গেলে কি কি অন্তরায় আছে তাকে আগে থেকে লিপিবদ্ধ করা। তাকে বলে মাস্টার ডাটাবেস। সেই অনুযায়ী কর্মপদ্ধতির নির্দেশ দেওয়া। তাকে বলে প্রসেস। কাকে নিয়ে প্রসেস হচ্ছে ? আমাদের চক্ষু ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে গৃহীত ইনপুট ডাটা নিয়ে লক্ষ্য পূরণের যাত্রাটা হচ্ছে কাজ। প্রসেস কি হচ্ছে ? সেখানে ইনপুট থেকে যে সমস্ত সংবাদ আসছে তাকে লজিক্যালি চেক করা। যেমন, সবুজ এবং লাল আলোর সংকেতের সাথে রাস্তা পারাপারের সম্পর্ক। আউটপুটটা কি ভাবে আসছে ? মানুষের জ্ঞানেন্দ্রিয় থেকে আদেশ আসছে কর্মইন্দ্রিয়ে এবং সে কাজটি সুসম্পন্ন করছে। সমগ্র জিনিসটা মানুষের মগজে স্টোর করা আছে। এখানে ডাটাবেস দুটি আছে একটা মাস্টার অন্যটি ইনপুট বা ট্রাঞ্জাকশন ডাটা । মাস্টার ডাটা বহু সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে আগে থেকে ইনপুট করা হয়ে থাকে। আবার মানুষের মগজ বা বুদ্ধির মতো আগে থেকে প্রোগ্রাম করা কার্য্যক্রমগুলি এরিথমেটিক লজিকাল ইউনিটএ নিয়ে এসে চেক এবং প্রসেস করে আউটপুট দেওয়া হয়। সবসময় কোয়ালিটি কন্ট্রোল সজাগ থাকে উত্তরদান সঠিক হয়েছে কিনা, তাকে নির্ধারণ করতে।
ক্রমশঃ
তারিখ -২৯/০৪/২৪
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন