( ২০৭) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত উপলদ্ধি ( দ্বিতীয় পর্ব )
সুখের লাগিয়া এঘর বাঁধিনু অনলে পুড়িয়া গেলো।
সুখের চাহিদা যেখানে অপরিমিত , সেখানে দুঃখ অসীমকে স্পর্শতো করবেই, এটাই বাস্তবের অভিজ্ঞতা । প্রকৃতির এই নির্মম পরিণতির সাক্ষী আমরা সবাই। তবুও মানুষ কাঁদে, হানাহানি করে, অসামাজিক কাজ করে সুখকে উপলদ্ধি করার কারণে। সুখ অর্জনের আনন্দ যতখানি তার থেকে থেকে অনেকবেশী কণ্টকের নিরবিচ্ছিন্ন দাপাদাপি। যতখানি সুখের প্রলেপ তার থেকে অনেক বেশী দুঃখের জ্বালা। ঐ যে গোলাপ ফুল, কাঁটায় জর্জরিত হয়েও মানুষ তাও শত কাঁটা উপেক্ষা করে তাঁর গন্ধের আস্বাদ পেতে চায়। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সি ( এ.আই.) স্বাদ গন্ধ ঠিক সে রকম, যাঁরা এই কার্যের প্রত্যক্ষ সহযোগী কিছু বেতনভুক কাজপাগল বিজ্ঞানী আর তার পরোক্ষ সহযোগীরা হলেন রুপোর চাঁদির পর্দার আড়ালে থাকা এই রঙ্গমঞ্চের কলকাঠি নাড়ার কারিগররা, তাদের বয়ে গেছে সমাজের লাভ-ক্ষতির অঙ্ক কষতে। যে রাসায়নাগারে পারমানবিক বোমা তৈরী হয়েছিল তার উপস্থাপনের উন্মাদনায় আজও পৃথিবী আতঙ্কিত। আর এই পারমানবিক বোমার তুলনায় অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন এ. আই.য়ের গুঁতায় বর্তমান ও পরবর্তী শতকগুলিতে নিরবিচ্ছিন্ন প্রাধান্যে প্রতিষ্ঠিত করে এক চিরস্থায়ী দুঃখের জোয়ার মানব জীবনকে প্লাবিত করবে এটাই চিন্তাশীল মানুষদের সুচিন্তিত অভিমত।
মানুষ জন্মলগ্ন থেকে অনন্তকে জানতে চায়। এই কৌতূহলই মানুষকে অন্যান্য জীব থেকে অনন্য করে তুলেছে। জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে অনুসন্ধিৎসার পাশাপাশি অন্তরপ্রকৃতির গহীন প্রদেশে ক্রমবর্ধমান অনুসন্ধান সৃষ্টির শুরু থেকে সভ্যতার পাদদেশে এসে একই লয়ে বেজেই চলছে। কারণ ছাড়া কোন কার্য্য হয় না। সীমিত ক্ষমতার অধিকারী মানুষ, জানার আকাঙ্খা তার অসীম, সেই সসীম ক্ষমতা নিয়ে অসীমের অব্যক্ততাকে ব্যক্ত করার অভিলাষে তারা ব্রতী হলো উন্নত ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষ তৈরী করার স্বপ্নে। সেই মানুষের মস্তক হবে হাজার হাজার রাবনের মস্তকের সমান, রাশি রাশি জ্ঞান সম্পদে ভরা থাকবে তার সমুদ্র প্রমান সুগভীর ভান্ডার। আকাশের বিদ্যুতের ঝলকের গতিতে পুনরায় হাজির করবে জ্ঞান সমুদ্র থেকে একান্ত প্রয়োজনীয় সেই জ্ঞান রাশিকে (সার্চ অ্যালগরিদম), আবার তাকে সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করবে কাজের উপযোগী করে(টুরিং টেস্টের মাধ্যমে)। মানুষ আর মেশিনের সব ব্যবধান মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে এই প্রান্তরে এসে।
একবিংশ শতাব্দীর গোড়ায় এসে মানুষের অসংখ্য মাথা গঠনের ভাবনাটা একটু একটু করে কল্পনা থেকে বাস্তবের দুয়ারে এসে উঁকি দিলো। সেই ভাবনাকে আদর্শজ্ঞান করে ছুটে চললো এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে, সেখান থেকে কুড়িয়ে আনতে লাগলো জ্ঞানের নুড়ি আর তা দিয়ে ভরিয়ে তুলতে লাগলো জ্ঞান সমুদ্রের অতলান্তিক সাম্রাজ্যের ক্ষুদ্র গহ্বরগুলির ছোট ছোট নেইমপ্লেটে চিহ্নিত অলিন্দগুলিকে । আজও চলছে সেই সংগ্রহের কাজ। প্রয়োজন মতো জ্ঞান পুটলিকে উদ্ধার ও সংরক্ষণের জন্য পাড়ে বসে আছে অসংখ্য সাগর মর্দনের পাহারাদাররা, যাঁরা বাবুদের ফাইফরমাশ খাটবেন। যখনই ডাক পড়বে তখনিই গভীর সমুদ্রে ডুব দিয়ে তুলে নিয়ে আসবে সেই একান্ত প্রয়োজনীয় জ্ঞান নুড়িটিকে। পাড়ে বসে হাজারো তর্কলংকাররা সুচারু বিশ্লেষণে আকরিক জ্ঞানকে ব্যবহারিক জ্ঞানে রূপান্তরিত করে তেষ্টা মেটাবেন সেইসব গ্রাহকদের তৃষ্ণাকে। এই জ্ঞান সরোবরের সার্বিক রূপরেখাটাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্সির ইতিকথা।
ক্রমশঃ
ব্লগার -রবীন মজুমদার
তারিখ -০২/০৫/২৪
rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন