(২২৫) জগাখিচুড়ি -পঞ্চম সংখ্যা
অতীতের পাতা থেকে, যেখানে কল্পনার প্রবেশ নিষেধ (১)
৭০ দশকের কলকাতাতারিখটা সঠিক মনে নেই। কে সেরা ? এই শ্রেষ্ঠতার প্রশ্নকে সম্বল করে, সমগ্র কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ উত্তাল রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রভাবে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনগুলি ছিল রাজনীতির আঁতুরঘর। সেই সময়ে প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং যাদবপুর ছিল অতিবাম ঘেঁষা আর অন্যান্য কলেজে ছিল বাম এবং কংগ্রেসের দখলে ছিল ছাত্র সংসদগুলি। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচনে সিপিআই পরিচালিত ছাত্র সংসদ বিজয়ী হয়ে ছিল। ছাত্র নেতা জ্যোতিষ সাহা(পরবর্তী সময়ে তিনি দেবগৌড়া মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত মহাশয়ের আপ্ত সহায়ক ছিলেন এবং কমিনিউস্ট পার্টির মহাফেজখানা নির্মাণ করার কাজটি অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়েও, অসমাপ্ত রেখে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেন ) সেসময়ে ছাত্র সংসদের সেক্রেটারি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে পরিমাপ করার মতো নির্দ্দিষ্ট কোনো প্যারামিটার ছিল না। যখন তখন রাজনীতির আকাশে মেঘের সঞ্চার হতো আর সেই মেঘ থেকে অঝোরে বৃষ্টি নেমে আসতো। সেই সুযোগে অনিয়মিত বিদ্যুৎ বর্ষনের ঝলকে নাম না জানা কতনা ব্যক্তি প্রাণ হারাতো। সুতরাং, কেউ যদি ঘর থেকে বাইরে যেতেন, বাড়ির লোকেরা ফিরবার সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলে চঞ্চল হয়ে উঠতেন। এমনিই এক দিন জ্যোতিষদার বিধবা বৃদ্ধা মা সময় অতিক্রান্ত হবার পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে না ফেরায়, আমার ঠিক স্পষ্ট মনে আছে, বারান্দার জানলার পর্দাটা একটু ফাঁক করে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন, পরিচিত কোরোর কাছ থেকে ছেলের খোঁজ পাওয়া যায় কিনা জানতে, হঠাৎ সেখান দিয়ে আমাকে হেটে যাবার সময়, জিজ্ঞাসা করলেন, "জ্যোতিষকে দেখেছো" ? তারপর অনেক সময় বয়ে গেছে অবশেষে ময়দানে জ্যোতিষ-দার অচেতন দেহটা পুলিশ দীর্ঘক্ষণ পরে আবিষ্কার করলো। বহু বছর পরে জোতিষদা মজা করে আমাকে বলল, চিত্র পরিচালক মৃনাল সেনের আমাকে "কোলকাতা ৭১" সিনেমার জন্য রয়ালটি দেওয়া উচিত ছিল।
********************************
আঁখো দেখা হাল
হন্তদন্ত হয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর চেম্বারের দরজাকে উন্মুক্ত করে সেদিনের কোন এক রাজ্যের দোর্দন্ড প্রতাপ মুখ্যমন্ত্রী দেশের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উদ্দেশ বললেন, " দাদা আমাকে বাঁচান"। কেন্দ্রীয় এজেন্সির কঠোর নাগপাশে তিনি আবদ্ধ হয়ে গেছেন, মুক্তির সব রাস্তা তার কাছে বন্ধ এবং সেই মুহূর্তে তার একটি মাত্র রাস্তায় খোলা সেটা হল জেল। অভিজ্ঞ মুখ্যমন্ত্রী, তিনি জানেন, তাঁকে কোনো ব্যক্তি রক্ষা করতে পারবেন না, তাই অনুরোধের আশপাশ দিয়ে গেলেন না। তাই তিনি শুধু মাত্র অভিজ্ঞ দাদার কাছে পরামর্শই নিতে এসেছেন। আসলে তার এতদিন ধরে তিল তিল করে যে রাজপাটটা তৈরি করেছেন, সেটা কার হাতে ছেড়ে যাবেন। একদম নিজের বলতে ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে এবং একদম সাদামাটা অর্ধাঙ্গিনী। তাছাড়া, কয়েকজন শ্যালকবৃন্দ আছেন। দাদা বললেন, "কেন আপনার শ্যালকদের মধ্যে কাউকে মনোনীত করুন"। মুখ্যমন্ত্রীটি প্রায় আঁতকে উঠলেন, তার শালবাবুদের নাম শুনে। তার পর তো ইতিহাস। সহধর্মিনী তার গৃহকর্মকে বিদায় জানিয়ে রাজ্যের হেঁশেল প্রবেশ করলেন। এই আমাদের ভারতবর্ষ।
********************************
ব্লগার -রবীন মজুমদার
তারিখ - ২৬/০৬/২৪ চতুর্থ প্রহর ৩:৪১ মি.
https://rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন