বুধবার, ২৬ জুন, ২০২৪

   (১৮২) গুগুনানী

অভীষ্ট পূরণ যদি একমাত্র লক্ষ্য হয় আর সেটা যদি বাঁকা পথে উদ্ধার করতে হয়, তাহলে তার সেনাপতি অবশ্যিই হতে  হবে ছলনাকে । এটাই পৃথিবীর ইতিহাস। মানুষ তো কোন ছাড়, দেবতারা পর্যন্ত সেই পথ অবলম্বন করেছিল।  প্রসঙ্গটা হচ্ছিলো তারকাসুর বধকে কেন্দ্র করে। স্কন্দপুরাণ 
        যুগে যুগে অভীষ্ট পূরণের জন্য দেবতা থেকে মানুষ ও অন্যান্য জীবদেরও নিজেদের মতো করে কৌশল রচনা করতে হয়েছে। সেখানে নৈতিকতা খুঁজতে গিয়ে ভুলভুলাইয়াতে হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা বেশী।  তার থেকে বরং গল্পের নদীতে গা ভাসিয়ে দেওয়াটাই শ্রেয়।  

    অবশ্য সেই যুগে সাহিত্য রচনা করতে গেলে শীলতা বা অশ্লীলতা নিয়ে লেখককে কোন লেখাকে কেন্দ্র করে জবাবদিহি করতে হয়েছিল বলে জানা নেই। বরং সংস্কৃত শ্লোকের দাপটে অশ্লীলতাকে রূপক ও শিল্পকীর্তির সম-ব্যবহারে কখন যেন অশ্লীলতাকে পিছনে ফেলে সে যেন  নৈসর্গিক প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে  সাহিত্যের  নবকলেবরে আবির্ভূত হয়।  প্রসঙ্গটা ছিল যুগে যুগে ছলচাতুরির আশ্রয়ে নিতে দেবতা থেকে সামান্য প্রাণীও সুযোগ ছাড়েনি। শুধু তাই নয়, একটা পরম্পরা স্থাপন করে গেছে। সেদিন থেকে বর্তমানে সেটি একই ধারায় বিদ্যমান। অধর্মকে প্রশ্রয় দিয়ে বহুবিধ রূপক ও মিথ্যার  মোড়কে ধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রক্রিয়াটি  আজও যেমন অব্যাহত, ভবিষ্যতে তার যে কোন পরিবর্তন হবে তার কোন ইঙ্গিত নেই। 
    
অত্যাচারী অসুর তারকাসুরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সমগ্র ত্রিলোক এবং দেবরাজ ইন্দ্র স্বর্গের সিংহাসন থেকে অপসৃত। ঘটনাচক্রে, ব্রহ্মার কাছে দুটি বর  লাভ করেছিল তারকাসুর। 

        প্রথমটি ছিল এই স্বর্গ,মর্ত্য ও পাতালে তার সমকক্ষ কোন যোদ্ধা থাকবেনা আর দ্বিতীয়টি তার বিনাশ একমাত্র শিবের পুত্র কার্তিকের হাতেই হবে। এইখানেই তারকাসুর একটি কূটনৈতিক চালের অবতারণা করল ।  সে জানতো শিব একজন যোগী সুতরাং তাকে পুত্র উৎপাদন করতে গেলে গৃহী হতে হবে এবং সেটি বাস্তবে সম্ভব নয়। কার্যতঃ সে অপরাজিত থাকবে।  এইবার শুরু হলো দেবতাদের  কূটনৈতিক কার্যক্রম। 

        কাহিনীর গন্তব্যস্থল যোগী শিবকে গৃহী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা।  যোগীর সাথে গৃহীর মৌলিক তফাৎ রিপুর নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতার মধ্যে।   এই তফাৎটা ঘুচিয়ে শিবকে সংসারী হতে হবে, কার জন্য ? স্বর্গের একজন ক্ষমতাহীন রাজাকে তার রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।  দেবরাজ যে কতখানি আদর্শবান রাজা ছিলেন তা ঋগ্বেদের বিভিন্ন পর্বে তার বর্ণনা আছে। আর্য্যদের কাছে রক্ষাকর্তা আর অনার্যদের কাছে বিভীষিকা অথচ উভয়েই একবৃন্তেরই ফুল।  তর্কের খাতিরে তারকাসুর যেমন দেবতাদের কাছে আতঙ্ক, আবার অসুরদের কাছে রক্ষাকর্তা। 

        শিবকে যোগী থেকে ভোগী বানাবার প্রক্রিয়া শুরু হলো।  অন্যান্য সব দেবতারা অংশ গ্রহণ করলেন এই চক্রান্তে।  একটা জিনিস ভীষণ লক্ষ্যণীয় যে বস্তুজগতে  লক্ষ্যবস্তুকে অর্জন করার ক্ষেত্রে চক্রান্ত একটা বড় হাতিয়ার।   সেদিনের কাহিনীকাররা সমাজকে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।  ক্ষমতার দ্বন্দ ও দম্ভ সাংঘাতিক বস্তু। 

        যাইহোক,  শিবকে যোগী থেকে ভোগী করতে গেলে, তার মধ্যে কামভাবের বীজটা স্থাপন করতে হবে,  তার জন্য চাই একজন নারী।  আর শিবের মতো যোগীকে ধ্যানচ্যুত করতে গেলে যেমন তেমন নারী হলে তো  চলবেনা।  

এবার পুরোদস্তুর ঘটনাটা একদিন যখন পাঠকরা পড়বেন, তখন তাকে মনের আয়নায় ফুটিয়ে তোলার জন্য লেখকের হাতে শুধু শব্দ ছাড়া কিছুই নেই। স্ক্রিপ্ট থেকে চলচিত্রে উত্তরণ। এখানেই  কবি তার মনকে ক্যামেরা হিসাবে আর কলমকে তুলির রেখায় চিত্রিত করে পাঠককে নিয়ে চললেন সেই বধ্যভূমিতে, যেখানে মদনের তুনে মহাদেবকে আহত করার মঞ্চ বাধা হয়েছে। সেই মঞ্চেই পরবর্তী সংখ্যায়  আবির্ভূত হবেন কামদেবের কস্টিউমে আচ্ছদিত  হিমালয় কন্যা পার্বতী  ০০০০০০০০০০০

ক্রমশঃ 

ব্লগার -রবীন মজুমদার 

তারিখ - ৮/১২/২৩

rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যেতে পারে। 


কোন মন্তব্য নেই:

ujaan

(২৩৯)বহতি হাওয়া

(২৩৯)বহতি হাওয়া   "আধুনিক " এই শব্দটিকে নিয়ে বেশ বাগবিতণ্ডা হয় মাঝে মাঝে, কোন বাক্যের প্রিফিক্স হিসাবে তাকে  বসানো যায়। আধুনিকতাকে...