(২৩৪) অতঃকিম
কি অদ্ভুত এই জগৎ ! তার থেকেও আশ্চর্য এই মানুষের ভাবনা। যখন প্রকৃতি তার ধংসলীলা এই পৃথিবীর বুকে সংগঠিত করে, তখন আমরা তাকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিই আবার প্রকৃতিজাত মানব যখন কোন সমাজ বহির্ভূত কর্মে ব্যাপৃত হয়, তখন যাই যাই রব ওঠে। তার কারণ হিসাবে বলা যেতে পারে, প্রথমটি মানুষের নাগালের বাইরে আর অন্যটি আয়ত্তের মধ্যে। যদিও মানুষ আজ প্রকৃতিকে বাঁধার ক্ষেত্রে যতখানি আন্তরিক, তার সিকি ভাগও কিন্তু ব্যয় করেনা, মানুষের দ্বারা মানুষের ধ্বংসকে প্রতিহত করতে। তার পরিবর্তে সভ্যতাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ভীষণ সচেতনভাবে দায়সারা গোছের একটা বন্দোবস্তকে আইন নামক আচ্ছাদনে মুড়ে দিয়ে একধরনের অহমিকায় শাসকরা ভুগতে থাকে। সভ্যতার যে অগ্রগতি হয়নি তার প্রমান হচ্ছে দেশে দেশে সামরিক খাতে আর অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে শান্তি শৃঙ্খলার প্রশ্নে আর্থিক বরাদ্দের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি। বিজ্ঞানকে যতনা সৃষ্টিমূলক কর্মে ব্যাবহৃত হয়. তার থেকে অনেক বেশি ব্যবহৃত হয় ধ্বংসমূলক কর্মে।
শাসক যতনা আগ্রহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে, তার থেকে তাদের অনেকবেশি আগ্রহ শাষিতদের শায়েস্তা করার জন্য যত্রতত্র শিবির(থানা) প্রতিষ্ঠা করার জন্য। ভীষণ সচেতনভাবে তারা জানেন শাসনের নামে ত্রাসনের প্রতিষ্ঠা করাটা কতটা জরুরি, কেননা তাদের শাসনের উপজাত ফসল হচ্ছে নাগরিক অসন্তোষ এবং তাকে দানা বাঁধতে দেওয়া যাবে না।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে এই বিশ্বে সভ্যতার অগ্রগতি হচ্ছে না ক্রমশই পিছিয়ে যাচ্ছে। যেই মতবাদ বলে, বিশ্বে আত্মার কোন স্থান নেই, এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ড শুধু মাত্র বস্তু বা পদার্থ দিয়েই গঠিত। মানসিক বা আত্মিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের একমাত্র নিয়ন্ত্রক হচ্ছে বস্তুজগৎ। মানুষের মন ও চেতনা বস্তু জগতের অধীন। পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী এই জড় বিশ্বকে ব্যাখ্যা ও প্রাধান্য দেওয়া হয়। এই মতবাদই হচ্ছে বস্তুবাদ।
বস্তুবাদ যেখানে সমাজের নির্ণায়ক সেখানে সবকিছুই সেই আদর্শের দ্বারা পরিচালিত হবে , সেটি সন্দেহাতীত। আধ্যাতিক বা অতিপ্রাকৃত সত্তার কোন অস্তিত্ব এখানে নেই। অর্থাৎ আত্মদর্শন এখানে একটি অপ্রচলিত শব্দবন্ধ মাত্র।সুতরাং প্রচলিত শিক্ষা ও সংস্কৃতি তার দ্বারা পরিচালিত হবে, এটাই বাস্তব। আজকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পরিবর্তনের পিছনে বস্তুবাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই সর্বত্র রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থার ত্রুটিকে আড়াল করতে ভুক্তভোগীকে আর্থিক অনুদান দেওয়াটাকে প্রাথমিক প্রতিষেধক হিসাবে গণ্য করাটা বস্তুবাদেরই কুফল। সেখানে সব সময় মানুষের অন্তর্জগৎকে অস্বীকার করা হয়, কেননা সেটাই যান্ত্রিক বস্তুবাদের ধর্ম। প্রকৃত শিক্ষার একান্তই অভাব।
যেমন, শিক্ষাকে শিল্পবান্ধব করতে গিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভুলে গেছে প্রত্যেক মানুষের একটা আত্মিক দিক আছে। প্রকৃত শিক্ষা অনুরাগীর পরিবর্তে কতগুলি মানুষরূপী যন্ত্র এই সমাজ তৈরি করছে। অবশ্য কিছু মানুষ এই অব্যবস্থার মধ্যেও বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো এই সমাজে অবস্থান করছে, যাঁরা ভারতীয় সংস্কৃতির বাহক হিসাবে পরিচিত। এটাই বর্তমান বিশ্ব সমাজের সামগ্রিক চেহারা । প্রাচ্যের দিকপাল নক্ষত্ররা আজ অবসর বিনোদনের চর্চার বস্তু। সেই জীবরা আজ নেই আর প্রেম তো সুদূর পরাহত। নিরন্তর ভারতীয় দর্শন চর্চার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পৃষ্ঠপোষকতা ভীষণ জরুরী। রামকৃষ্ণ ও স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে গড়ে ওঠা সেই নিরন্তর চর্চাই সেটাই একমাত্র সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবনের পাথেয় হতে পারে এই বিপন্ন সময়ে।
ব্লগার -রবীন মজুমদার
তারিখ - ০৬/১০/২৪
https://rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন