(২৩৮) জগাখিচুড়ি ( ষষ্ঠ সংখ্যা)
মৃত্যুর রকমফের
মৃত্যু কোনটা হালকা আবার কোনটা ভীষণ ভারী। এক বোকা বুড়ো একদিন বলেছিল মৃত্যু পাখির পালকের থেকে হালকাও হতে পারে, আবার সে পাহাড়ের চেয়ে ভারীও হতে পারে। আসলে বুড়োটা হয়তো বোঝাতে চেয়েছিলো ব্যক্তি জীবনটা যখন সমষ্টির স্বার্থে ব্যবহৃত হয়, তখন তাঁর মৃত্যুটা অবশ্যিই সমাজের পক্ষে ভারী হয়ে যায়। ব্যষ্টির থেকে সমষ্টি সব সময়ই বড়। আজকাল ভারী মৃত্যুর বড্ডই আকাল পড়েছে, কালে ভদ্রে দুই একটা পাওয়া যায়।
*************************************************
জীবিকার মিছিল
লক্ষ্য যখন জীবিকা হয়, তাকে সামনে রেখে প্রত্যেক দিন দলে দলে মানুষের মিছিল অলিতে গলিতে, রাজপথে, জীবন যন্ত্রণাকে পরিশ্রমের বিনিময়ে অর্থ দিয়ে বোঝ কমাতে শুধু হেঁটেই চলেছেন। এই হেটে চলার মধ্যে যাবার উদ্দেশ্যটা কখন যেন গৌণ হয়ে গেছে, শুধু মাত্র রয়ে গেছে অজান্তেই একটা চলার অভ্যাস। তারই মধ্যে খুব অল্প সংখ্যাক মানুষ আছেন যাদের দেখে খুব প্রাণবন্ত মনে হয়। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভ্রান্তিতে ভুল রাস্তায় লক্ষ্য খুঁজতে গিয়ে গোলকধাঁধায় পরে যায়, আর যখন সেখান থেকে কোনক্রমে বেরিয়ে এসে দেখে জীবনটা জীবিকার ভিড়ে হারিয়ে গেছে, পরে আছে শুধু দেহটা।
*************************************************
সিলেবাসে নেই
সমাজবিজ্ঞানী কিংবা মনোবিদরা পথ ভ্রান্তির পিছনের বহু কারণ বের করবেন, তার সাথে উপযুক্ত রাস্তা বাতলিয়ে দিয়ে আদর্শ পথের ঠিকানা দিয়ে দেবেন, কিন্তু সেই পথে কেউ হাত ধরে নিয়ে যাবেন না। সংসারের চাকাটা এইভাবেই যুগ যুগান্তর ধরে চলে আসছে। তাই তাকে নিয়ে মাথা ঘামানোর কেউ চেষ্টা করে না।
************************************************
ছাগলের তৃতীয় বাচ্ছা
প্রত্যেক বস্তুকে ব্যবহারের জন্য আদর্শ নিয়মের পদ্ধতি দেওয়া হয়, শুধু মাত্র ক্ষমতা ব্যবহারের নিয়ম-কানুনকে বাদ দিয়ে। তাই ব্যবহারকারীরা কিছুদিন পরে সেটা ভুলে যান , কারা যেন সেই বস্তুটা তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন আর কেনই বা তুলে দিয়েছিলেন এবং তারা বর্তমানে সেটাকে যথাযথ ব্যবহার করতে পারছেন কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। কোন লেখক আর প্রকাশনা কেউই এগিয়ে আসছেন না এই অজান্তে প্রতিপালিত ক্ষমতার ব্যবহারের গাইড লাইন প্রকাশ করতে। যদি অতিরিক্ত ব্যবহারে যদি কোনো ত্রুটি বেরিয়ে পরে, তবে বাইরের লোকেরা যাই বলুক না কেন, ভিতরের মানুষদের নজর ইচ্ছকৃতভাবে এড়িয়ে যায় বলে বৈদ্যি আনার প্রয়োজন অনুভূত হয় না। আসলে শাসন নামক বাচ্ছাটা বড্ড শক্তিশালী তাই বিচার কিংবা আইন টোটাল সিস্টেমের কাছে তারা ছাগলের তৃতীয় বাচ্ছা।
************************************************
দেওয়াল
মহাসমুদ্রের সাথে ব্যবধান তৈরি করে ব্যাঙকে একটি সংকীর্ণ কুয়োতে পাঠিয়ে দেবার ক্ষেত্রে দেয়ালের সাংঘাতিক ভূমিকা আছে। আসলে আজও মানুষ আকাশের বিশালতাকে, সমুদ্রের গভীরতা ভয় করে, পাছে যদি মানুষগুলি খাঁচা ছেড়ে অনন্তের দিকে যাত্রা শুরু করে দেয়, তাহলে তো রাজা উজিরদের চাকুরী থাকবেনা। তাইতো সুযোগ পেলেই ধর্মের নামে, লিঙ্গের নামে, জাতির নামে দেওয়াল তুলে দেয়।
************************************************
অসূর্যস্পর্শা আইন
আইন অন্দরমহলের নারীদের মতো আজকাল তাকে পর্দার আড়ালে ঢেকে রাখা হয়। শুধু মাত্র উপরে ক্যাপশনটা লাগিয়ে দিয়ে বলা হয় না "সাধারণের ব্যাবহারের জন্য নয়"। সাধারনের সংখ্যাটা বড্ড বেশি, তারা যদি উঠতে বসতে তাকে ব্যবহার করতে শুরু করে তাহলে তো শেষ হয়ে যাবে আর যদি শেষ হয়ে যায় তাহলে অসাধারণের জন্য কিছু রাখা যাবেনা। আসলে বস্তুজগতে শাসকরা সবকিছুকেই বস্তু হিসাবে দেখে। তাঁদের কাছে আইন হয়তো ভোজ্য বস্তু কিংবা প্রসাধনী, যা বারবার ব্যবহারে ক্রমশই কমে যায়। তাই শাসক সাধারনের অধিক ব্যবহারকে বেশ কিছু রহিত করে অসাধারণের জন্য সংরক্ষিত করে সংবিধানের সেই অমূল্য বাণী - আইনের চক্ষে সমান অধিকারের সুচারু অর্থ খুঁজে পেয়েছেন। **************************************
তারিখ - ২/১২/২৪
1 টি মন্তব্য:
মৃত্যু টা একটু অন্য রকমের। একটা শূন্যতার মধ্যে ঢোকা, যেখানে পাখির পালক নেই, আবার পাথর নেই। আছে শুধু ধোঁয়াশা, যেখানে ভেসে বেড়ানো যায়, পতন ঘটে না।
কুপমণ্ডুক এর বেঙ ধাক্কা খেয়ে বেড়াচ্ছে উপমা টা বেশ লাগলো।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন