(২৪৭) মহাভারতের অন্দরে ও বাহিরে - দ্বিতীয় পর্ব

  (২৪৭)  মহাভারতের অন্দরে   ও বাহিরে     - দ্বিতীয়  পর্ব 

                                মহাভারতের ঐতিহাসিক উপাদান

   বেদব্যাসের ছোয়ায় মহাভারত, হরিবংশ ও পুরাণের সৃষ্টি। প্রায় ৫০০০ বছরের পুরানো গ্রন্থ বিশ্বের দরবারে বিদেশী পন্ডিতদের হাত ধরে অনেকটাই  পরিচিতি  লাভ করে।  এঁদের মধ্যে অনেকেই পাশ্চাত্য সভ্যতার একনিষ্ঠ সাধক অর্থাৎ তাদের সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে ভীষণ একপেশেভাবে গৌরবান্বিত।  ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষ সম্পর্কে কৌতূহলবসত  তাদের সংস্কৃত ভাষাকে আয়ত্ত্ব করার অভ্যাস। এটাই তাদের কাল হল।  তাঁদের অহংকারকে প্রায় গুড়িয়ে দিতে উদ্যত হলো  ভারতীয় প্রাচীন সংগ্রহের উর্ব্বরতা। এর মধ্যে মহাভারত অন্যতম। বিদেশী বেশ কিছু পন্ডিতদের কাজ হলো এই সমৃদ্ধশালী গ্রন্থগুলির কৌমার্য্য হরণ করা। উদ্দেশ্য একটাই এই ব্রিটিশ পদানত জাতিটার সাংস্কৃতিক আভিজাত্যকে কলুষিত করা। তার জানতো মিথ্যা প্রচার একমাত্র শক্তিশালী মাধ্যম কাউকে উচ্চতায় প্রতিষ্ঠা করা আবার পদদলিত করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখে। এর অসঙ্খ্য উদাহরণ দেখতে পাওয়া যায়।  সেই ট্রেডিশন অবশ্য এখনো চলছে। যেমন, তারা বলেছে, হোমারকে অনুসরণ করে রামায়ন রচিত হয়েছে  আর ভাগবত গীতা তো বাইবেলের প্রতিকৃতি। মহাভারতের জনপ্রিয়তা সারা পৃথিবীর সমস্ত  মহাকাব্য থেকে কয়েকশ যোজন এগিয়ে। মহাভারত তো মূলত পাণ্ডব আর  শ্রীকৃষ্ণ কর্মাশ্রিত ঘটনাবলী। তাই প্রথম লক্ষ্য হলো পান্ডবদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা  এবং তার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত করা ভারতীয় নারীরা যে কতখানি বহুপতি ভোগ্যা অথবা নারীরা কত পুরুষকে ভোগ করতো ছিল তার জ্বলন্ত নির্দশন  হিসাবে  দ্রৌপদীকে স্থান দান করেছিল। 

একদিন মহানন্দে ফার্গুসন সাহেব তার পারিষদ নিয়ে একটি প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন পর্যবেক্ষন করতে গিয়ে ছিলেন, হঠৎই তার নজর পড়লো একটি ভগ্ন অট্টালিকার  বাইরের একটি নগ্ন নারী মূর্তির উপর। ব্যাস,  তার চোখ দুটি উজ্জ্বল হয়ে  উঠলো এক সাংঘাতিক প্রামাণ্য দলিল আবিষ্কারে। এবার বেশ প্রমান করা যাবে, আদতে এই জাতিটা ভীষণ অসভ্য  ছিল, যাদের নারীরা লজ্জাভরণ না  করে  সমাজে  ঘুরে বেড়াত। শিল্প সম্পর্কে কৃপণ জ্ঞান আর একধরনের প্রতিহিংসার মনোবৃত্তি  ফার্গুসন সাহেবের  এইধরনের কল্পনাকে সমৃদ্ধ করেছিল। 

আবার অসম্ভব দূরদর্শিতা দেখি, যখন, অপূর্ব ভারতীয় ভাস্কর্য দেখে , এক লহমায় বলে দিয়ে  পারতেন এই শিল্পের কারিগররা অবশ্যিই অভারতীয় আর ভারতীয়রা কি সুন্দর  গ্রীক ভাস্করদের সাত সমুদ্র তেরো নদীর পার থেকে এনে এই শিল্প কলা সৃষ্টি  করিয়েছেন। 

আর বেবোর সাহেবের বাঁদরামির শেষ নেই। সেই যুগের জ্যোতিষচর্চার উৎকর্ষতা দেখে  সেই যে তিনি ব্যাবিলনে চলে গেলেন আর সেখানে থেকে আলটপকা ছুড়ে  দিয়ে বলে দিলেন, এতো ব্যাবিলনের থেকে ধার করা। বাঁদরামির একটা শেষ  অবশ্যিই আছে, সত্যান্বষীরা খবর নিয়ে দেখলেন বাস্তবে চান্দ্রনক্ষত্রমন্ডল সম্পর্কে ব্যাবিলনের  পন্ডিতের কোন ধারণাই নেই।    

খুব সহজভাবে বলতে গেলে, পূর্বে যা ঘটেছিলো আর সেটি যদি বিবরণ সাপেক্ষ হয় , তবে তাকে ইতিহাসের মর্যাদা দেওয়া যেতে পারে। ইতিহাসের উপাদান আবার বিষয়বস্তুর  অপর পিঠে অবস্থিত। একথা অনস্বীকার্য ঐতিহাসিক লিবি কিংবা হেরোডেটাস  বা ফেরেস্তাদের রচিত ইতিহাসের মতো বেশ কিছু অনৈতিহাসিক ঘটনার অনুপ্রবেশ মহাভারতেও  ঘটেছে। 

মনে রাখতে হবে সে সময়ে কাহিনী সংরক্ষণের মাধ্যম ছিল শ্রুতি আর এই শ্রুতির  প্রবাহের মধ্যে মাঝে মাঝেই জনশ্রুতির অনিবার্যভাবে আগমন হয়েছে এবং তাতেই ইতিহাসের অতিরঞ্জন বহু ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে ঘটেছে। 

 চলবে ০০০০০০০০ 

ব্লগার -রবীন মজুমদার 

তারিখ - ১৩/০২/২৫

 https://rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়