(২৪৩) নারদের মর্ত্যে ভ্রমণ - ১৮ তম অধ্যায়

( ২৪৩) নারদের মর্ত্যে ভ্রমণ - ১৮ তম অধ্যায় 


 [ দেবরাজ ইন্দ্রের রাজসভায় বর্তমানে  বিশ্বনায়নের হাত ধরে বিদেশ থেকে কতনা মানুষের নিত্যদিন সমাগম  ঘটছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। অপর একটি কক্ষে রুটিনমাফিক বেশ ব্যস্ততার সাথে বিষয়বস্তু অনুযায়ী মর্ত্য থেকে সংগৃহিত  তথ্যের বিন্যাস হচ্ছে,  এবং তার পরে তাকে পাঠানো হচ্ছে সেই সংক্রান্ত বিভাগে। মূল সভা কক্ষে  বক্তাগণ যার যার নির্দ্দিষ্ট বিষয়ের উপর প্রাসঙ্গিক ভাষণ দিচ্ছেন। এক একজনের ভাষণ শেষে, নানাদিক থেকে ভিন্ন ভিন্ন মতামত ভেসে আসছে আর  এদের সবাইকে নিয়ে ভরপুর বৈচিত্রে ভরা "নারদের মর্ত্য ভ্রমণের" সাথে আমাদের আগামী দিনের পথ চলা শুরু হয়ে গেছে। এখানে একমাত্র নির্ভর যোগ্য  সংবাদ আহরণকারী এবং দেবতাদের প্রশ্নের  উত্তরদাতা সেই মহর্ষি নারদ মহাশয়। ]

ভরা সভায় দেবরাজ ইন্দ্র মহর্ষি নারদকে উদ্দেশে বললেন, এইমাত্র দেবাদিদেব মহাদেব আমাকে তার গুটি কয়েক ভক্তের ফরমাশ ফরওয়ার্ড করে পাঠালেন , আপনি যদি সরজমিনে গিয়ে দেখে আসেন তা হলে ভালো হয়। 

প্রতিনিয়ত এই রকম বহুবিধ কাজের ফরমায়েশ আসতে থাকায় ,মহর্ষি নারদ অবেশেষে  মর্ত্যে একটি অফিস খুলে  বসলেন। আজকাল যাতায়াতের সময়ও বেশি যায় আর খরচও বেশি , ট্রাভেলিং বিল করলে আগের মতো সঙ্গে সঙ্গে টাকাও  পাওয়া যায়না। 

ইন্দ্রের অফিসে দেবতাদের ভক্তদের  ভুরি ভুরি আবেদন পত্র জমা পড়ছে , আজকাল স্ক্রুটিনি না করে কোন কিছু ছাড়া যাবেনা এইটা ভগবান বিষ্ণুর রিসেন্ট সার্কুলার এসেছে। এবার তার জন্য তো একদল এজেন্ট নিয়োগ করতে হবে। প্রচুর কাজের চাপে নারদ বাবুর গান বাজনা শিকেয় উঠে গেছে।  এমতাবস্থায় মাঝে মাঝে ইউটিউবে গান শুনে সংগীতের ক্ষিধেটা মিটাতে হয়। 

এই বার গঙ্গা সাগর কভার করতে গিয়ে নারদ মুনির সাথে এক উলঙ্গ নাগা সন্যাসীর শ্লীল ও অশ্লীল নিয়ে তাত্ত্বিক বিরোধ বেঁধে গেল।  বিষয়টা  ছিল নগ্নতা নিয়ে এবং যে  নগ্নতা অশ্লীলতার সীমা কি ভাবে পার করলো, তা নিয়ে। 

এখানে অশ্লীলতা কি দেখলেন  নারদমশাই, বেশ রাগত সুরে নাগা সন্যাসী মশাই খেপে গেলেন। দীঘির শান্ত জলের মতো নির্বিকার নারদ মশাই বেশ যত্ন করে তার ঝোলার মধ্যে থেকে একটা ল্যাপটপ বের করে শ্লীলতা ও অশ্লীলতার মধ্যে পার্থক্য বোঝাবার জন্য প্যারিসের কোর্টে শিল্পী বনাম সরকারের আইনি লড়ায়ের একটা ব্রিফ রিপোর্ট গুগল সার্চ করে সন্যাসীর কাছে তুলে  ধরলেন।  

ঘটনাটি এমনটিই ছিল, একজন শিল্পী একটা নগ্ন ছবি এঁকেছেন, সেটি  দেখে একজন সিপাই সেই শিল্পীকে অশ্লীলতার চার্জের কেস দিয়ে কোর্টে হাজির করেছেন।  তখন সেই শিল্পী আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেই নিজের প্লিড করে মহামান্য জজসাহেবকে  শ্লীল ও অশ্লীলের পার্থক্য বোঝাতে শুরু করলেন। সবশেষে, তিনি সর্ব সমক্ষে  তার সেই নগ্ন নারীর ছবিটি দাঁড় করালেন, তারপর  রং-তুলি দিয়ে সেই ছবির  পায়ে একটি মোজা পরিয়ে দিয়ে বললেন, হে ধর্মাবতার, এইবার আমি এই ছবিটির  স্বাভাবিকত্বকে মোজা পরিয়ে শ্লীলতকে হরণ করলাম। এখন এটি অশ্লীল ছবিতে রূপান্তরিত  হলো।  শিল্পীর অভূতপূর্ব ডেমোতে  জাজসাহেবের এত দিনের মনের বদ্ধ দুয়ার উন্মোচিত হল এবং তিনি তাৎক্ষণিক সিপাইকে আদেশ দিলেন শিল্পীকে  যথাযথ মর্যাদায় তার স্টুডিওতে পৌঁছে দিতে।  নারদবাবু তার ল্যাপটপটি শাটডাউন  করে সন্যাসীকে বললেন, দেখুন আপনারা যদি শুধু উলঙ্গ থাকতেন তাহলে ভগবানের নেক নজরে পড়তেন না কিন্তু আপনারা আপনাদের পুরুষ  প্রমান করার সার্টিফিকেটসহ দেহে  অলঙ্কারের অতিরিক্ত   ব্যবহারে  তার স্বাভাকিত্বকে একবারে নষ্ট করে দিয়েছেন।  

বর্তমানে,  যেখানে সারা  বিশ্বে শাসকদের রীতি হয়ে গেছে যা কিছু ন্যায় বহির্ভূত জিনিস আছে তাকে  দ্রুততার সাথে তার নাম ও নিশান  মিটিয়ে ফেলো,  কিংবা তাকে ঢেকে রাখ, যাতে করে কেউ  তাকে নিয়ে মাতামাতি করার অবকাশ না পায়।  আর সেখানে তুমি কিনা বাপু, সেই স্রোতের বিপক্ষে গিয়ে তোমার সার্টিফিকেটটা ওপেনলি ঝুলিয়ে দিয়ে  ঘুরে বেড়াচ্ছ।  যদি তোমার এই সার্টিফিকেটটা ভাঙানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছা না থাকে তবে অবিলম্বে আমার সাথে একটা ব্র্যান্ডেড দোকানে  গিয়ে প্যান্টু পরে কভারআপ করো।  স্বর্গ থেকে সেইভাবে একটা অর্থ আমাকে বরাদ্দ করে  দিয়েছে।  আর তা যদি না করো, তবে জেনে রাখো, স্বর্গের অভিবাসন দপ্তর তোমার বর্ষ প্রাচীন অহংকে আঁকড়ে থাকার কেস দিয়ে স্বর্গে প্রবেশের ছাড়পত্র দেবেনা।  তোমাকে ঐ পাহাড়ে পাহাড়ে উলঙ্গ হয়ে সারা জীবন ঘুরে বেড়াতে হবে।  তোমার সামনে দিয়ে ঝকঝকে কাপড় পরিহিত  ঢংগী সন্যাসীরা  ড্যাং ড্যাং করে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে স্বর্গে গিয়ে  অপ্সরাদের নিয়ে মানস সরোবরে জলকেলী   করবে আর সেটা তুমি দূর থেকে দেখবে। অতঃপর সেই নাগা সন্যাসী নারদমশাইকে কথা দিলো তিনি সাধু সমাজে সেই নিয়ে আলোচনা করবেন। 
দিনশেষে নারদ মশাই ভাবলেন, যাক এবার একটা হিল্লে হলো, বছর বছর নগ্নতার এক্সিবিসশনটা হয়তো সামনের বছর দেখা নাও যেতে পারে। এই ভেবে বেশ আত্মতৃপ্তি নিয়ে  গটগট করে দেবরাজ ইন্দ্রের সভায় প্রবেশ করলেন। 

ক্রমশঃ 

ব্লগার -রবীন মজুমদার 

তারিখ - ০৩/০২/২৫

 https://rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়