(২৪৪ ) নারদের মর্ত্য ভ্রমণ -১৯তম অধ্যায়
(২৪৪ ) নারদের মর্ত্য ভ্রমণ -১৯তম অধ্যায়
এ আই কি নিম্নগামী কর্পোরেট সিস্টেমের বাঁচার শেষ অস্ত্র ?
[ইন্দ্রের রাজসভায় প্রত্যেক দিনের মতো এক একজন বক্তা একটি বিশেষ বিষয়ের নিয়ে কথা বলেন। আজকের বিষয় - আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সির( এ আই ) হাত ধরে কি সংকটে নিমজ্জিত (একচেটিয়া পুঁজি) কর্পোরেট সেক্টররা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? আলোচনায় শ্রী শ্রী গনেশ। ]
শ্রীগণেশ মঞ্চে উঠে উপস্থিত দেবতা ও মানুষের উদ্দেশ্যে অভিবাদন জানিয়ে বলতে শুরু করলেন। এতো বড় বিষয়কে সীমিত সময়ের পরিসরে বলাটা আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ। এইটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে , এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কারণ ছাড়া কোনো কার্য্য হয় না।
প্রথমতঃ কর্পোরেট সিস্টেমে সাধারণ মানুষের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা প্রদর্শন করার ব্রত নিয়ে আবির্ভূত হয়নি।
দ্বিতীয়তঃ গণতান্ত্রিক তথা ধনতান্ত্রিক দেশগুলি তাদের এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই বা দেশের সরকার তাদের প্রতি আরোপ করেনি, যাতে করে তাঁরা সমগ্র দেশের গণমুখী আর্থিক পরিকাঠামোর অংশীদার হয়ে সামাজিক উন্নতির ভাগিদার হয়ে উঠুক। তার ফলে সারা পৃথিবীতে কোন স্বাস্থ্যসম্মত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। দেশের আর্থিক স্বাস্থ্যের মেরুদন্ড হচ্ছে সাধারণ মানুষ, তাদের উৎপাদিত ভোগ্যপণ্য কিনে তাদের ব্যবসার অন্যতম উপাদান মূলধনকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেন। তার পরিবর্তে সরকার ও কর্পোরেট উল্টে কালিদাস হয়ে তারা সেই গাছের ডাল কাটছে, যার উপরে তারা বসে আছে। পারস্পরিক প্রতিযোগিতায় হল কর্পোরেট সংস্কৃতির অঙ্গ।
একটি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রিত সীমারেখা দিয়ে রাজনৈতিকভাবে অন্য দেশের সাথে নিজের ব্যাবধান রচনা করে নিজ দেশের সার্বভৌমত্বকে প্রাথমিকভাবে প্রতিপন্ন করে। কিন্তু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, কর্পোরেট দুনিয়াতে কোন সীমারেখা নেই তাই বাইরের শক্তিমান রাষ্ট্রের মদতে সেই দেশের কর্পোরেট এসে অন্য দেশের বাজার দখল করে নেয়। তাই কেউ বাড়ছে আবার সেই সঙ্গে কেউ কমছে। আর্থিক রোগে ক্লান্ত কর্পোরেট মহাঔষধের বিশ্বময় খুঁজে বেড়াচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই নিজেদের রোগটা সাধারণ মানুষের জীবনে সংক্রামিত করে নিজেদেরকে রোগমুক্ত করা। এই ভাবনায় তারা নিজেদের ফাঁদে নিজেরাই পা দিচ্ছেন। সেই বড়ো কর্পোরেটদের তৈরি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি নামক মোয়ার ভগ্নাংশ নিয়ে নিজেদের হৃত আর্থিক গৌরবকে ফিরিয়ে আনার ব্যর্থ চেষ্টা।
এই ভূমিকার প্রয়োজন ছিল। আর্থিক স্বাস্থ্যের পরিমাপ করার থার্মোমিটার হচ্ছে জি ডি পি। সে অনায়াসে মেপে বলে দেয় সারা দেশে প্রোডাকশন ইউনিট এবং সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে সারা দেশে মোট উৎপাদিত আর্থিক মূল্যের নিরিখে নির্দ্দিষ্ট মানের নিচে গেলে অর্থনৈতিক মন্দায় আক্রান্ত বলে জানিয়ে দেয়।
আর এই মন্দার চেহারার প্রতিফলন ঘটে শ্রমের বাজারে। এইটা সহজেই অনুমেয় দেশের উৎপাদনশীলতা কম হবার অর্থ কর্মীর প্রযোজন নেই। বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়।
বেকারত্বের হাত ধরে সামাজিক ভারসাম্যের ক্রমবর্ধমান অবক্ষয় শুরু হয়। এই সবই কর্পোরেট সিস্টেমের সংকটের কারণে রাষ্ট্রের জনজীবনের উপর পরোক্ষ প্রভাব।
কর্পোরেট দুনিয়ার পৃষ্ঠপোষক সেই সব রাষ্ট্রের সরকারের কাছে সুনির্দ্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা না থাকায়, জনসাধারণের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে না পেরে কল্পিত কারণ দেখিয়ে সরকারের সংখ্যা গরিষ্ঠ দলের প্রতিনিধিরা এক বা একাধিক আষাঢ়ে গল্পের অবতারণা করে। এর সাথে কর্পোরেটেরা আপ্রাণ চেষ্টা করে কোন অবস্থায় যেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় তাদের অনাস্থাভাজন কোন রাজনৈতিক দল না আসে। এইসবই হলো কঠিন বাস্তবতা।
আসলে কর্পোরেটের কাছে মূল চ্যালেঞ্জ হলো তিনটি। এক, এ আইয়ের মাধ্যমে কাজের দক্ষতা বাড়ানো।
দুই, উৎপাদনের ব্যয়ভার কমিয়ে নিয়ে আসা।
তিন, বিরামহীনভাবে নিত্য-নতুন উদ্ভাবনের সাথে নিজেদের সংযুক্তিকরন। একটাই অভিমুখ মুনাফা এবং আরো অধিক মুনাফা অর্জন।
কাজের বাজার বিবর্তিত হয়ে সীমিত হচ্ছে মেশিন লার্নিং এক্সপার্টদের , এ আই ইঞ্জিনিয়ার আর ডাটা সায়েন্টিস্টদের মধ্যে।
সীমাহীন সংকটের সূচনা হবে যদি এ আই নির্ভর টেকনোলজির দ্বারা শুধুমাত্র মুনাফা অর্জনই কর্পোরেট হাউসগুলির একমাত্র লক্ষ্য হয়। আবার পাশাপাশি এ আইকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা , পরিবেশ সংক্রান্ত, গবেষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সঠিক ব্যবহার না করা হয়। তাছাড়া, কর্মক্ষেত্রে কর্মহীনদের জন্য যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করা। সর্বোপরি, সরকার যদি প্রয়োজনীয় আইন পাশ করিয়ে কর্পোরেটকে বাধ্য না করতে পারে মানবিক হবার জন্য। পরিশেষে, যদি কোনো আদর্শহীন সরকার রাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকে তাহলে নতুন যুগের সম্ভাবনা সুদূর পরাহত। তাই নিজেদের স্বার্থে জনসাধারণকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে আইনসভার প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে।
সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শ্রীগণেশ তাঁর বক্তব্য শেষ করলেন।
তারিখ - ০৮/০২/২৫
মন্তব্যসমূহ