(২৪৫ ) নারদের মর্ত্য ভ্রমণ -২০ তম অধ্যায়
(২৪৫ ) নারদের মর্ত্য ভ্রমণ -২০ তম অধ্যায়
আগামী দিনে কি এ আই-কে শাসক চাকুরী সংকোচনের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করবে ?
[ইন্দ্রের রাজসভায় প্রত্যেক দিনের মতো এক একজন বক্তা একটি বিশেষ বিষয়ের নিয়ে কথা বলেন। আজকের বিষয়---আগামী দিনে এ আই-কে শাসক চাকুরী সংকোচনের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করবে ? আলোচনায় মহর্ষি নারদ ]
মঞ্চে উঠে মহর্ষি নারদ সব দেবতা এবং অন্যান্য উপস্থিত অতিথিদের প্রতি নমস্কার জানিয়ে তার বক্তব্যের শুরুতে এই বিষয়ের গুরত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করালেন। প্রত্যেক ব্যাবহারকারীদের স্বাধীনতা আছে এ আই প্রযুক্তিকে কি ভাবে ব্যবহার করবেন সেটা তার দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভরশীল।
২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী ভারতবর্ষের সেক্টর ভিত্তিক চাকুরীর পরিসংখ্যান বলছে - কৃষি ক্ষেত্রে ৪৬.৭ % , উৎপাদনের সাথে জড়িত ১১.৪ % , সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় ২৮.৯ % , এবং নির্মাণ শিল্পে ১৩ % ।
অবশ্যিই আমাদের নজর রাখতে হবে কি কি ধরনের কাজের ক্ষেত্রে কর্ম সংকোচনের সম্ভাবনা আছে এবং তার মধ্যে কোন কোনটিতে বিশেষভাবে একই কাজের পুনারাবৃত্তি হয়। যেমন :-
আই টি রিলেটেড প্রোডাকশন জব - কল সেন্টার, ডাটা এন্ট্রি জব কমে যাবে।
ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট যেখানে উৎপাদন হয় সে রকম ক্ষেত্রে চাকুরীর বাজার সংকীর্ণ হয়ে যাবে।
স্বয়ংক্রিয় একাউন্টিং সিস্টেমের উদ্ভাবনে হিসাবরক্ষকদের কাজ কমে যাবে।
আইনজীবী সহকারী এবং তারসাথে সাংবাদিকদের কাজের ধারণধারণ পাল্টে যাবে।
স্বয়ংক্রিয় গাড়ির উদ্ভাবনে পরিবহন ক্ষেত্রে চাকুরী কমবে।
কৃষি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারে অসংখ্য উদ্বৃত্ত শ্রমদিবস তৈরি হবে।
এই যদি বাস্তবতা হয়, তাহলে, শাসক কি ভাবে তার মোকাবিলা করবে না কর্পোরেটদের মদত দেবে, সেটাই লক্ষ্যনীয়।
প্রথমতঃ যে কোন প্রযুক্তিকে কোন বিধি-নিষেধের বেড়া দিয়ে আটকে রাখা যায় না।
দ্বিতীয়তঃ একদল কর্পোরেট হাউস প্রাথমিকভাবে এ আই-এর মাধ্যমে মুনাফা অর্জনকেই তাদের অর্থনৈতিক পুনর্বাসন হিসাবে গ্রহণ করেছে। উদ্বৃত্ত আরো উদ্বৃত্ত মুনাফা যা শ্রমিকদের কম মজুরি দিয়ে লাভের অংশ বৃদ্ধি করা, এটাই তাদের উদ্দেশ্য। বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রি অনুযায়ী প্রোডাক্শনের সাথে প্রত্যক্ষ জড়িত এবং যারা পরোক্ষ ভাবে জড়িত তাদের শ্রমশক্তির খরচ যথাক্রমে, আই টি ও সফটওয়ার সার্ভিসে প্রায় মোট খরচের ৪০-৫৫ শতাংশ। হেলথকেয়ার অর্থাৎ হাসপাতাল, ক্লিনিক, নার্সিং হোমে মোট খরচের প্রায় ৫০ শতাংশ। ব্যাংকিং এবং অর্থকরী সংস্থায় মোট খরচের ৪০ শতাংশ। হসপিটালিটি সেক্টরে প্রায় ৩৫-৪০ শতাংশ। বি পি ও, কল সেন্টারে মোট খরচের প্রায় ৬০ শতাংশ। উৎপাদনের সাথে প্রত্যক্ষ জড়িত তাদের মোট খরচের প্রায় ৪০ শতাংশ। স্বয়ংক্রিয় শিল্পে ১৮ শতাংশ। সাধারণ ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে মোট খরচের প্রায় ২৫ শতাংশ।
তৃতীয়তঃ মুনাফা শব্দটির সাথে শোষণ শব্দটি ভীষণ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, সেখানে কর্পোরেটের মাথায় শোষক পালকটা তাদের নিঃসঙ্গ করে দিয়েছে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। আবার অন্য দিকে এই কতিপয় মানুষেরা একটি সরকারের মূল আর্থিক ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে আছে। আর্থিক বলে বলীয়ানদের গতিবিধি সর্বস্তরে তাই তারা নিজের মতো করে সরকারকে সবসময় প্রভাবিত করে থাকে।
চতুর্থতঃ আর্থিক শক্তির আঁধার গুটিকয়েক কর্পোরেটের কাছে আদর্শহীন রাজনৈতিক শক্তিতে বলীয়ান শাসক নতজানু হয়ে তাদেরই বাগানের পাহারাদার হয়ে সাধারণ মানুষকে কাছ থেকে তাদের আগলে রাখছে।
পঞ্চমতঃ যদি সরকার এ আই করে বেশ কিছু নিদ্দিষ্ট শ্রেণীর চাকুরী সুযোগ সংকুচিত হয়ে যাওয়া কর্মীদের ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা না করে , তবে এটি একটা শক্তিশালী জনবিরোধী হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
ষষ্ঠত: ইতিমধ্যে পৃথিবীর বেশ কিছু শাসক এ আই ব্যবহার করে নাগরিকদের মতপ্রকাশের অধিকার , গতিবিধি ও রাজনৈতিক কার্যকলাপের উপর নজরদারি করতে শুরু করেছে । সব মিলিয়ে আগামীদিনে সাধারণ মানুষের অর্জিত মৌলিক অধিকার সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হবেই।
সপ্তমতঃ সরকার যদি সে ক্ষেত্রে আগাম ইতিবাচক ভুমিকা গ্রহণ করতে না পারে তাহলে, আগামী দিনে সার্বিক রাষ্ট্রীয় সংকট ঘনিয়ে আসবে।
আজকে এই পর্যন্ত থাক এই বলে সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে নারদ মশাই তার ভাষণ শেষ করলেন।
চলবে ০০০০০০০০
তারিখ - ০৯/০২/২৫
মন্তব্যসমূহ