(২৫১) মহাভারতের অন্দরে ও বাহিরে -তৃতীয় পর্ব

 (২৫১) মহাভারতের অন্দরে  ও বাহিরে     -তৃতীয় পর্ব 


                                মহাভারতের ঐতিহাসিক উপাদান-২

   ব্রাহ্মণ্যবাদ ও ব্রাহ্মণের মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। এককথায় শাস্ত্র যাদের ঢাল আর বর্ণপ্রথার বিভাজনকে জিইয়ে রাখা যাদের ব্রত তারাই ব্রাহ্মণ্যবাদের ধারক ও বাহক। তাদের ব্রাহ্মণ হতেই  হবে এমন কোন মানে নেই। ভারতবর্ষ এমন একটা দেশ যেখানে একদল ব্রাহ্মণেরা নিঃস্বার্থভাবে  বেশ কিছু রচনা করতেন অভিমুখ ছিল জনগনের হিতসাধন। তাঁরা মহাভারতে নিজেদের ব্যক্তিগত নাম যশ ছাড়াই সংযোজন করেছিলেন, সেটি বিদেশী সাহিত্যে কল্পনা করা যায় না।  তাছাড়া, লেখার প্রচলন শুরু হলেও অনুলিখন ছাড়া গুরুর মাধ্যমে শিষ্য এই  পরম্পরায় ছাড়িয়ে পড়েছিল। এই পথ দিয়ে মহাভারতের অতিরঞ্জিত  গল্পগুলি ছড়িয়ে পড়েছিল। 

য়ুরোপের বিদগ্ধমহল যাঁরা সুউচ্চ নিজ ভাবনার বেড়াজালে  আবদ্ধ তারা পদে পদে মহাভারতের ছন্দের ধন্ধেতে পরে গিয়ে হোঁচট খেয়ে তাকে মহাকাব্য ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছিলো না। কারণ তাদের সংকীর্ণ জানার রসদে  অনেক কঠিন জিনিসকে কাব্যের মাধুর্যে পরিবেশন করা যায়, সেই ধারণা ছিল না। 

মহাভারতকে ইতিহাস হিসাবে তকমা পাবার জন্য হয়রানি কম হতে হয়নি। সজ্ঞানে  তারা কিভাবে বাইবেল সৃষ্টির পরে জন্মগ্রহন করেছিল তার একটা জন্মপত্র তৈরিতে ব্যস্ত  হয়ে পড়েছিল। ব্যাপারটা আর কিছুই না, আসলে  তাদের সৃষ্টিটা যে বয়োজ্যেষ্ঠ  সেটাই প্রমান করা। আমরা দেখেছি পণ্ডিত মাক্সমুলার সাহেবকে কত না  নাকানিচুবানি খেতে হয়েছিল বেদের জন্ম তারিখকে ম্যানিপুলেট করার জন্য, অবশেষে  টানাটানি করে লাভ না হওয়াতে বেদকেই বড়দা হিসাবে মেনে নিতে হয়েছিল। 

আবার মুশকিল হয়েছিল মেগাস্থিনিসকে নিয়ে , তিনি আবার মহাভারত নামটা তার  খাতায় লেখেন নি বলে সাহেবদের বড্ড অসুবিধার কারণ হয়ে পড়েছিল। 

আসলে মহাভারত ইতিহাস না শুধুই মহাকাব্য, সেটা নির্ণয় না হওয়া না পর্যন্ত মহাভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা খানিকটা অবৈজ্ঞানিক  সিদ্ধান্ত হবার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে ।  


পন্ডিতগণ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ কবে হয়েছিল সেই আঙ্গিকে মহাভারতের ঐতিহাসিক বিশুদ্ধতা নির্ণয় করার চেষ্টা করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধানের  জন্য কতগুলি ক্ষেত্র নির্ধারণ করা জরুরি। সেক্ষেত্রে ভারতীয়  মতকে যদি প্রাধান্য দেওয়া হয়, তাহলে বিষ্ণুপুরাণের ৪ অংশ , ৩৩-৩৪ শ্লোকের বর্ণনায় পাওয়া  যে পুবাকাশে উদীয়মান সপ্তর্ষিমন্ডলের  দুটি তারা, যাদের অবস্থান ছিল সপ্তর্ষিমন্ডলের  ভিতরে একইসাথে অবস্থিত যে  নক্ষত্রটি  প্রদিপ্তমান, তার উপস্থিতি সপ্তর্ষিমন্ডলে একশত বছর থাকে।   কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধত্তোর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া  রাজসিংহাসনে আসীন অভিমন্যু পুত্র  পরীক্ষিতের সময় , তখন ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের ২৮ টি তারকার মধ্যে ১০ নম্বর তারকা হল মঘা নক্ষত্রে সপ্তর্ষি অবস্থান করছিল। তখন কলিযুগ ১২০০ বছর অতিক্রান্ত করেছিল। 


ব্লগার -রবীন মজুমদার 

তারিখ - ০৯/০৩/২৫

 https://rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে

মন্তব্যসমূহ

Aparajita Dasgupta (Jeet) বলেছেন…
যাঁরা মানুষের হিত সাধন উদ্দেশ্যে বেরিয়ে আসতে পারলেন, তাঁরা ব্রাহ্মণ্যবাদ থেকে দূরে থাকলেন এবং ব্রাহ্মণ দ্বারা ব্রাত্য হলেন। ঠিক কথা। মহাভারত মহা কাব্য, ইতিহাস নয়। খুব সুন্দর লিখেছেন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়