(২৫৫ ) জীবন তরঙ্গ
(২৫৫ ) জীবন তরঙ্গ
![]() |
Rabin creation |
ডিসেম্বরের শেষাশেষি , কোভালাম বিচের এখন তাপমাত্রা ১৯-২০ ডিগ্রির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে, যেন মৃদঙ্গের তালে তালে সাগরের তরঙ্গ তীরে এসে তার প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে চাপা অভিমান নিয়ে আবার সাগরের গহন গভীরে হারিয়ে যাচ্ছে। বিরামহীন তার ছন্দময় আসা যাওয়া। হয়তো, সাগরের তরঙ্গের এই প্রশ্নের সাথে তার জীবনের মূল প্রশ্নের কোন একটা আশ্চর্য্য মিল রাজর্ষি দাশগুপ্ত খুঁজে পাচ্ছেন। মূলতঃ তিনি জীবনে শান্তির উৎসের সন্ধান করে বেড়াছেন। সাগরের তরঙ্গ নিশ্চয় ভাবছে যে তারা সাগরের থেকে আলাদা। আসলে তারা নাম ও রূপের ধারণার উপর নির্ভরশীল। কখনও বা তার নাম তরঙ্গ আবার কখনও সে ভূষিত সাগর নামে, একই বস্তুর ভিন্ন নাম, অথচ রূপের পরিবর্তনে ভিন্ন ভিন্ন তার পরিচয়। তরঙ্গ যখন চলে যায়, তখন তার রূপও চলে যায়। সাগরকে তরঙ্গের থেকে তার রূপ কেবলমাত্র আলাদা করে।
ঐ রূপটাই বা কি? সে তো দেশ-কাল-কার্যকারণ ছাড়া কিছু নয়। দেশ-কাল-কার্যকারণ আবার পুরোপুরি নির্ভরশীল তরঙ্গের রূপের উপর। তরঙ্গ চলে যাবার সাথে সাথে তাদের আমরা দেখতে পারিনা। এটাকেই কি মায়া বলে ?
রাজর্ষি দাশগুপ্ত, উচ্চ শিক্ষিত, রুচিবান, সাংস্কৃতিক মনস্ক, প্রথম প্রজন্মের একজন স্বনামধন্য শিল্পপতি, বেশ কয়েকবার বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতির আসনটি অলংকৃত করেছেন। জীবনের মধ্যে গগনে পার্থিব জগতে তথাকথিত বৈষয়িক সাফল্যের পালকগুলি রাজর্ষি দাসগুপ্তের মুকুটে শোভা বর্ধন করছিল। অন্ততঃ তার আশেপাশের লোকজন তাই ভেবে থাকেন। প্রতিনিয়ত তাকে একটা ভাবনা তাড়া করে ফেরে যে, সাফল্য হয়ত এসেছে কিন্তু জীবনের স্বার্থকতা কি এসেছে ? জীবনে পার্থিব সম্পদ হয়ত সুখ দিয়েছে, আনন্দ কি দিতে পেড়েছে ?
রাজর্ষি ভাবছে, সারা জীবনে যতটা সুখ পেয়েছি তার থেকে কয়েকগুন দুঃখ জীবনকে সইতে হয়েছে, তবে এই সুখের মানেটা কি। বার বার এই প্রশ্ন ঘুরে ফিরে উদয় হয়- তাহলে জীবন মানে কি ? নিরবিচ্ছিন্ন শান্তি কি করে পাওয়া যায় ? আর আমাদের স্বরূপটাই বা কি ?
চাঁদিনী রাত, আকাশের দাম্ভিক তারারা জোছনার সাথে কি যেন আলোর খেলায় মেতে উঠেছে। প্রায় ষাট ছুঁই ছুঁই রাজর্ষি বিচে দীর্ঘক্ষণ ধরে বিয়ারের গ্লাস হাতে নিয়ে এই রহস্যময় প্রকৃতির আশ্চর্য্য মোহিনী রূপসুধা আকন্ঠে পান করছে। সমুদ্রের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দমকা বাতাস, তার স্মৃতির পাতা গুলিকে একে একে উল্টে দিয়ে মনের পর্দায় ভাসিয়ে নিয়ে এসে তাকে জীবন্ত করে তুলছে।
ফিরে দেখা সেই প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র জীবন, কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউস, দিনের পর দিন কফির পেয়ালায় ধুয়ো তুলে বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কের বাতাবরণ তৈরি করা , তার জন্য কতরকমের প্রসঙ্গের অবতারণা। বামপন্থী এবং উগ্র বামপন্থী আন্দোলন আর প্রেসিডেন্সি কলেজ তখন ভীষণই সমার্থক। অবশ্যই, তাদের আলোচনার জায়গাটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটাই হবে, সে আর বলবার অবকাশ নেই। তাই আলোচনা প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য ভাবে উঠে এসেছে বহু প্রশ্ন তা কখন , নকশাল বাড়ীর আন্দোলন থেকে বামপন্থীরা কি শিক্ষা গ্রহণ করলো। যোসেফ স্তালিনের মৃত্যুর পরে পরেই গ্লাসনস্তের বীজটা সোভিয়েত রাশিয়ায় কি প্রোথিত হয়েছিল তার সুদীর্ঘ দলিলে কোথায় তার ইঙ্গিত মেলে। আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা এজেন্সী হিসাবে সি.আই.এ-র প্রতিদ্বন্দ্বী কে.জি.বি. না শ্যেনবেত ? হিংস্রতায় কে এগিয়ে - গোয়েবলসের গেস্টাপো না হাইতির প্রেসিডেন্ট দুভ্যালিয়ের তুন তুন মাকুতে বাহিনী ? রাশিয়া এবং চায়নায় গণতন্ত্র আছে কিনা ? মার্কসবাদকে ঠেকানোর জন্য ইংরেজরা কি গান্ধীবাদকে পরোক্ষ ইন্ধন জুগিয়ে ছিল তাকে জনপ্রিয় করতে ? আডাম স্মিথের অর্থনীতি বা কার্ল মার্ক্সের দাস ক্যাপিটাল কোনটা আজকের দুনিয়ার কাছে গ্রহণযোগ্য? আলজেরিয়ায় আফ্রো-এশিয়ান সম্মেলনে সোভিয়েত প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আর্নেস্তো চে গুয়েভারা প্রকাশ্যে সোভিয়েত রাশিয়ার সমালোচনা করাতে ফিদেল কাস্ত্রো এবং চে-র পারস্পরিক সম্পর্কের কতখানি চিড় ধরেছিল ? কে প্রকৃত কমিউনিস্ট - চে গুয়েভারা না ফিদেল কাস্ত্রো ? বলিভিয়া কি ল্যাটিন আমেরিকার দ্বিতীয় ভিয়েতনাম হবে কিনা ?
বর্তমানে সমাজে শিক্ষা, আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন করা, মুক্ত অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের ব্যাপক বৃদ্ধির পরে ভারতীয় নারীরা দীর্ঘদিনের সামাজিক বেড়ার গন্ডি অতিক্রম করেছে আর পাশাপশি শ্রেণীচেতনার উন্মেষ হওয়াতে শূদ্র সম্প্রদায়ের প্রায় অবলুপ্তি ঘটেছে, এমত পরিস্থিতিতে "মনুবাদ" কতখানি প্রাসঙ্গিক ? কেন ব্রাহ্মণরা গৌতম বুদ্ধকে ভগবান বানিয়ে প্রচার শুরু করল? মেঘনাদ বধ কাব্য কি মাইকেলকে একঘরে করে দিয়েছিল? বেদের মতো শ্রুতি, বেদান্তের মতো দর্শন ভারতবাসীকে কতখানি সমৃদ্ধ করেছে
? রামকৃষ্ণ এবং বিবেকানন্দের ঐতিহাসিক ভূমিকা সর্বোপরি রামকৃষ্ণ মিশন ভারতবর্ষকে কতখানি পাশ্চাত্যের কাছে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছে আধ্যাত্বিক ক্ষেত্রে ? বৈষ্ণবপদাবলীর মূল সুরটা কোথায় বাধা - জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার মিলনে না চিরন্তন বিরহতত্ত্ব ? ইত্যাদি ইত্যাদি।
মিলি অর্থাৎ মালবিকা সেনের সাথে এই কফি হাউসেই পরিচয়। বন্ধু দীপাঞ্জনের ছোট মাসির একমাত্র মেয়ে। সিটি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। সুদর্শন রাজর্ষি বরাবরই নারী সঙ্গের ব্যাপারে বেশ উন্নাসিক, বহু নারী তার সান্নিধ্যে আসার জন্য ব্যাকুল, সেটি সে ভালোভাবেই বুঝতে পারত। কিন্তু মালবিকা এক্ষেত্রে এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত, প্রথম দিনেই রাজর্ষিকে বাধ্য করেছিল তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। সাধারণ বাঙালি মেয়েদের থেকে একটু সামান্য লম্বা, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, মেদহীন কটি, উন্নত কিন্তু সংযত বক্ষ, শাড়ির উপর থেকে নিতম্ব ও উরুর সু-গঠনটা দৃষ্টিনন্দন , গোটা শরীরটাকে পেঁচিয়ে ধূসর রঙের শাড়ির উপর বাদামি কল্কের ছাপগুলি যেন বলতে চাইছে, দেখ আমার কি অবাধ যাতায়াত তোমাদের দৃশ্যবস্তুর আকর্ষণীয় বিভিন্ন প্রদেশের উপর যা তোমরা দৃষ্টি দিয়ে কামনা করে থাক । আয়াত চোখ, দৃষ্টিতে গভীরতা, পটে আঁকা দুই ভুরুর মাঝখানে ধূসর রঙের টিপ, এক রাশ চুল সারা পিঠেকে আড়াল করে রেখেছে, প্রসাধনের লেশ মাত্র নেই , কাঁধে একটা কাপড়ের ব্যাগ , সম্ভবতঃ কলেজের বই খাতা আছে, হাতে পাবলো নেরুদার কবিতার বই ,সব মিলিয়ে আগাগোড়া এক আভিজাত্যের নীরব অভিব্যক্তি তার শারীরিভাষায় বলে দিচ্ছে ।
যাইহোক, আজকের দিনটার একটা বিশেষ তাৎপর্য্য ছিল , আজকে আমরা এবারকার রবীন্দ্রাজয়ন্তী পালন করবো, তার একটা রূপরেখা তৈরি করা হবে আর তার জন্য মালবিকার এখানে আসা। আলোচনার শেষে প্রত্যেকবারের মতো আমার উপর সমস্ত অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পড়লো , কিন্তু এবারে আমার উৎসাহের মাত্রা আরো বেড়ে গেল, কারন আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী হিসাবে মালবিকা থাকবে। মনে ভালোলাগার এক হালকা ঢেউ বয়ে গেল।
পূর্ব-নির্ধারিত সময় অনুযায়ী, রাজর্ষি তাদের লেকটাউনের বাড়ি থেকে নিজেই ড্রাইভ করে বিরাটিতে মালবিকাদের বাড়িতে ঠিক ঘড়ির কাটায় সকাল দশটায় এসে উপস্থিত হোল। আজকের দিনটা ঠিক করা ছিল , মঞ্চের ও আলোর পরিকল্পনা, অনুষ্ঠানের সূচি নির্মাণ , সেই অনুযায়ী সার্বিক আয়োজন।বাগানবাড়িটা ভালো করে জরিপ করে মঞ্চ নির্বাচন, দর্শক বসবার ব্যবস্থা। যে সব শিল্পী অংশগ্রহণ করবে , তারা কি কি বিষয় নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত হবেন , সেই অনুযায়ী গোটা অনুষ্ঠানসূচিকে ভাগ করে পর পর সাজানো , তার আলোক ও মঞ্চ সজ্জার রূপরেখা তৈরি। এই অনুষ্ঠানের বিশেষত্ব যে, শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের পাশাপাশি দর্শন ইন্দ্রিয়কে সজাগ রাখা। মিলির ধারণা যে, কোন বস্তুর উপস্থাপনার ক্ষেত্রে উভয় ইন্দ্রিয়ের যোগ্য সংগত হলে, অবশ্যই ভালোলাগাকে প্রাধান্য দিতে হবে, তবেইতো দর্শকের মনের গভীরে সে দীর্ঘ দিন ধরে বাস করবে। আর মাত্র চার-পাঁচ ঘন্টায় রবীন্দ্রনাথের বিরাটত্ব এবং বহুগামিতাকে রেখাপাত ব্যাতিত আর কিছু করা সম্ভব নয়।
ঘন্টা খানেকের মধ্যে তারা বাগানবাড়িতে এসে পৌছাল। গাড়ির মধ্যে তাদের উল্লেখ করার মতো কোন আলোচনা হলনা। শুধু মাত্র, একপ্রকার পারিবারিক বৃত্তান্ত ও নিজ নিজ প্রোফাইল আর এম্বিশনের গল্পের মধ্যেই সীমাবধ্য রইল।
বাগানের ম্যানেজার ভোলাবাবু অফিস ঘরে অপেক্ষা করছিলেন। ঘন্টাখানেকের মধ্যে ডেকোরেটার্সের সাথে ঘোষ ইলেট্রিকের প্রতিনিধি এসে উপস্থিত হলেন। স্থির হলো, পুরো জায়গাকে জরিপ করে মূল মঞ্চ স্থান নির্ধারণ করা।
প্রায় পাঁচ একর জমির উপর বাগানবাড়িটা। ভিতরের যে পথটি সোজা নাট মন্দিরে গিয়ে মিশেছে তার দু-পাশে কত জানা-অজানা বাহারি ফুলের গাছ পথের উপরের অর্ধচন্দ্রের মতো লোহার পাতগুলিকে এক হাত অন্তর দাঁড়িয়ে থাকা দুই পাশের লম্বা লম্বি ভাবে দাঁড়ানো রডের সাথে আস্টেপিস্টে মিলে আছে আর তাকে আলিঙ্গন করে আছে লতানো গাছগুলি। সারা রাস্তাকে মুড়ে রেখেছে ছোট ছোট নুড়ি পাথর। বাগানবাড়ির চারপাশে যেখানে আট ফুট উচ্চতার প্রাচীর দিয়ে ঘেরা আছে , তার ভিতরটা ঠিক সারিসারি সুপারি গাছ সৈনিকের মতো পুরো বাগানটাকে ভিতর থেকে ঘিরে রেখেছে । শ্রেণিবদ্ধভাবে আম গাছ গুলি দাঁড়িয়ে আছে এক একটা সারিতে। বাগানের একটু ভিতরে প্রায় এক একর জমির মাঝে সান বাঁধানো জলাশয়, আর তাকে প্রায় জড়িয়ে বেড়ে উঠেছে নারকেল গাছগুলি। জলাশয়ের পারে বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে ঔষধি গাছের সমারোহ। গাছগুলির পাতা ভেদ করে সূর্য্যের আলো বাগানে এক আলো-আঁধারির রোমাঞ্চকর পরিবেশ তৈরি করেছে। অবশেষে, বর্ষ প্রাচীন নাট মন্দিরটাকে মঞ্চ হিসাবে ঠিক করা হলো।
বিয়ের পরে পরেই রাজর্ষি লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স-এ রিসার্চ ফেলো হিসাবে যোগদান করে। সেখান থেকে তার থিসিস আন্তর্জাতিক প্রথমশ্রেণীর প্রকাশনাগুলিতে বিশেষ সমাদৃত হয়। তার পর মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজে যোগদান করে। বিদেশের চাকরি ছেড়ে দিয়ে দেশের মাটিতে ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানি তৈরি করে ব্যবসা শুরু করেন। তার পর একের পর এক উত্তরণ।
মালবিকার আকস্মিক মৃত্যুটা জীবনের কঠিন লড়াইয়ের সৈনিককে একেবারে একা করে তুলেছিল। জীবনের দীর্ঘ লড়াইয়ে মিলিকে ভীষণভাবে পাশে পেয়েছিলেন। তার না থাকাটা এক বিরাট শূন্যতা।
অনেকদিন ধরেই ভাবছিলেন , জীবনে অনেক কিছুইতো হলো, এবার ছাড়ার পালা। বড় ছেলে সপ্তর্ষির কোম্পানী পরিচালনার ক্ষেত্রে গতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি অনেক কাছ থেকে দেখে রাজর্ষিকে মুগ্ধ করেছিল। একদল দক্ষ পরিচালক মন্ডলীর সুযোগ্য নেতা হিসাবে সপ্তর্ষির কর্ম পদ্ধতি ACRM Journal of Business and Management Research এর বেশ কয়েকটি সংখ্যায় ধারাবাহিকভাবে বেড়িয়ে ছিল। কেউ কেউ আবার ম্যানেজমেন্ট গুরু সি. কে. প্রহ্লাদের ম্যানেজমেন্ট থিওরির সঠিক প্রয়োগ কৌশলী হিসাবে সপ্তর্ষিকে মনে করে। কোম্পানি-র বিশেষ সাধারণ সভার আয়োজন করে সব শেয়ার হোল্ডারদের উপস্থিতিতে সর্ব সম্মতিক্রমে সপ্তর্ষিকে কোম্পানীর প্রধান কর্নধার পদে অভিষিক্ত করা হয়।
জীবন-যুদ্ধের প্রান্তে এসে রাজর্ষি ভাবতে লাগল এই জীবনটাতো অন্যান্য প্রাণীদের মতো জীবিকা অর্থাৎ এই স্থুল শরীরের অভাব অভিযোগ পূরণের জন্য অতিবাহিত করেছে। এক কথায় খাদ্য সংগ্রহ আর ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ। এই পরিবারে, এই সমাজে এরা একান্তই আমার, ব্যাঙ্কের অর্থকরী, গাড়ি বাড়ী সবই আমার, এদের আনন্দে আমার আনন্দ, এদের দুঃখে আমার দুঃখ, এই পর্যন্ত। তার বাইরে ভাববার অবকাশ পায়নি, কেননা এইসব পাওয়ার জন্য আমার দেহ ও মন নিয়োজিত ছিল। এই মায়ার সংসারে প্রতি মুহর্তে স্বপ্নভঙ্গের, মোহ ভঙ্গের ব্যাথা। এই দুঃখ যদি জীবনের প্রকৃত ফল হয়, তাহলে উন্নততর জীবন কি ? আমাদের জীবনটা কার দ্বারা পরিচালিত ? জীবনের নিয়ন্ত্রণ কোথায় ? আমি কে ?
আজ একা সমুদ্রের কিনারায় বসে এর উত্তর খুঁজতে লাগল। অজ্ঞান অনেকটা চোখের উপর ছানির মতো, দৃষ্টিকে স্বচ্ছতা থেকে অনেক দূরে নিয়ে যায়। চক্ষু নামক ইন্দ্রিয়ের পিছনে থেকে যে এই দেখার কাজটি করে তা হল মন এবং সেই মনকে পরিষ্কার রাখার অনুশীলনটা চালিয়ে যেতে হবে। জানার কাজটা, যেটা সর্বাজ্ঞে করা উচিত ছিল, সেটাই আর হয়ে উঠেনি।
বেদান্ত বলেছে "আমি কে"? এটা যদি কেউ জানে তাহলে তার জীবনে দুঃখ বলে কোন কিছুই থাকবেনা।
ব্লগার -রবীন মজুমদার
তারিখ -১৫/০৩/২৫
rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে।
মন্তব্যসমূহ