(২৫৬) ভারতীয় সমাজে নারীর উত্তরণ ও অবমননের মানচিত্র -১ম পর্ব
(২৫৬) ভারতীয় সমাজে নারীর উত্তরণ ও অবমননের মানচিত্র -১ম পর্ব
![]() |
এঁকেছে -রবীন মজুমদার |
ভুলভুলাইয়া
সেই দিনের সামাজিক রীতিগুলির বেশ খানিকটা অংশ সময়ের হাত ধরে আইনের রূপ নিলো আর যারা জায়গা পেলো না, তারা রয়ে গেল সংস্কার হিসাবে। তাই রীতি সেই অর্থে আইনের পিতৃত্বের দাবিদার। পূর্বে সমাজপত্তনের পর রীতি ছিল বটে কিন্তু রীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে নীতি কিছু ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষের আলমারিতে ঠিক এখানকার মতোই আবদ্ধ ছিল।
অর্থনীতির পট পরিবর্তনের ধারাবাহিকতার সাথে ঐতিহাসিকভাবে নারীদের উথান পতনের মানচিত্রটার বাস্তবতাকে অনুসন্ধানই এই ব্লগের উদ্দেশ্য।
বৈদিক যুগ
সময়কালটা খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ বছর পূর্ব থেকে শুরু। আর্যরা হিন্দুস্থানে এসেছে, শুরু হয়েছে বৈদিক যুগ। যুদ্ধ-বিগ্রহের নিষ্পত্তিতে সেদিনের যাযাবর কালক্রমে তারা স্থিতু হয়েছে। সামাজিক আবরণগুলি ধীরে ধীরে ঘষে পড়েছে। আগে যে গোষ্ঠী, কৌম নামক আবরণের বিলুপ্তি ঘটিয়ে এলো যৌথ পরিবার এবং পরবর্তী সময়ে এক পুরুষের পরিবার। এইভাবেই সমস্ত গোষ্ঠীগুলি একইভাবে বিবর্তিত হতে লাগলো।
সমাজনীতির সাথে অর্থনীতির একটা গভীর সম্পর্ক কিন্তু পরিচালক হলো সেই একজন, অর্থনীতি। জীবন মানেই তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লাগাতার সংগ্রাম।
বিকল্পের সন্ধানে
বিকল্পের খোঁজ তখনিই দরকার পরে যখন বর্তমান আর মানুষের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হয় না। ঠিক এই কারণেই আর্য্যরা যাযাবরের জীবন যাত্রায় বাধ্য হয়েছিল। ক্রমান্বয়ে স্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিশ্রান্ত মন খুঁজে বেড়াচ্ছিল এইটা স্থায়ী আস্তানার। সেই লক্ষ্য খাইবার গিরিপথের সব প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে অবশেষে তাদের ইপ্সিত স্থান ভারত ভূমিতে প্রবেশ করেছে। স্বেচ্ছায় মেদিনীর অংশ কেউ ছাড়তে রাজী ছিল না, তাই অনিবার্যভাবে যুদ্ধ সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। যারা প্রতিনিয়ত যুদ্ধের আবহাওয়ার বিশুদ্ধ, তাদের কাছে সেটা কোন কঠিন বস্তু নয়। ঘোড়া আর লোহার ব্যবহার তাদের বাড়তি শক্তি জুগিয়ে ছিল। অবশেষে জয় এলো, এবার সামনে বড় পরীক্ষা , যেটা তারা ইতিপূর্বে করেনি। সেটা ছিল সমাজ গঠনের মতো সর্বাপেক্ষা কঠিন কাজ, তার মধ্যে পরিবার সংগঠন আজ পর্যন্ত পৃথিবীর অন্যতম জটিল প্রক্রিয়া।
সময়ের সাথে সাথে হাত মিলিয়েছে প্রাগার্য্যদের সাথে, বিনিময় হয়েছে শিক্ষার, সংস্কৃতির। শিখেছে চাষ-আবাদ, উৎপাদনের সাথে তারা যুক্ত হয়েছে। সমগ্র প্রক্রিয়ার অভিমুখ হচ্ছে নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখা। তাহলে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য উৎপাদন আর উৎপাদনের জন্য কর্ম আর যেহেতু উৎপাদন অর্থ উপাৰ্জনের পথ সুগম করে দেয় এবং বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত পূরণ করে।
যাযাবর আর্য্যদের জীবনযাত্রা
এইতো সেইদিন পর্যন্ত এই সবের বালাই আর্যদের সমাজে ছিল না। ছোট ছোট গোষ্ঠী ছিল নারী-পুরুষ একসাথে মিলে মিশে পশুপালন আর শিকার করে খেয়েদেয়ে তাঁবুতে শুয়ে থাকতো আর রাতে যাদের পাহারার দ্বায়িত্ব দেওয়া হতো তারা পালা ক্রমে রাত পাহারা দিতো। সেদিনগুলিতে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাবার প্রশ্নে ছেলে আর মেয়েরা একই সাথে যুদ্ধটা করতো আর সেই জন্যিই তাদের মধ্যে লিঙ্গ ভেদাভেদ ভুলে সহযোদ্ধা হিসাবে পারস্পরিক সৌহার্দের সম্পর্কটা গড়ে উঠেছিল।
যতিহীন যৌনতা
রাতের বেলায় যখন মদনদৈত্য চুপিসারে নারী-পুরুষের ঘাড়ে ভর করতো তখন হাতের সামনে পুরুষ যে কোন নারীকে আবার নারীও যেকোন পুরুষের সাথে ভূত ছাড়াতে যেত। যাদের স্থায়ী ঘরবাড়িই নেই তাদের আবার শোয়া বসার নিয়ম বলে কোন বস্তুই ছিল না।
উহ ! বড্ড কষ্ট হতো যখন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি হতো কিংবা ঝড়ের পাগলা নাঁচন শুরু হতো , তখন মনে হতো কালকের দিনটা দেখতে পাবো কিনা।
শুধু লড়াই করে বেঁচে থাকা। এক গোষ্ঠীর সাথে অন্য গোষ্ঠীর লড়াই। যার শক্তি বেশী সে জোর করে পশুগুলিকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে আর সঙ্গে নিয়ে যেত হেরে যাওয়া গোষ্ঠীর তাজা তাজা মেয়েদের। পশু আর মেয়েমানুষদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ ছিলো না।
ক্রমশঃ
ব্লগার -রবীন মজুমদার
তারিখ -২৪/০৩/২৫
rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে।
মন্তব্যসমূহ