(২৬৩) হর্ষবর্ধন আর গোবর্দ্ধন
(২৬৩) হর্ষবর্ধন আর গোবর্দ্ধন
প্রতারণা এমন কোন দুর্লভ বস্তু নয়। সেটা অবশ্য খোলা বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না। সেকালে এবং একালে একই ভাবে সেটা পাওয়া যেত। সে একান্তই অন্তঃকরণের সামগ্রী। কয়েনের একপিঠে যেমন সততা অবস্থান করে তার বিপরীত পিঠটা প্রতারণার জন্য বরাদ্দ থাকে। কিন্তু যাদের প্রতারণা করা হয় তারা কিন্তু বিশেষ সততার সাথে প্রতারকদের সৎ বলে বিশ্বাস করে থাকে। যেমনটি দর্পনের দিকে তাকালে যে প্রতারকের প্রতিচ্ছবি প্রতারক হিসাবে আসবে আবার সৎ মানুষের প্ৰতিবিম্বতে প্রতারক প্রতিফলিত হবে না। উদ্দেশ্য পূরণের রাস্তাটা যখন সুগম হয় না, তখন মানুষ প্রতারণার আশ্রয় নেয়। এটি বৃহৎ পরিসরে দুর্বল রাজনীতিবিদ এবং সমাজের মাথাদের সাধারণ মানুষকে বোকা বানানোর উৎকৃষ্ট অস্ত্র হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
প্রেম করতে গেলে শিক্ষিত হতে হয়না। এটা মনুষ্য জন্মের সাথে প্রকৃতি ফ্রি দিয়ে থাকে। আবার ঘৃণার ক্ষেত্রে ও তথৈবচ। উভয়ের জন্ম একই সূত্র থেকে, সেই অন্তঃকরণ। প্রেম যখন ফলদায়ী হয়না, তখনিই কিছু মানুষের হৃদয়ে ঘৃণার উদ্বেক হয়।
মজার ব্যাপার হল যারা সৃষ্টি করেন তারা কিন্তু সিদ্ধান্ত নেন না কোনটা কখন ব্যবহার হবে। যার এটম বোমা তৈরি করেছিল তারা কোন দিন সেটা ব্যবহার করেনি। তার পরিবর্তে গুটিকতক রাজনীতির ব্যাপারীরা আর সমাজের চূড়ামণিরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জাপানের মাটিতে বোমাটাকে টপকে দিয়ে মানুষ মারতে।
সর্বাজ্ঞে সৃষ্টিকর্তা তারপরে বিভিন্ন ভাষ্যকার যেমন বিজ্ঞানী ও দার্শনিকরা মানুষকে যুগে যুগে সত্যকে দর্শন করবার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে কিন্তু সমাজে সত্য আজও সেটি প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। কারণ সমাজপতিরা সত্যকে চায়নি বলে।
জলের পিতৃপুরুষ ছিলেন সৃষ্টিকর্তা, তিনি যে ধর্ম পালনের শিক্ষা জলকে দিয়ে এসেছেন , আজও সে ধর্মকে পালন করে কখন সে তার চলার পথকে উর্দ্ধগামী করে নি।
আবার সমাজের রূপকাররা বহু পরিশ্রম করে মনুষ্য নামক জীবটি কি করে সত্যিকারের মানুষ হতে পারে তার জন্য কিছু রীতিনীতির প্রবর্তন করেছিলেন, যেটি 'ধর্ম' নামে খ্যাত। প্রকৃতির জগতে মানুষ ছাড়া আর সব সৃষ্টিই নিজ নিজ ধর্ম পালন করে আসছে। আবার সেই মর্ত্যের জীবরা সৃষ্টিকর্তাদের উদ্দেশ্যকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে রাজনীতির কারবারি আর সমাজপতিদের যৌথ উদ্যোগে ধর্ম থেকে উৎসারিত সত্যকে কতখানি সমাজে ব্যবহার করা যেতে পারে আর কতটা বিকৃত করতে হবে তার খসড়া সেই প্রথম দিন থেকেই তৈরি করে রেখেছিলো। যা যা যুগ যুগ ধরে রাষ্ট্র ও সমাজে চলে আসছে।
অন্ধকারের সুরমায় সেই কবে মানুষ তার চক্ষুদ্বয়কে রাঙিয়ে ছিল, আজও আলোর জল দিয়ে চোখটা পরিষ্কার করে নি।
সেতারের রাগ রাগিণীর বৈচিত্রকে একটা নির্দ্দিষ্ট লক্ষ্যে না পৌঁছাতে পারলে হৃদয় মনোগ্রাহী সুর হয় না আর মনগ্রাহী না হলে শ্রোতা তাকে গ্রহণ করেন না। তাই সুরকারকে প্রত্যেকটি সুরকে নিয়ে সাধনা করতে হয়। বৈচিত্রময় চরিত্রের ঐকতানই একটি সুসংঘটিত সমাজ।
সেতারের প্রত্যেকটি তার যদি সঠিক স্পর্শের অনুভূতি না পায়, তবে সেটি বেসুরো হয়ে বাজে। সঠিক সুরকার সাধনার মাধ্যমে তাকেই পেতে চায়। সাধনা মনোসংযোগ ও অধ্যবসায়ের যৌথ ফল। ঠিক তেমনি ভারতবর্ষের মতো বৈচিত্রময় জাতি-বর্ণে বিভাজিত সুরগুলির মধ্যে ঐকতানের পুঁজির বিকাশ ঘটিয়ে সেই সুরগুলিকে শ্রুতিমধুর করতে গেলে সর্বাগ্রে রাজনৈতিক দলগুলির আদর্শগত ভাবধারা উন্নতি ঘটাতে হবে। সুর না জানা মানুষের হাতে সেতার ধরিয়ে দিলে, তার আওয়াজ সব সময় বেসুরো হয়ে বাজবে।
রাজনীতিতে নৈতিকতার সাথে বাস্তবতার বিস্তর ফারাক। অধিকাংশ মানুষ একটা বিশ্বাসকে আঁকড়ে সারা জীবন কাটিয়ে দেয়, যাকে প্রথা বা সংস্কার বলা হয়। এই অন্ধ বিশ্বাসের ভিত্তি এমনিই কঠিন সেখানে যুক্তি পৌঁছাতেই পারেনা। ভারতীয় সমাজে স্তর বিভাজন এবং প্রথা দীর্ঘদিন ধরে বংশ পরম্পরায় চলে আসছে। এই বিভাজনটা শাসকের বিরাট অস্ত্র।
যে কোন প্রতিষ্ঠান, সেটি রাজনৈতিক দল কিংবা কোন সামাজিক প্রতিঠান হোক আর তার অংশগ্রহণকারী যদি মানুষ হয়, তাহলে পদে পদে বিরুদ্ধ মতের সাথে সংঘর্ষ করে একটা নির্দিষ্ট মতামত গৃহীত হয়, এটাই বাস্তবতা। কিন্তু এই বাস্তবতার পশ্চাতে কি কারণ আছে সেটা প্রত্যেকেই নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাই সমাজটাকে পাল্টানো ভীষণ কঠিন কাজ। সমগ্র মানবজাতি যেদিন বুঝবে, সেদিন হয়তো স্বার্থক হবে আর বর্তমান জোড়াতালি দিয়ে চালাতে হবে। প্রতিবন্ধকতার কারণগুলির মধ্যেই লুকিয়ে আছে পরিবর্তনের বীজ। দীর্ঘ তার যাত্রা পথ।
ব্লগার -রবীন মজুমদার
তারিখ -১৮/০৪/২৫
rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে।

মন্তব্যসমূহ