(২৬৪) তাই চেয়ে চেয়ে মরি
(২৬৪) তাই চেয়ে চেয়ে মরি
ভারতীয় সমাজে নারীর উত্তরণ ও অবমননের মানচিত্রটাকে চিত্রিত করতে গেলে শুধু মাত্র নারীকে আলাদা করে উপস্থাপন করলে সমগ্র পটভূমিটা একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের আকার ধারণ করবে। তৎকালীন সাহিত্য এবং ইতিহাস থেকে যৎকিঞ্চিৎ সহযোগিতা পেয়েছি তারই আলোকে এই প্রবন্ধটি লেখার দুঃসাহস হয়েছে। সমাজ যদি একটা সম্পূর্ণ দেহ হয়ে থাকে তাহলে নারী একটি অপরিহার্য্য অঙ্গের সমতুল্য।
***************************************
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, মানুষ নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি যুগে যুগে সময়ের চাহিদায় নিজেকে বদল করেছে। সময়ের চাহিদার সঠিক বিশ্লেষণের সাথে জড়িয়ে আছে তার পরিবর্তনের কারণ। আজকে যেমন শিল্প ভিত্তিক সভ্যতার বিকাশের পিছনে মানুষের চাহিদাই প্রধান কারণ। তাই মানুষের পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত যা কিছু আছে, তাকে পূরণ করার লক্ষেই অসংখ্য শিল্প গঠন। তারই লক্ষ্যেই উৎপাদন, বিপণন এবং সমগ্রটাকে নিয়ে অর্থনীতি। সেটি পূর্বেও ছিল কিন্তু বর্তমানকালে রাষ্ট্র, সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রধান চালিকা শক্তি এই অর্থনীতি।
***************************************
দিন যত যাচ্ছে মানুষের বোধের বালান্সশিটটা অন্তর থেকে মূল্যবোধ ডেবিট হয়ে গিয়ে বস্তু জগতে গিয়ে ক্রেডিট হচ্ছে। এই অর্থের উপর আধিপত্য বিস্তারের জন্য ভীষণ নগ্ন ভাবে সব রকম সমলোচনাকে গায়ে না মেখে দেশের বাইরে বিভিন্ন শক্তি যেমন ব্যস্ত, ঠিক তেমনি দেশের অভ্যন্তরে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলিও এই প্রতিযোগিতায় নীতির বালাই না করে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করছেন।
***************************************
কিছুদিন যাবৎ ভারতীয়দের ভাবনা-চিন্তার জগতে একটা প্রকান্ড পাথর এসে শান্ত মনের দীঘির জলকে আন্দোলিত করে তুললো। একদিন যে পাশের বাড়ির মানুষটির হাসি ধ্বনিত হতো প্রতিবেশীর হৃদয়তন্ত্রিতে, তার বেদনার সুরটা প্রতিধ্বনিত হতো প্রতিবেশীর মর্মে। হঠাৎ একদিন মহল্লায় মহল্লায়, রাজ্যে রাজ্যে গুঞ্জন উঠলো সেই প্রতিবেশী একজন ছদ্মবেশী মৃত্যুদূত। কিন্তু সে জানে তারা উভয়েরই একই ব্লাড গ্রূপের অধিকারী। উপাসনার স্থলের পার্থক্য ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়লো না কিন্তু উভয়ের প্রার্থনার উচ্ছাদেশ একই। আদেশ এলো , তোমরা বড়োই অবুঝ! সাধারণ মানুষের বড্ড কষ্ট হচ্ছিলো তা বুঝতে। এই কঠিন জিনসিটা সহজ করে বোঝানোর জন্য গভীর রাতে জানলা দিয়ে আগুনের লেলিহান শিখার বিধংসী চেহারা দেখে, সকালবেলায় ধংসস্তূপের করতলে বসে তীব্র হতাশায়, দুর্বল চিত্তে মেনে নিতে বাধ্য হলো আর সেই ছাইভস্মে তারা বিসর্জন দিল দীর্ঘদিনের প্রীতি এবং ভ্রাতৃত্ববোধকে।
***************************************
অবশেষে ক্ষমতার হাতবাক্সে জমা পড়লো দুটি ভিন্ন সম্প্রদায়ের আনুগত্য। নাটকের শেষে গ্রিনরুমে বসে উভয় সম্প্রদায়ের কর্তা ব্যক্তিরা তাদের মঞ্চে অভিনীত নাটকের প্রতিক্রিয়া দেখে যারপরনাই উৎসাহিত হয়ে পরস্পর পরস্পরকে আলিঙ্গনে বদ্ধ হলো। আর সেদিন দর্শকদের অতি সুপ্রাচীন আলিঙ্গনটি উবে গিয়ে সেই রঙ্গমঞ্চের কুশীলবদের গ্রিনরুমে এসে কড়া নাড়লো।
***************************************
সমাজ একটা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত উপাদানের যোগের সমষ্টি। সুতরাং একটা উপাদানকে টান দিলে ভীষণ প্রাসঙ্গিকভাবে অন্যেরা এসে যায়। একটি নির্দ্দিষ্ট উপাদানের উপর অন্যান্য উপাদানের প্রভাবগুলি যদি বিশ্লেষিত না হয় তাহলে একটা খাপছাড়া উপস্থাপনা হয়ে যাবে।
***************************************
বাসনার ক্রোড়ে চাহিদার জন্ম। যেহেতু সমাজ একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে গণ্য হয়ে এসেছে , তাই তার পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু রীতিনীতির প্রচলন ছিল। রীতিনীতি আসলে একটা বাঁধন আর সেই বাঁধনের রশিটার শেষ প্রান্তটি ধরা থাকে সমাজের অথবা রাষ্ট্রের দন্ডমুন্ডের কর্তাদের হাতে। সেই কর্তাদের ধ্যান ধারনাই প্রতিফলিত হয় আচার আচরনের বিধি নিষেধের উপর। সেদিনের সেই প্রথা নাম বদল করলেও তার উদ্দেশ্যকে আজও পাল্টাতে পারেনি। ইতিহাসের অধিকাংশ স্থানে বিজয়ীদের কথা লেখা আছে, খুব কমই আপামর সাধারণমানুষের কথা পাওয়া যায়। ইতিহাস থেকে শুরু করে তৎকালীন সাহিত্যেও ভীষণ কৃপনভাবে সাধারনের কথা প্রতিফলিত হয়েছে।
ব্লগার -রবীন মজুমদার
তারিখ -১৯/০৪/২৫
rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে।

মন্তব্যসমূহ