(২৬৫) শব্দ তুমি কি অপ্রতিহত -
(২৬৫) শব্দ তুমি কি অপ্রতিহত -
বহুদিনের আগের কথা, সৃষ্টি কর্তা যখন আমাদের মানুষ বানিয়ে মর্ত্যে পাঠালেন, তখন সবই দিলেন, শুধু একটা জিনিস ছাড়া। পৃথিবীতে আসার পর মানুষকে বেশ কিছুদিন প্রভিশনাল পিরিয়ডে রেখে দিয়ে অপেক্ষা করলেন, দেখতে চাইলেন , ভাষা ছাড়া মানুষ কি ভাবে বাঁচতে পারে, তার প্রতিক্রিয়া দেখতে।
দূর হতে তোমারে দেখেছি -
দূর থেকে সৃষ্টি কর্তা দেখলেন কথা বলার জন্য মানুষের সেই প্রাণান্তকর আকুতি। তাই দেখে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলেন না। মুখে বসিয়ে দিলেন শব্দকে আর সেই থেকে মানুষকে তার আমৃত্যু পর্যন্ত ব্যাবহার করার সত্ত্ব দিয়ে দিলেন। প্রকৃতির দানে জ্ঞানেন্দ্রিয় আর কর্মেন্দ্রিয় সচল হয়ে উঠল। এই পর্যন্ত সব ঠিক ছিল।
এলো মানুষ ধরার দল গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্য্যহারা অরণ্যের চেয়ে -
সৃষ্টির এই অমোঘ প্রক্রিয়াকে অস্বীকার করে ক্ষুদ্র গোষ্ঠী এক অভিনব আবদার নিয়ে হাজির হলো। তারা বললো, বাপু আমরা ঈশ্বরের প্রতিনিধি, তোমাদের ঈশ্বর কি দিয়েছেন জানিনা, কিন্তু আজ থেকে ওই তোমাদের ইন্দ্রিয়-ফিন্দ্রিয় বলে যা কিছু আছে তা আমাদের কাছে জমা রাখতে হবে। আজ থেকে একক গীতির দিন শেষ, তোমার সবাই আমাদের রন্ধনশালায় যে গান রচিত হচ্ছে সেই গানই সমস্বরে গাইবে।
কালো ঘোমটার নিচে আজ অপরিচিত তোমার পূর্বের রূপ -
অনেকদিন পেয়াদাদের কোন কাজ কর্ম না থাকায় তারা ভাতঘুমে আছন্ন। আজকাল তাদের ওপরতলার লিস্ট অনুযায়ী কাজ করতে হয়, আর যেগুলি পূর্বে লিস্টে ছিল সেগুলিকে বর্তমানে রহিত হয়ে অতীতের গর্ভে বিলীন। হঠাৎই উপরতলা থেকে আদেশ পেয়ে প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে কান পেতে তারা শুনতে লাগলো, কেউ কি সোলো গান করছে কিনা।
আজ খেলা ভাঙার এই খেলা-
সেই ঈশ্বরের দূতদের কাছে আমরা নিবেদন করি, তোমরা যদি আনন্দের বাতাবরণ সৃষ্টি করো, তবে আমরা অট্টহাসিতে ফেটে পড়বো। তোমরা যদি ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করো তবে আমরা আতঙ্কে চিৎকার করে উঠবো। ক্রিয়াকর্মের দায়িত্ব যদি তোমাদের হয় তাহলে তোমাদের অস্তিত্বকে মান্যতা দেবার জন্য আমাদের প্রতিক্রিয়া হবে তার একমাত্র প্রমাণ। না হলে, তো সেটা বেসুরো শোনাবে।
সব কটা জানালা খুলে দাও না -
আজকে যারা আমাদের শৃঙ্খল পড়াতে চাইছে, একটু ভেবে দেখ, তারাই এক নৈরাজ্যের বাসিন্দা। সেই অশুভ শক্তির হাতে তারাই বন্দী। দৃষ্টি যেখানে রুদ্ধ হয়, আধার যেখানে মনের স্থায়ী বাসিন্দা হয়, তাদের কর্ণকুহরে কোন শব্দ প্রবেশ করলে সন্নিগ্ধ মনে আতঙ্কিত হওয়া ছাড়া উপায় থেকে না, বিচার শক্তি ক্রমশ অসহযোগিতার কারণে কবেই তার কাজ অসুম্পর্ণ করে অচিনপুরে চলে গেছে। তারই প্রতিফলন তাদের বাক্যবর্ষনে অহরহ ফুটে উঠেছে। এমতবস্থায় তাদের অর্জিত সম্পদের ডালি থেকে ভীতি ছাড়া আর কি আমাদের দিতে পারবে। আসলে তারা এতটাই রিক্ত এবং এতটাই শূন্য যে তাদের ভাণ্ডারে রাগ, বিদ্বেষ ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই। তাদের অমানিশার ঘোর কবে যে কাটবে, তার অপেক্ষায় আমরা আছি। আসলে যে নির্দ্দিষ্ট বিষয় নিয়ে তারা ঘাটাঘাটি করছে, তাকে প্রয়োগ করতে পারদর্শিতা লাগে আর পারদর্শিতা নির্ভর করে বিষয় সম্পর্কিত জ্ঞানের উপর। এই জ্ঞান আর অজ্ঞানের ব্যবধানে তাদের অন্তরটা বেনোজলে প্লাবিত হয়ে গেছে।
কোটি কোটি মানুষকে মূর্খ ভাবা একান্তই ভুল। অহংকারের দীর্ঘায়িত ছায়া চৈতন্যের আলোকবর্তিকাকে বুদ্ধির কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে না। আসলে আমাদের দুঃখ কষ্ট কম, কেননা আমরা আমাদের সীমাব্ধতাকে জানি, কিন্তু তারা সেটা জানে না, তাই আহার করতে গিয়ে মিলিয়ে দেখেনা, গ্রহণের পাত্রটা সমপরিণাম আহার নিতে সক্ষম কিনা ? অপরিপক্ক আহার থেকে মানব দেহে যে প্রতিক্রিয়া হয়, সেটা অনেকটা কর্পোরেশনের গাড়ি যদি দীর্ঘ দিন ডাস্টবিন থেকে বর্জ্য না নিলে যেমনটি হয় , ঠিক তেমনটি।
ক্রমশঃ
ব্লগার -রবীন মজুমদার
তারিখ -২০/০৪/২৫
ভালো লাগলে অন্যকে শেয়ার করুন।
rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে।

মন্তব্যসমূহ