(২৬৮) ভারতীয় সমাজে নারীর উত্তরণ ও অবমননের মানচিত্র - সপ্তম পর্ব

 (২৬৮) ভারতীয় সমাজে নারীর উত্তরণ ও অবমননের মানচিত্র - সপ্তম পর্ব 


দৃশ্য ১ :- টেলিভিশনে একটা ফুডের বিজ্ঞাপন দেখলাম, একটি পুরুষ এবং একটি নারী সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্যাক্সিকে ধরবে বলে দৌড়ে যাচ্ছে। বেশ খানিকটা পিছন থেকে দৌড় শুরু করে পুরুষকে হারিয়ে সেই নারী ট্যাক্সিতে চেপে বসলেন এবং পারদর্শিতার কারণ জানতে চেয়ে সেই পুরুষের প্রশ্নের উত্তরে,  মুচকী হেসে তিনি সেই স্পেসিফিক ফুডের কথা বললেন ।  কিন্তু এটাই আজকের দিনের বাস্তব চিত্র অবশ্যিই সেই ফুড ব্যতিরেকে।

দৃশ্য ২:- একজন স্কুল শিক্ষিকাকে যখন প্রশ্ন করা হলো, পুরুষরা নারীদের উপর ঈর্ষান্বিত কেন ?  সেই প্রশ্নের উত্তরে বহু উদাহরনের একটি হলো,   আজ যে কোন ইন্টারভিউতে পুরুষ ও মহিলা প্রার্থী থাকলে, দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মহিলা প্রার্থীরা সেই চাকুরীটা নিজের যোগ্যতায় হাসিল করে নিচ্ছেন। তাছাড়া, কর্মক্ষেত্রে এবং পরিবারে কাজ কর্মের ক্ষেত্রে এক অদ্ভুত মেলবন্ধন তারা অনায়াসে ঘটাতে পারেন।  

বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষায় বলতে গেলে, পরিবার হলো সব সংগঠনের মধ্যে সব থেকে কঠিনতম  সংগঠন। সুতরাং,  যাঁরা এই সংগঠনে কৃতকার্য হন, তাদের কাছে অন্যান্য  সংগঠেন পরিচালনা তুলনামূলকভাবে  ভীষণ সহজসাধ্য হয়। তাছাড়া, অন্যান্য এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিস তাদের করায়ত্তে কালও ছিল আজও আছে। 

তুলামূলকভাবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষ অপেক্ষা নারীদের পারদর্শিতা বিশেষভাবে  চিহ্নিত হয়ে যাচ্ছে। এটা পুরুষদের ঈর্ষার অন্যতম কারণ। 

তাইতো দেখা যায়, ভারতীয় সমাজে  নারী কখনো ছিলেন স্বয়ং শক্তির প্রতিমূর্তি, আবার কখনো নিপীড়নের শিকার। এই উত্থান-পতনের ইতিহাস কেবল সমাজের নয়, রাষ্ট্রনীতি, ধর্মীয় অনুশাসন এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কাঠামোরও প্রতিফলন। গবেষণালদ্ধ এই প্রবন্ধে আমরা খুঁজে দেখব কিভাবে বিভিন্ন যুগে ভারতীয় নারীর মর্যাদা গড়ে উঠেছে ও ভেঙে পড়েছে—ঐতিহাসিক দলিল, ধর্মীয় শাস্ত্র, আইন এবং সামাজিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে।

একটু পিছিয়ে গিয়ে, যদি বৈদিক যুগে নারীর মর্যাদার (খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ১৫০০–৫০০) চিত্রটা লক্ষ্য করি, নারীর শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার আলোকে - 

তবে যেটা দেখতে পাই সেই ঋগ্বেদ, উপনিষদে নারী ঋষিদের অস্তিত্বের জ্বলন্ত নির্দশন। যেমন গার্গী এবং মৈত্রেয়ী দুজনেই ব্রহ্মজ্ঞান অর্জন করতে আগ্রহী  ছিলেন। বৃহদারণ্যক উপনিষদে গার্গীর সঙ্গে ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যের তর্ক এর ঐতিহাসিক প্রমাণ। 

রক্ষনশীলতা যেখানে  বাধ্য করে নারীকে সেই পরিবারের মত অনুযায়ী বিবাহ করতে, সেই বাঁধ ভেঙে স্বয়ংবর প্রথা বা নিজ মর্জিতে পুরুষকে পছন্দ করার স্বাধীনতা সে যুগে যে ছিল তার প্রমান পাওয়া যায়। দৃষ্টান্ত স্বরূপ রামায়ণ ও মহাভারতে দ্রৌপদী, সত্যবতী, সাবিত্রী প্রভৃতি নারীর স্বয়ংবরের উল্লেখ আছে। 

 একাধারে  নারীর সামাজিক ভূমিকা ছিল সম্মানজনক এবং আধ্যাত্মিকভাবে সক্রিয়।

রেফারেন্স: 

আলেকার এ এস  দি পজিশন অফ ওমেন ইন হিন্দু সিভিলাইজেশন 

ঋগবেদ  দেবী সূক্ত  বৃহদারণ্যক উপনিষদ (৩.৬.১-৩)

প্রাচীন ভারত সমাজ ও সাহিত্য -সুকুমারী ভট্টাচার্যী 


ক্রমশঃ 

ব্লগার -রবীন মজুমদার 
তারিখ -০৩/০৫/২৫

ভালো লাগলে অন্যকে শেয়ার করুন। 


 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৬৯) রবি সৃষ্টির বৈচিত্রতা (প্রথম নিবেদন )

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৪২) নারীর একাল ও সেকাল