(২৭৩A) রবি সৃষ্টির বৈচিত্রতা (পঞ্চম নিবেদন)

  (২৭৩A) রবি সৃষ্টির  বৈচিত্রতা (পঞ্চম  নিবেদন)


এই পৃথিবীতে যুদ্ধের পাশবিকতা  ততক্ষন থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত সেই পশুটি  মানবিকতার অস্ত্রে নিহত না হয়। এই সংগ্রাম একটি সামগ্রিক সংগ্ৰাম এবং তার জন্য যেটা প্রয়োজন ছিল, আপামর জনগনের মানসিক প্রস্তুতি।  এই মানসিক প্রস্তুতি গঠনের কাজ ছিল কবি সাহিত্যিকদের। রবি কবি ভীষণ যত্ন সহকারে সেই কাজটি তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত করে গেছেন। এই মানবিকতার যুদ্ধের নিরন্তন সৈনিক ছিলেন কবি। যে সকল উপাদান মানবিকতার উৎকর্ষ বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হলো, বিশ্বজনীন প্রেমের বীজ মন্ত্র। রবীন্দ্র সাহিত্যে তার গভীর বর্ষণ লক্ষ্য করা যায়।  আজ সেই নিয়ে একটি কোলাজ। 

                                *                *                *

আজি  ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার - পরানসখা বন্ধু হে আমার॥"

কবি আপাদমস্তক একজন সাংসারিক প্রাণী। কেউ কি কোন দিন বলতে পেরেছে সংসার মানে এক নিরবিচ্ছিন্ন শান্তির নীড় ? বরং একটা সংগ্রামের আঁতুরঘর।  প্রতিনিয়ত একটা মৃদু মন্দ তালে একটা  অনাকাঙ্খিত বাতাস সেখানে বয়ে যায়, যা সহনীয়। কিন্তু  যখন সেই বাতাস ঝড়ের আকার ধারণ করে, তখন যেন অন্তরের  প্রেমের নীড়টি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। উদ্বেলিত কবির বর্ণনায় সেই মুহূর্তটা যেন জীবন্ত আকার ধারণ করেছে।  প্রিয়জনের প্রতীক্ষায় যেমন ঝঞ্ঝা বিক্ষুদ্ধ রাতে তার প্রেমিক বার বার উত্তেজনায় দরজার ফাঁক দিয়ে প্রাকৃতিক অবস্থাকে পর্যবেক্ষন করেন, ঠিক সেই রূপ।  

এখানে কবি  বোঝাতে চাইছেন, সেই চিরন্তন জীবনের অনিশ্চয়তার তত্ত্বকে, যে  ঢাকা থাকে অন্তর্দন্দ্বের গভীর অন্ধকারে আর প্রিয়জনের অভিসার যেন  সেই আলোকবর্তিকা হয়ে সবকিছুর উর্ধে উঠে জীবনে আশার সঞ্চার ঘটিয়ে থাকে।                                   *                *                *

"প্রভু, তোমা লাগি আঁখি জাগে; দেখা নাই পাই" 

অসীমের  প্রতি মানবের চিরন্তন লাভের অন্বেষণ কবির  অন্তরকেও  স্পর্শ করেছিল। এ এক নিরবিচ্ছিন্ন আধ্যাত্মিক আবেদন, সেখানে ঈশ্বরকে পাওয়ার ইচ্ছা  যতখানি তার চেয়ে তাঁকে চেয়ে যুগের পর যুগ ধরে প্রতীক্ষাটাই  যেন অনেক বেশি   প্রবল।  অপরিতৃপ্ত পার্থিব আকাঙ্খা জীবনের বাস্তব রূপ, তৃপ্ত বাসনা পুনরায় কামনায় লিপ্ত হয়ে যায়, তাকে না পাবার ব্যাথাটা  ভীষণ গভীর। তার থেকে পার্থিব বাসনার আরো উর্ধে গিয়ে অপার্থিব বাসনার সাথে একাত্ম হয়ে তাকে বারংবার স্মরণ করার মধ্যে  যে অশেষ তৃপ্তি আছে, সেখানে  অসম্পূর্ণতা আছে কিন্তু বেদনার অনুভূতি  নেই। এ যেন  মানবের সার্বজনীন বেদনা থেকে উত্তরণের মন্ত্র। 

                                *                *                *

ক্রমশঃ 

ব্লগার -রবীন মজুমদার 
তারিখ -১৮/০৫/২৫
ভালো লাগলে অন্যকে শেয়ার করুন। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৬৯) রবি সৃষ্টির বৈচিত্রতা (প্রথম নিবেদন )

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৪২) নারীর একাল ও সেকাল