২৯০ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন -দশম পর্ব

 ২৯০ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন -দশম  পর্ব  

ঋগ্বেদ ও রামায়ণ 

রামায়নের সাথে কালিদাসের মেঘদূতের সম্পর্ক স্থাপনের আগে একটু পিছিয়ে যেতে হবে। খুঁজতে হবে মানবের সেই চিরন্তন বৈশিষ্টকে যে কালের নির্দ্দিষ্ট ধারাকে বহন করে বর্তমানে পৌঁছেও  তার কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি। সেই আদি অকৃত্তিম প্রকৃতির প্রতি মানুষের আত্মীয়তার বন্ধন আজও মানব হৃদয়ে অমলিন।  ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের ১৪৬ সূক্ততে ঋষি তার আবেগকে কি গভীর অনুভূতির সাথে ব্যক্ত করেছেন -

গহন, গভীর, ঘন, সুনিস্তব্ধ অয়ি অরণ্যানী !
তোমার প্রত্যন্ত সীমা কতদূরে কিছুই না জানি। 
আপন বিস্তৃতিমাঝে আপনারে হারিয়েছ যেন 
খুঁজে আর নাহি পাও !  পান্থজনে শুধাও না কেন 
গ্রামের পথের বার্তা ? এ নির্জনে একাকিনী থাকি 
কখনও  হৃদয়ে তবে সশঙ্কিত ভয় জাগে নাকি 
নিতান্ত নিরালা বোধে ? শ্বাপদ গর্জন করে যবে 
মনে হয় বৃষগন ডাকিছে গম্ভীর হাম্বা রবে ;
 ০০০০০
"হে অরণ্য ! তুমি দেখতে দেখতে চোখের সামনে থেকে হারিয়ে যাও। তুমি যে কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত তা তো পরিমাপের বাইরে। এ যেন তোমার সীমাহীন রোমাঞ্চকর যাত্রা। তুমি কি পথ ভোলা এক পথিক ?  যদি সত্যিই হারিয়ে থাকো তোমার গ্রামের পথ,  তবে পথ মধ্যিই প্রশ্ন করো,  ' আমার  গ্রামটা কোথায় '?  আচ্ছা অরণ্য! সত্যি করে বলোতো  , তোমার একা একা থাকতে ভয় করে কিনা?" " হে অরণ্য ! আবার যেন শুনি, তোমার অন্দরের  প্রাণীকুলের কেউবা বৃষের ন্যায় শব্দের ধন্বী তুলে  কিছু প্রকাশ করতে চাইছে" ইত্যাদি ইত্যাদি। 

এইভাবেই মানুষ প্রকৃতিকে তার অন্তরের অনন্ত জিজ্ঞাসা এবং তার সাথে নিজের মতো করে উত্তর শুনে নিয়েছে। 

ঋগ্বেদের যুগে গাভী এবং বৃষ অর্থাৎ গোধনই ছিল শ্রেষ্ঠ সম্পদ, তাই ঋষির কাব্য লিখতে গিয়েও বাস্তবকে ভুলতে পারেন নি, তাই তিনি মানসপটে গভীর জঙ্গলে শুনতে পাচ্ছেন - "মনে হয় বৃষগন ডাকিছে গম্ভীর হাম্বা রবে" ;

আবার রামায়নে দেখি , যেমন, রাবন বিভীষনকে বলছেন -
বিদ্যতে গোষু সম্পণ্যং বিদ্যতে জ্ঞাতিতো  ভয়ম। 
বিধ্যতে স্ত্রীষু চাপল্যং বিদ্যতে ব্রাহ্মণে তপঃ // 
রামায়নে বাল্মীকি বৃষ এবং গাভীর উপমা যত্রতত্র ব্যবহার করেছেন। 

ঋগ বেদেরও বহু জায়গায় গাভীর উপমা দেখা যায়,  ' বাৎসগণ যেরূপ ধেনুর প্রতি  ধাবিত হয়, সেই রূপ স্যন্দমান জলরাশি সমুদ্রকে প্রাপ্ত হইয়াছিল '/ 

 রামায়নের দেখা যায়, মাতৃরূপী প্রকৃতির নিবিড় আলিঙ্গনে যখন রাম, লক্ষণ ও সীতা প্রতিপালিত হচ্ছিলো। কিন্তু ব্যতিক্রমী একটা দিনে রাবন এসে যখন সীতাকে হরণ করে নিঁয়ে যাচ্ছিল, তখন সীতা কোন বিশেষ দেবতার কাছে কৃপা প্রার্থনা  করেননি। তিনি করজোড়ে এই অরণ্যের প্রতি,  প্রতিটি বৃক্ষ-লতার  প্রতি, গোদাবরী নদী এবং বনের পশু পাখিদের প্রতি নিবেদন করেছিল , তাঁর অপহরণের সংবাদ যেন শ্রী রামের কাছে পৌঁছে দেয়। 

বিপৎকালে  এই প্রকৃতিই সীতার কাছে  একান্ত আপনজন  ছিল।  এইরকম প্রকৃতি নির্ভরতা কিংবা গভীর আত্মীয়তা ঋগ্বেদের যুগে দেখা গিয়েছিলো, তারই পুনরাবৃত্তি  রামায়নের দেখা যায়। 

চলবে ০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
ব্লগার -রবীন মজুমদার 

তারিখ -১৬/০৭/২৫
ভালো লাগলে পরিচিতদের কাছে  শেয়ার করুন। খারাপ লাগলে ইগনোর করুন। 
rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে। 


মন্তব্যসমূহ

নামহীন বলেছেন…
অরণ্যের বেদনা কান পাতলেই শোনা যায়

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৬৯) রবি সৃষ্টির বৈচিত্রতা (প্রথম নিবেদন )

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৪২) নারীর একাল ও সেকাল