২৯৫ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন - ১৫ তম পর্ব
২৯৫ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন - ১৫ তম পর্ব
রামায়ণ ও কালিদাসের মেঘদূত এবং পরবর্তী সময় (৫)
গত সংখ্যায় যেখানে শেষ হয়ে ছিল বৃহত্তর স্বার্থে শ্রী রামচন্দ্রের ক্ষুদ্রতর স্বার্থ বিসর্জনের মাধ্যমে এক অনন্য রাজনৈতিক দৃষ্টান্ত স্থাপনের মধ্যে দিয়ে। আসলে, শ্রীরামচন্দ্রের পথ অনুসরণকারী বলে যারা দাবী করেন, তাদের দাবির সত্যতা তখনিই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন তারা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বৃহত্তর মানুষের স্বার্থ রক্ষা করবেন। আমরা বাস্তবে ঠিক তার উল্টো চিত্রটা দেখতে পাই। স্বঘোষিত রাম অনুরাগীরা কার্যক্ষেত্রে কতিপয় মানুষের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য বৃহত্তর। অংশের স্বার্থকে ক্রমাগত জলাঞ্জলি দিয়ে যাচ্ছেন। ইতিহাস যেমন পথের দিশা দেখায়, কার্যের পিছনে পৌনঃপুনিক কারণের অনুসন্ধানও বর্তমানের গতিপ্রকৃতি এবং আগামীর সম্ভাবনাকে নির্দ্দেশ করে। প্রশ্ন ক্রমাগত থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত সঠিক উত্তর না পাওয়া যায়।
"যুদ্ধে ও প্রেমে অন্যায় বলে কিছু হয় না" - এই উক্তিটির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, রামায়নের কিস্কিন্ধা কান্ড। মহাকবি বাল্মীকির হাত ধরে যখন আমরা সুগ্রীবের সাথে পরিচিত হই, তখন তার মধ্যে এক প্রাচীন অনার্য চরিত্রের সন্ধান পাই। সেখানে একটি অসাংবিধানিক লেনদেন হয় সুগ্রীব ও শ্রীরামচন্দ্রের মধ্যে। যে রাজসিংহাসন ও প্রমাস্পদকে একান্ত করে পাবার ক্ষেত্রে বালী ছিল পথের কাঁটা আর সেই কাঁটাকে মুক্ত করবে রাম আর তার পরিবর্তে সুগ্রীব তার বানর সেনাকে দিয়ে সীতাকে উদ্ধার করার জন্য রামকে সহযোগিতা করবে।
রামের প্রচেষ্টায় রাজ্য ও রাজকন্যা উভয়েই উদ্ধার হলো, আর সুগ্রীব তারার সঙ্গ পেয়ে সেই যে রাজবাড়ীর খিল তুলে দিল, সেখান থেকে বেরিয়ে এসে যে তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করবে , সেটাই ভুলে গেলো। এদিকে রাম বারবার এসে দোরগোড়ায় এসে ফিরে যাচ্ছেন কিন্তু সুগ্রীবের পাত্তাই নেই, চারদিকে ছাড়িয়ে আছে একটা ভোগ বিলাসের আতিশয্য। দিনের পর দিন এই অসহনীয় অবস্থা দেখে লক্ষণ আর স্থির না থাকতে পেরে যুদ্ধংদেহী মেজাজে উপস্থিত হলো। সুগ্রীব তার কৃতকর্মের জন্য ভুল স্বীকার করে শর্ত পালনে উদ্দ্যোগ নিলো।
মহাকবি যে সময়ের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, সে সময়টা মানুষের জীবনের পরিপূরক ছিল অরণ্য, চাষ-আবাদ। তাই অনিবার্যভাবে রাজা ও রাজপরিবারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে কাহিনীতে জায়গা দখল করেছে এবং কবিও সেক্ষেত্রে কোন বিশেষ স্থান কাউকে করে দেন নি। চরিত্রগুলি পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।
যেখানে, প্রকৃতি কাহিনীর অন্যতম সঙ্গী, সেখানে পরিপাটি তো একটু কমই থাকবে। পাশাপাশি কালিদাসের যুগটা বেশ মার্জিত, আবেগ, উচ্ছাস, বেদনা ইত্যাদি পরিমিতির বাঁধনে বাধা। রামায়ণে শোক প্রকাশের চেহারাটা বেশ লাগামছাড়া বন্য সেখানে কালিদাসের শোক, বিরহ ভীষণ মার্জিত বেশ নগরঘেঁষা। অবশ্য সেই সময়টা ছিল সামন্তযুগ। তাই কালিদাসের সাহিত্যটা ছিল খানিকটা নাগরিক সাহিত্য। যেমনটি উদ্দ্যান অর্থাৎ মানুষের দ্বারা তৈরি কৃত্তিম অরণ্য আর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা বনের মধ্যে পার্থক্য, ঠিক তেমনটি কালিদাস আর বাল্মীকির সামাজিক পটভূমিটা তাই ছিল।
চলবে ০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
মন্তব্যসমূহ