২৯৮ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন - ১৮ তম পর্ব

 ২৯৮  ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন -  ১৮ তম   পর্ব  

রামায়ণ ও কালিদাসের মেঘদূত  এবং পরবর্তী সময়   (৮) 

 " একা কুম্ভ রক্ষা করে নকল বুঁদির গড় " কুবেরের বিশাল উদ্যান, চারিদিকে ফুল-ফলের সমারোহ কিন্তু ভীষণ কৃপণ কুবের একমাত্র যক্ষকে তার পাহারাদার করে রেখেছেন।  এটি যখন উদ্যান হিসাবে বর্ণিত হয়েছে, তাহলে মাঝে মাঝেই হাতির আগমন হয় কি ভাবে, নিশ্চয় প্রকৃতিসৃষ্ট অরণ্যের মায়া মানুষের তৈরি উদ্যান ত্যাগ করতে পারেন নি। ধরে নেওয়া যেতে পারে অরণ্যের সাথে এই উদ্যানের গভীর সংযোগ ছিল।  কবি কালিদাসের কাব্যের নায়ক, স্বভাবে শান্ত, প্রকৃতিতে  ইন্দ্রিয়বিলাসী, এই বিলাসিতাকে  হাতিয়ার করে কবি যৌনতাকে শিল্প পর্য্যায়ে নিয়ে গেছেন, তাই বহু সমালোচক "মেঘদূত" কাব্য সম্পর্কে বলেছেন, যৌনতাকে কাব্য থেকে সরিয়ে দিলে শুধু মাত্র একটা কঙ্কাল পরে থাকবে। 

যক্ষের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করে কেউ কেউ তাকে পিশাচ বলে অবিহিত করেছেন কিন্তু এখানে তিনি এক অবিসংবাদিত প্রেমিক।  একটা বাগানের রক্ষক থেকে প্রেমিক হিসাবে উন্নীত করা আবার তার প্রেমের  উচ্চতা নিরুপনের জন্য ভীষণ প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল প্রেমিকার সাথে এক বিচ্ছেদের পটভূমি রচনা করার। অগত্যা কালিদাস হাতের সামনে কুবেরকে পেয়ে, তাকেই খলনায়ক বানিয়ে দিলেন। কারণ হিসাবে কুবের মহাশয় দেখালেন যে, তার কর্তব্যে অবহেলার কারণে হাতি এসে তাঁর সাজানো বাগানের ফুল-ফল নষ্ট করে দিয়েছেন। 

সাহিত্যে অতিরঞ্জন সে যুগে এক বিশেষ মাত্রা পেতো। যক্ষ ছিলেন বিশেষ কিছু ক্ষমতার  অধিকারী ; যেমন, তিনি ইচ্ছা করলেই যত্রতত্র অনায়াসে হঠাৎ করে উড়ে  যেতে পারেন, নিজের আসল চেহারাকে গোপন করে ভিন্ন ভিন্ন রূপে আবির্ভূত  হতে পারেন। এইসব বিশেষ ক্ষমতা কুবেরবাবু হরণ করে নিলেন এবং তার মেয়াদ ছিল মাত্র একবছর।  

 ইতিহাসবিজড়িত রামগিরি পর্বত শাপগ্রস্ত যক্ষের বর্তমান ঠিকানা হলো।  যেখানে একদিন ধন্য হয়েছিল রাম-সীতার পদার্পনে।  

বস্তু আগে না কল্পনা আগে - এই নিয়ে বহু বিতর্ক থাকতে পারে, এখানে কবি কালিদাস মেঘকে দূত করে পাঠাবার কল্পনার রসদটি  কিন্তু হনুমানের দূতহিসেবে সীতার কাছে যাবার থেকে গর্ভধারণ করেছিল। এইখান থেকে বেজে উঠলো বিরহ রসের প্লাবন। 

অনেক না বলা কথাকে বলে দিতো উপমা আর উপমার ব্যবহার প্রাচীন রচনায় ভীষণ ভাবে লক্ষ্য করা যায়।  ভাবলে আশ্চর্য্য লাগে, পুরাণের আছে হাতিরা একদিন আকাশে উড়তে পারতো, তাদের পাখাও ছিল।  একদিন মহাপন্ডিত অন্ধমুনি দীর্ঘতপা'র  অভিশাপে তাদের পাখা বাদ পরে যায়। সেটাই ছিল মেঘের সাথে হাতির উপমা। 


 চলবে ০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

ব্লগার -রবীন মজুমদার 

তারিখ ২৯/ ০৭/২৫
ভালো লাগলে পরিচিতদের কাছে  শেয়ার করুন। খারাপ লাগলে ইগনোর করুন। 
rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৬৯) রবি সৃষ্টির বৈচিত্রতা (প্রথম নিবেদন )

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৪২) নারীর একাল ও সেকাল