৩০০ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন - ২০ তম পর্ব

৩০০  ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন - ২০ তম   পর্ব  

রামায়ণ ও কালিদাসের মেঘদূত  এবং পরবর্তী সময়   (১০) 

যে প্রেম সীমাব্ধতাকে অতিক্রম করে, সে প্রেম বিমূর্ত প্রেম, সে অনন্তের পানে ধেয়ে যায়, তাকে সীমারেখা দিয়ে বাধা যায় না। আরেকটি প্রেম হচ্ছে  দেহকেন্দ্রিক( যাকে অন্যভাবে যৌনতা বলা যায়, আসলে সভ্য জগতে কেউ তো বলতে পারেনা, "আমি  যৌন আকাঙ্খায় পীড়িত", বরং বলে প্রেমানন্দের পিয়াসী) যার জন্ম দেহকে ঘিরে, যে ভোগকে ইঙ্গিত করে, সে প্রেম তৃষ্ণাকে আলিঙ্গন করে, ক্ষনে ক্ষনে সেই আকাঙ্খার তৃপ্তি না হলে ভাবের জগতে অপূর্ণতা অনুভূত  হয় আর সেই অনুভব থেকে জন্ম নেয় বিরহ।  

দেশ-বিদেশের সাহিত্যে ব্যতিক্রমী প্রেমের বহু উদাহরণ আছে। যেমন, রবীন্দ্রনাথের কবিতার একটি লাইন এখানে ভীষণ প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়  -"পূর্ণিমায় দেহহীন চামেলীর লাবণ্য বিলাসে"- এক গভীর ভাবনা , যেখান থেকে স্পষ্ট উচ্চারিত হয় এক বিমূর্ত চিত্রের ধারণা যার সৌন্দর্য্য সময়কে অতিক্রম  করে অসীমের দিকে হাতছানি দেয়।  যুগযুগান্ত ধরে যে  চাঁদকে আমরা রোমান্টিকতার প্রতিরূপ হিসাবে কবিরা আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, সেখানে কবিগুরু তাকে অধ্যাত্মিকতার প্রতীক হিসাবে নতুন করে পরিচয় করালেন। চামেলী ফুলের সুগন্ধ ও সাদা রং সবসময় এক পবিত্রতা ও কোমলতাকে ইঙ্গিত করে, সেখানে কবি "দেহহীন" শব্দটিকে চামেলীর পূর্বে বসিয়ে  দিয়ে, তাঁকে একবারে বিমূর্ত ও আধ্যাত্মিক করে তুলেছেন।  

 সৃষ্টির শুরু থেকে প্রকৃতি ও মানবের মধ্যে যে গভীর পারস্পরিক ভালোবাসা ও নির্ভরতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, তারই মধ্যে অহরহ মানুষ খুঁজে চলেছে আধ্যাত্মিকতাকে। যে গভীর প্রেমে আপ্লুত হয়ে প্রকৃতি জীবকে  একদিন এই বিশ্বের সাথে  পরিচয় করিয়ে করিয়েছিলো।  তার পর  সেই জীবকে খাদ্য-বস্ত্র দিয়ে যত্ন করে বড়ো করে তুলেছিল।  একদিন সেই প্রয়োজন প্রকৃতির কাছে ফুরিয়ে গেলে, নির্দয়ভাবে তার অস্তিত্বকে কেড়ে নিয়ে শুধু প্রিয়জনদের কাছে স্মৃতি হিসাবে রেখে যায়। এইটি  প্রকৃতির চিরকালের অভ্যাস। আসলে, প্রেম থাকা আর প্রেমহীনতা এই দুইয়ের মস্ত বড় ফারাক।  প্রেম যেমন সৃষ্টির প্রতীক তেমনি  প্রেমহীনতা ধংসের প্রতীক।  

বিশ্ববিখ্যাত আইরিশ নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ'র কিছু কিছু নাটকে "দেহহীন প্রেমের" নিদর্শন দেখা যায়। যেমন "ম্যান এন্ড সুপারম্যান" নাটকের একটা দার্শনিক সংলাপে নাট্যকার প্রেমকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন শারীরিক আকর্ষণের উর্ধে, একটি আধ্যাত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংযোগ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে।  নাট্যকারের এরকম বহু নাটকে তিনি দেহহীন প্রেমের বহু জয়গান গেয়েছেন।  এটাই বোধহয় ঋগ্বেদের "অরণ্য প্রশস্তির" সুদূরপ্রসারী প্রভাব। 

  চলবে ০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

ব্লগার -রবীন মজুমদার 

তারিখ ৩১/ ০৭/২৫
ভালো লাগলে পরিচিতদের কাছে  শেয়ার করুন। খারাপ লাগলে ইগনোর করুন। 
rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৬৯) রবি সৃষ্টির বৈচিত্রতা (প্রথম নিবেদন )

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৪২) নারীর একাল ও সেকাল