২৮৬ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন - ষষ্ঠ পর্ব
২৮৬ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন - ষষ্ঠ পর্ব
মহাকবি কালিদাস যদি মেঘদূত খন্ড কাব্যটি না লিখতেন , তাহলে বিশ্বকবির বহু সৃষ্টিই হয়তো অসম্পূর্ন থেকে যেত। কাব্য রচনা করে কোন কবি হয়তো বলে যাননি যে, সেই কাব্যটি রচনার পশ্চাতে তাঁর কি ভাবনা কাজ করেছে। পরবর্তী সময়ে সেই কাব্যটি পাঠ করে পাঠকের মনে কি প্রতিক্রিয়া হয়েছে, তাই নিয়ে কোন বিতর্ক হয়েছে বলে জানা নেই।
রবীন্দ্রনাথের কাছে কালিদাসের মেঘদূত নিয়ে এসেছে এক চিরন্তন বিরহের প্রতিমূর্তি হিসাবে। যে প্রেম নর-নারীর পার্থিব সম্পর্কের চিরাচরিত গন্ডিকে পেরিয়ে আত্মার সাথে সংযোগ স্থাপন করে, যা সময়ের সীমা অতিক্রম করে সর্বকালের হয়ে ওঠে। আত্মাকে নিরন্তর খোঁজার অব্যাহতি নেই। সেই যে কবে এই অন্বেষণ শুরু হয়েছিল আজও সে তার পথচ্যুত হয়নি। সেখানে এই দক্ষ স্বরূপ মানবেরা চিরকাল সেই অখিল সৌন্দর্য্যের প্রতিমূর্তি সেই যক্ষিনী, যার নিবাস এতই দূরে যে, সেখানে সশরীরে যাবার উপায় নেই। সে হতে পারে প্রাণের একান্ত আত্মীয়, সেই আত্মাকে না পেয়ে যুগযুগান্ত ধরে বিরহে কাতর। বনে,জঙ্গলে , পাহাড়ে, পর্বতে এমনকি মনের অন্তস্থলে বার বার প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে এসে দিগন্তে বিস্তৃত হয়ে না পাবার যে হাহাকার সৃষ্টি করেছে, সেটাই বিরহের অনুভতি। অখন্ডর সাথে খণ্ডিত বস্তুর মিলনের আকাঙ্খা চিরকালই অসমাপ্ত। সেই না পাওয়াটাই মানব জীবনের অতলস্পর্শী বিরহ। সেটাই রবীন্দ্র দৃষ্টিতে বিশ্বজনীন বিরহতত্ত্ব ।
পঞ্চম অধ্যায়ের পর ০০০০০০০০০০০০০
কাব্যের প্রথম আলো
ভারতীয় কাব্য সাহিত্যে দেবদেবী থেকে শুরু করে প্রকৃতির বন্দনার প্রথম প্রদীপটি জ্বলিয়ে ছিল বৈদিক সাহিত্য। সেই জন্যিই, অনিবার্যভাবে বৈদিক সাহিত্যকে আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
শিল্পী-সাহিত্যিক- কবিরা সৃষ্টি করেন, কিন্তু তার মূল্যায়ন হতে বেশ কয়েক শতাব্দী পার হয়ে যায়। প্রাচীনতার নিরিখে বেদই আমাদের এক প্রাচীনতম সাহিত্য ।
কালিদাসের প্রকৃতি চর্চার উৎস খুঁজতে গিয়ে বাড়তি পাওনা হলো পরিশ্রুত ইতিহাসের সমুদ্রে অবগাহন। বুঝলাম, ভারতকে খুঁজতে গেলে বেদকে অস্বীকার করে এক পাও এগোতে পারবোনা। আসলে, ঐ লেখাগুলিতে কি এমন ছিল, তাকে কখন ধর্ম পুস্তক আবার কখন বা অমূল্য সাহিত্যের ভান্ডার ও ভারতীয় দর্শনের পথিকৃৎ হিসাবে সমগ্র বিশ্বজুড়ে আজও সমৃদ্ধশালী সাহিত্যের মর্যাদা অলংকৃত করেছে।
পাশ্চাত্যের স্থুল বস্তুবাদ প্রাকৃতিক ঝঞ্চার মতো এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে অন্তরায় যে সৃষ্টি করেনি, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবুও সেই মোহকে পিছনে ফেলে আপন সংস্কৃতির চর্চা বর্তমানে জনমানসে বৃদ্ধি পেয়েছে। তার কারণ বর্তমান সময়ে ভারতীয় সংস্কৃতিকে বিকৃতায়ান করার ধারাবাহিক প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সংখ্যায় কম হলেও এক জাগরণ অনুভূত হচ্ছে। এই সংঘর্ষে জয়ী হবার একমাত্র অস্ত্র বেদ, উপনিষদ ও বেদান্ত চর্চাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। প্রত্যেক ভারতীয়দের এটি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এবং একান্তই তাদের নিজস্ব সম্পদ বললেও অত্যুক্তি হয় না। তাই এই সংঘর্ষের পথে অগ্রগতি।
সাম্রাজ্যবাদ-জাতীয়তাবাদ সংস্কৃত ভাষা ও বেদ
একটি জাতি যখন সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের হাতে নিজের স্বাধীনতা হারায় তখন সেই জাতির অন্তরে জাতীয়তাবোধের উন্মেষ হয়। তখন সেই জাতি তাঁদের পুরাতন গৌরবকে পুনরুদ্ধার করতে সচেষ্ট হয়। ভারতীয়রা কোন দিন যুদ্ধপ্রিয় জাতি ছিল না। তাই তাদের দৃষ্টি বাইরের অপেক্ষা অন্তরের দিকে বেশী ছিল। তারই প্রকাশ বৈদিক সাহিত্য। প্রায় হারিয়ে যাওয়া বৈদিক যুগের গরিমাকে অবলম্বন করে বেদ চর্চার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
আবার কিভাবে সংস্কৃত চর্চা ফিরে এলো
যে পঞ্চতন্ত্রকে নিয়ে আমরা কৈশোর অতিবাহিত করেছি, সেই পঞ্চতন্ত্র একদিন সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে গিয়ে পৌঁছিল সঙ্গে বুদ্ধজীবনী, বৌদ্ধ কাহিনী, কথাসরিৎসাগরকে সঙ্গে নিয়ে। সাহেবদের বাজারে আলোড়ন উঠে গেলো। মুড়ি মুড়কির মতো যে যার ভাষায় অনুবাদ করতে শুরু করলো। উপনিষদের ফার্সী অনুবাদের সম্পাদনা শাহজাহান পুত্র দারা শুকো করেছিলেন। সেও বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদিত হয়ে ছাড়িয়ে পরে। আমরা আবার সংস্কৃতভাষাকে ফিরে পেলাম বিলেতের হাত ঘুরে। এই সংস্কৃত ভাষাই বেদের ভাষা।
চলবে ০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
ব্লগার -রবীন মজুমদার
তারিখ -০৭/০৭/২৫
ভালো লাগলে পরিচিতদের কাছে শেয়ার করুন। খারাপ লাগলে ইগনোর করুন।
rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে।
মন্তব্যসমূহ