৩৩৫ মোহিনীর অঙ্কুরোদগম
৩৩৫ মোহিনীর অঙ্কুরোদগম
বিকেলের পড়ার টেবিলে বসে মোহিনী আবার সেই একই অনুভূতিটা টের পাচ্ছে—পাতার শব্দ যেন বাতাসে ভেসে এসে ফিসফিস করছে, “তুমি কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছো ?”। গণিতের অঙ্কগুলো সামনে খোলা, কিন্তু মন জানালা পেরিয়ে পাশের বাড়ির আমগাছের ডাল ছুঁয়ে ওই যে আকাশটা যেখানে মাটিকে স্পর্শ করছে, সেখানে গিয়ে কিছু যেন খুঁজছে।
ক’দিন ধরেই এই অদ্ভুত অদ্ভুত ভাবনাগুলি ঘুরেফিরে আসছে। কোনো রঙিন পাখির ডাক, বা রোদ্দুরের যে সোনাঝরা ঝিলিক হয়, সেসব এতদিন তার দৃষ্টির বাইরে ছিল। তাদের উপস্থিতি যেন গোপন কোনও উত্তেজনা জাগায়। পড়ার ফাঁকেই সে টের পায়, নিজের ভিতর কিছু বদলাচ্ছে। আগে যেটুকু কৌতূহল ছিল পুতুলখেলা আর গল্পের বই ঘিরে, এখন তা ছুটে বেড়াচ্ছে নাম না জানা অনুভূতির আকর্ষনে, যার কোন ব্যাখ্যা নেই।
হঠাৎ পায়ের শব্দে ধরা পড়ে গেল সে। মা রান্নাঘর থেকে আসছেন। মুহূর্তেই মোহিনী বইয়ের পাতায় চোখ গুঁজে দিল, যেন দুনিয়ার সবচাইতে কঠিন অঙ্ক মেলাচ্ছে।
মা দরজায় দাঁড়িয়ে একবার তাকালেন। চোখে অদ্ভুত মিশ্রণ—স্নেহ, সতর্কতা, আর অজানা আশঙ্কা। কারণ মায়ের নজর এড়িয়ে যায়নি পাশের বাড়ির ছেলেটি, সন্তু। বয়সে দু’এক বছরের বড়ো। প্রায়ই ছাদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে দৃষ্টি ছুঁড়ে দেয় এপারে।
প্রথম দিকে মা ভেবেছিলেন—কিশোর বয়সের খেলা, কিছু নেই। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যে ছোট ছোট পরিবর্তন ধরা পড়ল। বাজার থেকে ফেরার পথে মোহিনীর হাতে হঠাৎ একটি ছোট্ট কাগজের চিরকুট এল—সন্তুর লেখা দু’লাইনের কবিতা। এক বিকেলে দেখা গেল, বারান্দার গাছের টবের পাশে গোপনে রেখে গেছে হলুদ কদমফুল।
মা সব বুঝতে পারছিলেন। কিন্তু মেয়ের চোখের উজ্জ্বল আলো দেখে সহজে কিছু বলতে পারলেন না। মোহিনীর হাসি যেন নতুন রঙে রাঙানো। মায়ের মন বলল —মেয়ে বড় হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এই বড় হওয়ায় মায়ের জায়গা যেন একটু সরে যাচ্ছে।
তবু একদিন মাকে বলতেই হলো। স্নিগ্ধ গলায় মা বললেন,“দেখ মোহু, বয়সটা নরম। বন্ধুত্ব সুন্দর, কিন্তু তাড়াহুড়ো করলে কষ্ট হয়। মানুষের ভালোবাসা বড় হয় ধীরে ধীরে, অনেকটা গাছের মতো।”
যেন বুকের মধ্যে বাজতে লাগল।
২০/০৯/২০২৫
মন্তব্যসমূহ