৩৩৬ কেন আজ স্বামীজিকে নিয়ে চর্চা করার প্রয়োজনীয়তা আছে - (৬)
যদি একমত হন, তবে বেশী করে সবার কাছে শেয়ার করুন
স্বামীজীর পত্রাবলীর থেকে উদ্ধৃত -
২৪শে এপ্রিল , ১৮৯৭, দার্জিলিং
শ্রদ্ধাহীনতা
নিজের প্রতি শ্রদ্ধা হারবোনা বলে, কলকাতার গরমে বসে ভাবছি , এই "শ্রদ্ধাহীনতা" নামের সাথে এ এক অদ্ভুত মহামারীতে ধীরে ধীরে দেশটা আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে উত্তরণের উপায় খোঁজা। এই পর্বে আজকের স্বামীজী পরিক্রমার অন্তে চেষ্টা করলাম একটু আড্ডার ঢঙে এই মহান মানুষটির জীবনবোধ থেকে কিছু অংশকে তুলে ধরে সমৃদ্ধ হবার।
আইরিশ প্যাটের ঘুম ভাঙা -
প্রথমেই মঞ্চে প্যাট - একজন আইরিশ উপনিবেশের অবলা যুবক। তাকে দেখলে মনে হবে যেন কারোর গরুর গাড়ি থেকে সদ্য নেমে এসেছে। চেহারার মধ্যে দারিদ্রের স্পষ্ট ছাপ, হাতে একটা বাঁশের লাঠি আর তার আগায় একটা কাপড়ের পুটলি। লন্ডনের অলিগলিতে দিগ্বিদিক উদেশ্যহীনভাবে ঘুরতে ঘুরতে তার অন্তরের মধ্যে একটা শব্দ বেজে উঠছে -" তুই জন্মেছিস গোলাম হয়ে ,তুই মরবিও গোলাম হয়ে। " কাটা রেকর্ডের মতো প্রতিদিন সেই একই গান হৃদয়ে বেজে উঠছে, ফলে আত্মাও তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ছে।
একদিন সেই যুবক আমেরিকায় এস পৌঁছাল। সেখানে এসে সে যেন চারপাশ থেকে শুনতে পেলো, করা যেন তাকে বলছে - "প্যাট, তুইও মানুষ !" চারিদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে দেখ তোর পাশে সবাই মানুষ, আর যা কিছু সৃষ্টি তোর চারপাশে দেখছিস, সেই সৃষ্টির পিছনে আছে মানুষেরই অবদান।
ভাই ! তুই একটু সাহসে তোর বুকটাকে আস্টেপিস্টে বাঁধ। তখন তার অন্তরে তখন বেজে উঠলো হাজার শঙ্খধ্বনি, সেখান থেকে কেউ বলছে - "উত্তিষ্ঠত জাগ্রত।" আসলে একটা জঘন্য বাতাবরণ প্যাটের কাছ থেকে তার মানবিক সত্ত্বা প্রায় কেড়ে নিয়েছিল।
আজকের দিনের ছাত্ররা যে বিদ্যা চর্চা করে, সেটি আসলে প্রকৃত শিক্ষা নয় আর তারই অবদান হচ্ছে শ্রদ্ধাহীনতা।
জীবাত্মার অনন্ত শক্তি
এই ভারতবর্ষের হৃদয়ে একইসাথে স্থান করে নিয়েছে বহু সম্প্রদায়, সেখানে রয়েছে তাদের নিজ নিজ দর্শন। কিন্তু সববাধা ব্যবধানকে অতিক্রম করে সবাই সমস্বরে বলছে " এই জীবাত্মাতে অনন্ত শক্তি আছে, পিঁপড়ে থেকে সিদ্ধপুরুষ পর্যন্ত এই অন্তঃসলিলা আত্মা সকলের অন্তরে প্রবাহিত হচ্ছে। একটা প্রভেদ অবশ্য আছে, সেটা তাদের প্রকাশ ভঙ্গিমায়। সেই শক্তির বিকাশ হয় উপযুক্ত পরিবেশে। "
কিন্তু ওই শক্তিকে জাগাবে কে? বিবেকানন্দ বললেন— ঘরে বসে আড্ডা নয়, দরজায় দরজায় যেতে হবে। ধর্মশিক্ষা, কৃষি, বাণিজ্য, শিল্প— সব নিয়ে মানুষের জীবনে আলো জ্বালাতে হবে। শুধু বই নয়, হিসাবরক্ষক থেকে বিপণন— সব শেখাতে হবে। মেলায় মেলায়, সভা-সমিতিতে প্রচার দরকার।
নারীশক্তি
ভারতের অগ্রগতির দায় কেবল পুরুষের কাঁধে নয়। নারীকে বাদ দিলে চলবে? একেবারেই না। যে জাতি নিজের কন্যাকে শক্তি বলে মানে, তাকে শিক্ষার মঞ্চে বসতে দিতে হবে। মাসিক-বাৎসরিক টার্গেট, তথ্যভিত্তিক পরিকল্পনা— এ সবের খুঁটিনাটি নিয়ে যে যত খোঁচা দিক, বাস্তবতা এড়ানো যায় না।
খ্যাদ্যাভাসের গেরো
এবার খাওয়া-দাওয়ার গল্প। আমাদের দেশের বায়বীয় ধর্মীয় তর্কে কেউ বলবে “মাংস খাওয়া পাপ”, কেউ বলবে “এটাই শক্তির উৎস।” স্বামীজি ছিলেন আশ্চর্য প্রাগমাটিক। তাঁর যুক্তি— “শরীরের উপযোগী খাদ্য যতদিন বিজ্ঞান খুঁজে না পাবে, ততদিন রজোগুণের কাজ করতে হলে মাংসভোজন ছাড়া উপায় নেই।”
অশোক সম্রাটের অহিংসা নিয়ে তিনি যে খোঁচা দিয়েছেন, — দু-চারটা ছাগল বাঁচানো ভালো, কিন্তু জাতি যদি শতাব্দীর পর শতাব্দী দাসত্বে কাঁদে, তার দায় কে নেবে?
তিনি বলেছিলেন, যারা সমাজের উচ্চ মঞ্চে বসে কিছু করেন না, তাঁদের নিরামিষ হোক, ক্ষতি নেই। কিন্তু কর্মশীল মানুষকে বলপূর্বক নিরামিষ বানানো জাতির প্রাণশক্তি নিস্তেজ করেছে। জাপানের পুনরুত্থান— শক্তির খাদ্যেই তার উত্তর।
শ্রদ্ধাহীনতা কাটাতে হলে প্রথমে নিজের অন্তরের শক্তিতে বিশ্বাস আনতে হবে। সেই শক্তি জাগাতে হবে শিক্ষা, কাজ, এবং পুষ্ট শরীরের সমন্বয়ে। জাগরণ কোনও বক্তৃতা নয়, একটা লম্বা যাত্রা।
ক্রমশঃ
ব্লগার- রবীন মজুমদার
তারিখ -২২-০৯-২৫
ভালো লাগলে শেয়ার করুণ -
rabinujaan.blogspot.com থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে।
মন্তব্যসমূহ