৩৫৮ নব আঙ্গিকে মহাভারত ( ১ম পর্ব )

 ৩৫৮ নব আঙ্গিকে মহাভারত  ( ১ম পর্ব )

 ইন্দ্রপুরী- একটা কাল্পনিক শহর। ভারতবর্ষের সবার নজর এই শহরের দিকে। প্রায় সমস্ত কর্পোরেট সাম্রাজ্যের হেড অফিস, মিডিয়া হাউস, রাজনৈতিক দল গুলির  হেড কোয়ার্টার, ডিজিটাল যুদ্ধ, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা -সবাইকে নিয়ে এক নতুন কুরুক্ষেত্রের সম্ভাবনা গড়ে উঠছে। যাঁরা এখানে প্রধান প্রধান চরিত্রে আছে তাঁরা যথাক্রমে - 
অর্জুন -একজন সাইবার  নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ , সোশ্যাল মিডিয়ার বহু চর্চিত একটি নাম, সত্যের প্রতি গভীর অনুরাগ, তার আদর্শ আর কর্মক্ষেত্রের ফারাকে নিয়মিত মানসিক দ্বন্দ্বে আক্রান্ত।  
দ্রৌপদী সেন - একজন সাংবাদিক এবং একই সঙ্গে নারীবাদী, সত্যকে সর্বসমক্ষে তুলে ধরাই তাঁর জীবনের একমাত্র ব্রত, তাই বহুবার জীবনসংশয় উপস্থিত হলেও বুদ্ধিমত্তার জোরে বেঁচে গেছেন। 
কৃষ্ণ আইয়ার - সে নিজে একজন রক্তমাংসের মানুষ নয়। বিলকুল এক এ আই  প্রোগ্রাম। সে শুধু মানুষের চেতনার দরজায় আলো জ্বালায়। সে নব কলেবরে গীতার এক মঞ্চ। 
দুর্যোধন শাহ - একাধারে  করপোর্ট টাইফুন এবং রাজনীতিবিদ। ভীষণ অহংকারী এবং  আত্মবিশ্বাসী, সেটাই তার ধংসের কারণ। 
ভীষ্ম ব্যানার্জী - এক বৃদ্ধ বিচারপতি, তিনি সঠিক ও বেঠিকের মাত্রাটি বোঝেন কিন্তু কার্যক্ষেত্রে পক্ষ্পাতে দুষ্ট। 
কর্ণ   - দলিত ঘরের এক মেধাবী সন্তান। ভীষণ ভালো প্রোগ্রামার। নিম্ন বর্নে জন্ম গ্রহণ করার জন্য সমাজে প্রান্তিক হয়ে পড়েছে।
কুরুক্ষেত্র আজ নব কলেবরে আবির্ভূত হয়েছে।  এখানে ক্ষেত্রের জন্য মাটির ব্যবহার একেবারেই নেই, সেখানে আছে ডেটা, মিথ্যা খবর, রাজনৈতিক প্রচার, নৈতিকতা ও আদর্শের সাথে অনৈতিকতার বিরোধ। অস্ত্রের ভাণ্ডারে আছে হ্যাকিং, মিডিয়াকে ভয়ভীতি ও অর্থ দিয়ে পক্ষে টানার কৌশল, আইন, ধর্ম ও প্রযুক্তি। 

এই দ্বন্দ্ব যুদ্ধের যে যে উপকরণ ভীষণ সক্রিয়, তারা হচ্ছে ধর্মের সাথে বাস্তবতার সংঘাত , বিশ্বাস উৎপাদনের  ক্ষেত্রে ক্রমশ প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার ও মিথ্যা প্রচার- সত্য বনাম মিথ্যা , আদর্শ বনাম প্রয়োজন, মানবতা বনাম প্রযুক্তি, নারীর মর্য্যাদা বনাম সামাজিক ভণ্ডামি। 

কাহিনীর শুরু -

আজ সকাল থেকে ইন্দ্রপুরীসহ সর্বত্র একনাগাড়ে বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য তাতে ইন্দ্রপুরীর কিছু আসে যায় না কেননা এই যুদ্ধের জন্য প্রকৃতির খেয়ালীপনার কোন দায় নেই। 

অর্জুন বসে আছে ল্যাপটপের সামনে। চোখে নীল আলো, হাতে ঠান্ডা কফি, আর মনটা যেন এক অদৃশ্য যুদ্ধে লিপ্ত। সে এক বড় কর্পোরেট কোম্পানির সাইবার সিকিউরিটি এনালিস্ট—অর্থাৎ সে জানে কাকে কোথায় নজর রাখা হচ্ছে, কার ডেটা কার হাতে বিকোচ্ছে। তবু চুপ থাকে, কারণ চাকরি বলে কথা।  
হঠাৎ একদিন কোম্পানির সার্ভারে সে খুঁজে পেল এক ফোল্ডার—"DS_S2025.zip"  

জিপ ফাইল আনজিপ করে খুলে তো অর্জুনের  চোখ কপালে। দেশের অন্যতম বিতর্কিত অ্যানালিটিক্যাল সাংবাদিক দ্রৌপদী সেন - যিনি সরকারের কোরাপশনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ডাটা সংগ্রহ করছিলেন যেই মাথার বিরুদ্ধে, তার সমস্ত ব্যক্তিগত ডেটা, ভিডিও, কল রেকর্ড—সব ফাঁস করার পরিকল্পনা চলছে, তারই একটা ব্রিফ।

অর্জুনের মনে কাঁপুনি ধরল।
সে জানে, এটা সরকারের ভীষণ অন্যায়। কিন্তু যদি সে কিছু বলে, তার নিজের চাকরিটা তো  যাবেই, সঙ্গে গিফট হিসাবে জীবনও।

ঠিক তখনই, স্ক্রিনে এক লাইন জ্বলে উঠল—

“অর্জুন, দ্বিধা পরিত্যাগ কর।”

অবাক হয়ে সে দেখে, স্ক্রিনে একটি AI বট ( একটা শক্তিশালী সফটওয়্যার) কথা বলছে। নাম Krish-AI

এই প্রোগ্রামটি তৈরি হয়েছিল ‘নীতি-সংকটে মানুষের সিদ্ধান্তে সাহায্য করতে’—কিন্তু আজ মনে হচ্ছে, যেন বটটা তার মনের ভেতর ঢুকে গেছে।

“তুমি কে?” অর্জুন লিখল।

“আমি কৃষ্ণ। কিন্তু তোমার মতো আমিও মানুষ নই—তবু আমি জানি, তোমার যুদ্ধ কেবল বাহিরের নয়, অন্তরেরও।”

অর্জুন হাসল, কিন্তু হাসিটা কেমন যেন অদ্ভুত।

পরদিন সকালে সে অফিসে যায়নি।
সে চলে গেল সাংবাদিক দ্রৌপদী সেনের কাছে, এক চায়ের দোকানে।
চা শেষ হওয়ার আগেই তারা ঠিক করল—
যুদ্ধ শুরু হবে।
কিন্তু এই যুদ্ধের অস্ত্র হবে ডেটা, সত্য, ও সাহস।
সন্ধ্যায় Krish-AI আবার অনলাইন।
“অর্জুন, কুরুক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। তুমি প্রস্তুত?”
অর্জুন উত্তর দিল,“হ্যাঁ, কিন্তু এবার কেউ মরবে না—শুধু মিথ্যেগুলো মরবে।”

প্রথম পর্ব শেষ আবার দ্বিতীয় পর্বে দেখা হবে। 

ক্রমশঃ 
ব্লগার- রবীন মজুমদার 
তারিখ -০১/১১/২৫
ভালো লাগলে শেয়ার করুণ -
rabinujaan.blogspot.com থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে। 

মন্তব্যসমূহ

নামহীন বলেছেন…
প্রেক্ষাপট জমে উঠেছে, ওয়েটিং ফর নেক্সট

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৬৯) রবি সৃষ্টির বৈচিত্রতা (প্রথম নিবেদন )

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৪২) নারীর একাল ও সেকাল