বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

(২৫৮) ভারতীয় সমাজে নারীর উত্তরণ ও অবমননের মানচিত্র -৩য় পর্ব

  (২৫৮)  ভারতীয় সমাজে নারীর উত্তরণ ও অবমননের মানচিত্র -৩য়  পর্ব 

অঙ্কনে রবীন 


দ্বিতীয়  সংখ্যার পর  ..................................................

 বাস্তবতা 

 কি এমন হলো, সেই  ঘন নীল অম্বর তলে  মাদঙ্গের  উন্মত্ত ধ্বনির তালে তালে হেসে কুদে বেড়ানো সেই লাস্যময়ীর দল কোথায়  যেন হারিয়ে গেল, কিসের ইঙ্গিতে ।  সেই বাস্তবতাকে  খুঁজতে হবে সেযুগের সাহিত্যের গভীরে। সভ্যতাকে খালি চোখে দেখা যায় কিন্তু সংস্কারকে অন্তরে অন্তরে  উপলদ্ধি করতে হয়। 

শুরুর পূর্ণতা শেষেই হয়  

ধনধান্যে পুষ্পে ভরা এই উপমহাদেশকে উপভোগ করার বাসনা সীমানার ওপারের  কিছু শক্তির দীর্ঘ দিন ধরে ছিল, তারা অপেক্ষা করছিলো উপযুক্ত সুযোগের। ক্রমশ দুর্বল হয়ে বৈদিক সমাজ ধীরে ধীরে যখন অন্তিম লগ্নে এসে উপস্থিত হলো। সেই সুযোগে একাধিক বিদেশী আক্রমণকারী  আর্য্যবর্তের উপর আক্রমণ  হানতে শুরু করলো।  

সমাজের বিবর্তনের প্রতিফলনে নারীদের স্বাধীনতার পরিধানটা ধীরে ধীরে খসে পড়লো। ধারণার অতীত হয়ে গেল যে, নারীরা একদিন  পুরুষের সাথে সম মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত ছিল। পুরুষের সাথে  হেটে চলে বেড়ানো নারী পরিবর্তনের  ঝাপটায় পণ্যে পরিণত হয়ে গেল। সেখানে অর্থনীতি ও সমাজনীতির মধ্যে কোনটা আসল কারণ, তাকে খুঁজতে হবে। একজন যদি সূর্য হয়, তাহলে অন্য জন হবে পৃথিবী। তবে সূর্য্য হবার দায়িত্বটা অর্থনীতিকেই বহন করতে হবে। 

 বিদেশী আক্রমণকারীরা প্রায়শই সফ্ট টার্গেট করে নারীদের আর সেই তাজা নারীদের পণ্য হিসাবে  ফিরে যাবার সময় অন্যান্য ছিনিয়ে যাওয়া সম্পদের সাথে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। শুধু রেখে যায়, একদল বর্ণশঙ্করদের। দুর্ব্বল সমাজের রক্ষকরা আক্রমণকারীদের প্রতিরোধ করতে না পেরে আত্মরক্ষার্থে তাদের পার্থিব সম্পত্তির সাথে নবযুক্ত সম্পদের মধ্যে নারী এবং শূদ্র নামক জীবকে , গরু,ভেড়া, ছাগলের সাথে এক পঙ্ক্তিতে  বসিয়ে দিয়ে অন্দরমহলে পাঠিয়ে দেয়। সেই যে নারী একবার ঘরের অন্দরে প্রবেশ করলো, তারপর তাদের যাত্রাপথ সীমায়িত  হলো রন্ধনঘর থেকে আঁতুরঘর পর্যন্ত। নারীর স্বাধীনতাটা ঘরের বাইরে সেই মাঠের মধ্যে গড়াগড়ি করে বৃথাই আর্তনাদ করতে  লাগলো। এটি নারী স্বাধীনতা হরণের একটি দৃষ্টান্ত।

এক যে ছিল 

সমাজের দর্পন হলো সাহিত্য। প্রাচীন সাহিত্যের গৌরব একমাত্র ঋগ্বেদই অর্জন করেছে। সাহিত্য আর বিবৃতির  মধ্যে পাথর্ক্য  আছে। সাহিত্য রচনার মুলে থাকে নারী-পুরুষের উপাখ্যান । সেই উপাদানদের প্রতি প্রত্যক্ষভাবে কিছু বলতে না পেরে, কাব্যের  ছত্রে লিখিত বর্ণনা থেকে একটা সুনির্দিষ্ট সামাজিক চিত্র ফুটিয়ে তোলে ।  ঋগ্বেদের প্রথম মন্ডল,সুক্ত ৪, স্ত্রোত্র ৪৬  এর বর্ণনার আতিশায্যে কখনো সূর্যের স্ত্রী, আবার কন্যা রূপে আবার মাতা রূপে দেবী ঊষাকে উপস্থাপন করেছে।  আবার অগ্নিকে দেখা যায়  স্ত্রী সঙ্গ লাভ করে অনাবিল আনন্দে বিভোর হয়ে থাকতে। এখানেই চোখে পড়ে নরনারীর ঐশ্বরিক প্রেমের নিদর্শন, যে  প্রেম  শুধু সম্মুখপানে ধেয়ে যায়, পশ্চাতপানে  দৃষ্টিপাত না করে। সেদিন নারীরা পুরুষের হৃদয়াসনে এক সন্মানীয় স্ত্রী হিসাবে অলংকৃত করতো। আবার চতুর্থ মণ্ডল,সুক্ত ৫৮, স্ত্রোত্র ৪ এ দেখি " পতিগৃহে কন্যা পদার্পনের প্রারম্ভিক বেশ চর্চা যেন ঘৃতধারার আচরণের  মতো যেন ক্ষনে ক্ষনে সোমের দিকে আকর্ষিত হচ্ছে। " একটি স্ত্রোত্রতে  দেখা যায়, বিবাহের রাতে স্বামীর অন্তরঙ্গ গভীর আবেদনে অধোবদন লাজুক স্ত্রীর অবগুণ্ঠনকে উন্মোচনের মাদকতা। স্ত্রী যেমন স্বামীর অলঙ্কার আবার স্বামীও স্ত্রীর অলঙ্কার। সেই অলংকার পছন্দের স্বাধীনতা সাময়িকভাবে স্ত্রীরা পেয়ে আসছিল। 

নারী-পুরুষের প্রেম বিনিময়ে সমাজের খুব একটা বিধি নিষেধ ছিল বলে মনে হয় না। অবৈধ তখনই হয় যখন আগেভাগে বৈধতার পাঠ পড়ানো হয়। যা সমাজে যখন উহ্য ছিল, তখন  বর্তমানের অভিধানে অতীতকে খোঁজাটা বৃথা। অবৈধ যে বৈধ ছিল সেটি ঋগ্বেদের  নবম মন্ডলের স্ত্রোত্রগুলির দিকে দিকপাত  করলেই  বোঝা যায়। 

ক্রমশঃ 

ব্লগার -রবীন মজুমদার 
তারিখ -২৭/০৩/২৫
rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে। 


কোন মন্তব্য নেই:

ujaan

(২৬০) ভারতীয় সমাজে নারীর উত্তরণ ও অবমননের মানচিত্র - পঞ্চম পর্ব

  (২৬০)  ভারতীয় সমাজে নারীর উত্তরণ ও অবমননের মানচিত্র - পঞ্চম পর্ব  চতুর্থ পর্বের পর ০০০০০০০০০০০০০০০০০০০   কৌতূহল  পরম  বিষম  বস্তু। একবার য...